শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ

 কলেরা হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার তিন গুণ রোগী  আইসিডিডিআরবিতে দুই মিনিটে এক রোগী

নূর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

 বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণের পরামর্শ চিকিৎসকদের


বৈশাখের প্রথমার্ধে গরমের তীব্রতায় নাকাল দেশবাসী। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু দাবদাহ। এ অবস্থা চলতে পারে আগামী শনিবার পর্যন্ত। কয়েকদিনের পছন্ড গরম ও দূষিত পানির কারণে রাজধানীতে হঠাৎ দেখা দিয়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মহাখালীতে অবস্থিত আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) ঘণ্টায় ৩৬ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। প্রতি দুই মিনিটে একজন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া দুইটায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ধরা পড়ে খুলনায়। একই সময়ে ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিরুপ আবহাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুদ্দীন আহমেদ জানান, আজ শুক্রবার তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫০৬ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শুধুমাত্র রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আইসিডিডিআর›বিতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ৮৬০ জন। গত সাত দিনে প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালটিতে আট শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিদিন শত শত রোগীর আগমণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য হাসপাতালেও ভিড় বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, গত এক মাসে দেশে ৩৭ হাজার ৯২৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে আইসিডিডিআর’বিতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৬৪৯ জন।
আইসিডিডিআর’বি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত ২৩ এপ্রিল ডায়রিয়ায় আক্রন্ত হয়ে চিকিৎসা কেন্দটিতে ভর্তি হয়েছে ৮৬০ জন রোগী। এর মধ্যে বয়স্ক এবং শিশু রয়েছে। এর আগের দিন ২২ এপ্রিল ভর্তি হন ৮৮৯ জন, ২১ এপ্রিল এ সংখ্যা ছিলো ৭৬৮ জন। কর্তৃপক্ষ বলছেন এসব রোগীর বেশির ভাগই আসছেন মিরপুর, টঙ্গী ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। ডায়রিয়ার সুচিকিৎসায় পরিচিত কলেরা হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে আটশ থেকে নয়শর বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ রোগী ভর্তি হলেও এখন স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন,ওয়াসার সুয়ারেজের কাজের কারণে পাইপ দিয়ে অপরিষ্কার পানি ঢোকে। ফলে দূষিত পানি খেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গরমের তীব্রতা বাড়ায় সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
আইসিডিডিআর,বির চিফ ফিজিশিয়ান (প্রধান চিকিৎসক) ডা. প্রদীপ কুমার বর্মন বলেন, রাজধানীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আগে প্রতিদিন গড়ে আড়াইে থকে তিনশ রোগী ভর্তি হলেও বর্তমানে নয়শর বেশি ভর্তি হচ্ছেন। তিনি জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সী নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ আইসিডিডিআর,বিতে ভর্তি হচ্ছেন। রোগীদের চিকিৎসায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অতিরিক্ত তাবু স্থাপন করা হয়েছে। ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধিও কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ডায়রিয়া পানিবাহিত রোগ। পানি ও খাবার গ্রহণের মাধ্যমে ডায়রিয়া ছড়ায়। গত কয়েকদিন অতিরিক্ত গরমের কারণে পানির চাহিদা বাড়ছে। অনেকেই পিপাসা মেটাতে রাস্তাঘাটে বরফ মেশানা আঁখ ও লেবুর রসের বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করেন। এগুলো থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া গরমে খাবার দ্রæত নষ্ট হয়। অনেক সময় বেখেয়ালে পচা খাবার খাওয়ায় ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার গ্রহণ জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা বেগম বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসার সুয়ারেজের কাজের কারণে পাইপ দিয়ে দূষিত পানি প্রবেশ করায় ওইসব এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস পর্যন্ত পানিবাহিত এ রোগের রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর সংখ্যাটা কমে আসে।
এদিকে আজকে দাবদাহের তীব্রতা আরও কিছুটা বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল বেলা সোয়া দুইটায় রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ি মাদারীপুর জেলায় গ— ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় অন্যান্য বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৭ দশমিক ২, চট্টগ্রামের রাঙামাটি, কুমিল্লা ও ফেনীতে ৩৮ দশমিক ৪, সিলেটে ৩৮ দশমিক ৩, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ৫, রংপুর বিভাগের মধ্যে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৩৬ দশমিক ৭ এবং বরিশালে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। গতকাল আট বিভাগের মধ্যে খুলনা বিভাগের তাপমাত্রা ছিলো সবচেয়ে বেশি। এ বিভাগের সাতক্ষীরায় ৩৯, যশোরে ৩৯ দশমিক ৩, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৮ এবং কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন