শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা জিপিএ-৫ পাচ্ছি অথবা ডিগ্রি অর্জন করছি কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা দক্ষতা দেখতে পারছি না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যথাযথভাবে বাংলা অথবা ইংরেজিতে ভাব বিনিময় করতে পারি না। যা বুঝাতে চাই তা আমরা যথাযথ ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে বুঝাতে পারি না। তার মানে হলো আমরা যে পদ্ধতিতে মেধার মূল্যায়ন করে ডিগ্রি প্রদান করি সে পদ্ধতিতে ত্রæটি রয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনাতয়নে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি ডিভিশন এবং এটুআই প্রোগ্রামের আয়োজনে শিক্ষক সম্মেলন-২০১৯ এর উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা বিগত দশ বছরে শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করতে সক্ষম হয়েছি। এখন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করে তার গুণগত মান উন্নয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে প্রচুর শ্রমিক চাকরি হারাবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করতে হবে। শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষাখাতে যে দেশ যত বেশি বিনিয়োগ করেছে সে দেশ তত বেশি উন্নত হয়েছে।
শিক্ষক সম্মেলনে আমার গ্রাম-আমার শহর, আমার-শিক্ষা শিরোনামে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্যানেল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সোহেল আহমেদ, এটুআই প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিল মো: অনির চৌধুরী।
উপমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে স্কুল ব্যবস্থপনা কমিটির ভূমিকা গুরুত্বর্প‚ণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা অথবা প্রভাবশালীরা স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে থাকে। সেক্ষেত্রে তারা শিক্ষার গুণগত মানের দিকে বেশি খেয়াল রাখেন না। এই বিষয়টি আমাদের ভাবতে হবে। তিনি বলেন, জ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর উন্নত বিশ্বের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তা কমে এসেছে। এটি অত্যন্ত আশার দিক।
এদিকে সকালে রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০১৯ এর জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার উদ্ভোধনের সময় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেনÑ উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসা¤প্রদায়িক দেশ গড়তে হলে সৃজনশীল ও গুণগত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল আর বেশি দূরে নয়। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত জাতি হতে চাই। এর জন্য শিক্ষাই হচ্ছে প্রধান নিয়ামক। তাই সরকার সৃজনশীল ও গুণগত শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করছে এবং এই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা মুখস্ত বিদ্যা থেকে বেড় হয়ে আসতে চাই এবং শিশুদের অতিরিক্ত পড়ার চাপ ও জিপিএ-৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে চাই। এই জন্য আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সংশোধন করছি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আধুনিক বিশ্বে ইনভেশনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা ইতোমধ্যে সৃজনশীলতায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। এই প্রক্রিয়াকে আর ও এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষাকে কার্যমুখী করতে হবে। যে শিক্ষাব্যবস্থা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে না সে শিক্ষাব্যবস্থা ব্যর্থ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আগমগীর। ভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাটিজ এই চারটি বিষয়ে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন করা হয়। সারা দেশের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। বিভাগীয় পর্যায়ে ১০৮ জন প্রতিযোগী নির্বাচিত হয়। তারা জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন