করোনা চোখ রাঙানি কিছুটা প্রশমিত হবার সাথেই ডায়রিয়া পরিস্থিতি জনজীবনে দক্ষিণাঞ্চলের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যা না বড়লেও গত এক সপ্তাহে নতুন করে আরো প্রায় ৩ হাজার নারী-পুরষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এ অঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তে সংখ্যা ৪শর কোটায়। গত একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। তবে এসব হিসেব শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়া রোগীদের। এর বাইরে আরো প্রায় সমসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন চিকিৎসকের চেম্বার ও বেসরকারী ক্লিনিক ও বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।
গত ২৪ ঘন্টায় ভোলা ও পিরোজপুরে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধীক হলেও গত সপ্তাহের পরিসংখ্যানে পটুয়াখালী ও ভোলার অবস্থার সবচেয়ে নাজুক ছিল। তবে গত তিন মাসে দক্ষিণাঞ্চলে যে ২৩ হাজার নারী-পুরষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতাল সমুহে চিকিবৎসা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে বরিশালেই সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। এরপরে ভোলাতে প্রায় ৪ হাজার, পটুয়াখালীতে সাড়ে ৩ হাজার, পিরোজপুরে আড়াই হাজার, ঝালকাঠীতে প্রায় ১ হাজার ৮শ এবং বরগুনাতে ১ হাজার ৬শর ওপরে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলায়ই ডায়রিয়া ছড়িয়ে পরলেও এ অঞ্চলের ৪২টি উপজেলার ৩০টিতে এখন ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেশী। গত বছর মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্তের পাশাপাশি ২২ জনের মৃত্যু হয়। অসমর্থিত সূত্রে এবার পটুয়াখালীতে দুজন ডায়রিয়া আক্রান্তের মুত্যুর কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ তা স্বিকার করেনি। গত ৩ মাসে ডায়রিয়া আক্রান্ত ২৩ হাজারের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২২ হাজারেরও বেশী।
এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্তদের চিকিৎসায় এপর্যন্ত ৪১৩টি মেডিকেল টিম গঠনের কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে এসব মেডিকেল টিমের বেশীরভাগেই কোন চিকিৎসক না থাকলেও কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছাড়াও ৪-৫টি মেডিকেল টিম একজন চিকিৎসকের আওতায় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের ৬টি জেলা ও ৪২টি উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন সহ প্রয়োজনীয় অন্যসব ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীও মজুদের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এরমধ্যে ১ হাজার সিসি আইভি স্যালানের সংখ্যাই লক্ষাধীক ব্যাগ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র ডায়রিয়া সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ব্যাপক প্রচারনার পাশাপাশি সর্বত্র বিশুদ্ধ পানি সরবারহের বিষয়টি নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছেন। একই সাথে রোজাদার সহ সকলকেই বাসি খাবার পরিহারের সাথে বিশুদ্ধ পানি পান ও শরীরের জন্য সহনীয় খাবার গ্রহনের ওপরও যোর দিয়েছেন চিকিৎসকগন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন