হঠাৎ করে ভ্যাপসা গরম বাড়ায় রাজশাহীতে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। রাজশাহীর আশেপাশের জেলাতেও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। গত একদিনে (২৮ মার্চ) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ৪১ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালে গত তিনদিনে দুই ওয়ার্ডে ডায়রিয়া-আক্রান্ত ১৪০ শিশু ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরমের শুরুতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ে, তবে এবছর তুলনামূলক বেশি। হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
গতকাল সোমবার রামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ১০ ও ২৮- এ গিয়ে দেখা গেছে রোগীর ভিড়। ওয়ার্ড দু’টির ভেতরে রোগীর জায়গায় না হওয়ায় করিডোরে (বারান্দায়) থাকতে দেখা গেছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। দুপুরে হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, এদিন ওই ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ শিশু ডায়ারিয়া আক্রান্ত অবস্থায় ভর্তি হয়েছে। তার আগের দিন রবিবার ৩৬ জন ও শনিবার ভর্তি করা হয়েছে ৩২ জন শিশুকে। এই শিশুগুলো সবাই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আমাদের শরীরে পানির চাহিদা বেড়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে খোলা জায়গায় শরবত ও আখের রস পান করছেন অনেকেই। নোংরা পরিবেশে তৈরি করা এসব পানীয়তে ব্যবহার হচ্ছে দূষিত পানি। এসব পান করার ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি বলে জনানা তারা। এছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে গরম বেশি লাগার কারণে তাদের ডায়রিয়া হচ্ছে।
তানোর উপজেলার বাসিন্দা জোসনা বলেন, দুই দিন ধরে প্রচণ্ড পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানা হয়। বমি শুরু হলে শরীর বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর এখানে আসি। এখন কিছুটা সুস্থ। রামেক হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জ নীনা খানম জানান, গত কয়েকদিনের তুলনায় ওয়ার্ডে ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা গরমে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। তবে হঠাৎ করেই গরম বাড়ায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের কাছে বেশির ভাগ রোগী আসছে কাশি, জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা ছাড়াও ডায়েরিয়ার লক্ষ্য নিয়ে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স দুই মাস থেকে সাত বছরের মধ্যে।
অন্যদিকে, হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের একই চিত্র। এই ওয়ার্ডে কর্মরত নার্স জানালেন তাদের ওয়ার্ডে বেড়েছে ডায়েরিয়া রোগীর সংখ্যা। এই ওয়ার্ডে সকাল ৮টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৮ জন শিশু ভর্তি হয়েছে ডায়েরিয়া জনিত সমস্যায়। এছাড়া রবিবার ২৩ জন শিশুকে ডায়রিয়াজনিত কারণে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। নার্স শাহীদা খাতুন জানান, আমরা রোগীদের স্বজনদের পরামর্শ দিচ্ছি- হাত ভালো করে ধূয়ে শিশুদের খাবার দিতে। সেই সঙ্গে খাবার স্যালাইন দিতে। একই সঙ্গে খাবার স্যালাইন তৈরির নিয়ম শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে রোগীর স্বজনরাই স্যালাইন তৈরি করে খাওয়াতে পারে। সেই সঙ্গে খেতে হবে ডাব ও ডালিম।
রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক পার্থ মনি জানান, এটি পানিবাহিত রোগ। পানি খাওয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাইরে পানি বা ফুটপাতের খোলা জায়গার খাবার খাওয়া যাবে না। এছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সচেতন থাকতে হবে। শিশুরা আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুকে ও মাকে স্যালাইন খেতে হবে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে শয্যা সক্ষমতা কম। ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে গরমের কারণে। গত গত বছরের তুলনায় একটু বেশি ডায়েরিয়া রোগী; তবে খুব বেশি নয়। সর্বশেষ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ৮২ জন ডায়েরিয়া আক্রান্ত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বড়দের চেয়ে ছোটদের সংখ্যা বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন