বিশ্বকাপ শুরুর এক মাস আগ থেকে এক তারকা বোলারকে নিয়ে সরগম ক্রিকেটঙ্গন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেটজজ্ঞের জন্য ঘোষিত পাকিস্তান দলে নেই মোহাম্মাদ আমিরের নাম। বলতে গেলে সমালোচনার তোপ সইতে না পেরেই শেষ মুহূর্তে বাঁ-হাতি পেসারকে দলে নেওয়া। সেই আমিরের চওড়া কাঁধই এখন পাকিস্তানকে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
এখনো অনেক পথ বাকি। পাকিস্তান সবে খেলেছে তাদের চতুর্থ ম্যাচ। তাতে জয় মাত্র একটিতে। একটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বৃষ্টি। সেমিফাইনালের টিকিট পেতে এখনো পাঁচ ম্যাচ তাদের হাতে। এজন্য আমিরের কাছ থেকে দলের যে প্রত্যাশা তার পুরোটাই দিয়ে চলেছেন এই গতির পেসার। গতকাল ওয়ার্নারের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে সাড়ে তিনশ-চারশ রানের আভাস দিয়েও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস যে ৩০৭ রানে গুটিয়ে গেল তা তো আমিরের কল্যাণেই। অন্য বোলাররা যেখানে খরুচে বোলিংয়ে অজি ব্যাটসম্যানদের সামনে টিকতে পারেননি সেখানে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে একাই পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন আমির। দুর্দান্ত লাইন লেন্থ, সুইং আর ভয়ঙ্কর ইয়োর্কার-বাউন্সারের যেন পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন ২৭ বছর বয়সী পেসার।
বাংলাদেশের মত পাকিস্তানও বৃষ্টির বাধায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে পারিনি। তার আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪ রানের জয়ে আমির নিয়েছিলেন দুই উইকেট। এর মধ্যে একটি উইকেট ছিল সম্ভবত পুরো টুর্নামেন্টের মধ্যে সবচেয়ে মুল্যবান। সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে রূদ্রমূর্তিতে থাকা জস বাটলারকে ফিরিয়ে আমিরই পাকিস্তানে জয়ের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নিজেদের রেকর্ড ব্যবধানের পরাজয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তানও দুর্দান্ত জয়ে ফিরে পায় আত্মবিশ্বাস। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সেই ম্যাচেও দলের নেয়া তিন উইকেটের সবকটিই ছিল আমিরের শিকার। সব মিলে তিন ম্যাচে আমিরের শিকার ১৪ দশমিক ৭৫ গড়ে ১০ উইকেট। বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলারদের তালিকার শীর্ষে যে নামটি জ্জ্বলজ্জ্বল করছে সেই নামটিও আমিরের।
ভেন্যুর নাম টন্টন হওয়াতে এমন কিছুর আভাস মিলেছিল আগেই। এই কুপার অ্যাসোসিয়েট কাউন্টি গ্রাউন্ডেই তিন বছর আগে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইংল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ফিরেছিলেন আমির। পুরনো চেনা মাঠে নতুন করে ফিরে আসাটা স্মরণীয় করে রাখলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে যখন ১৭ ওভার বাকি তখনই তাদের সংগ্রহে জমা পড়ে ২ উইকেটে ২১৮। এই অবস্থা থেকে ৬ বল বাকি থাকতে তাদের গুটিয়ে যাওয়ার পিছনে অবদান আছে অন্য পেসারদেরও। প্রথম দিকে মার খেতে থাকা ওয়াহাব রিয়াজ-হাসান আলিরা শেষ স্পেলে দারুণ বোলিং করেন। যে কারণে ২৮ ওভারে শেষ ১০ উইকেটে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা করতে পারে ১৬১ রান। শেষ পাঁচ উইকেট থেকে আসে মাত্র ১৯।
ফিঞ্চ-ওয়ার্নার জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ছিল উড়ন্ত। ২৩তম ওভারে ফিঞ্চকে ক্যাচে পরিনত করে ১৪৬ রানের জুটি বিচ্ছিন্ন করেন আমির। অজি অধিনায়ক ৮৪ বলে ছয়টি চার ও চারটি ছক্কায় করেন ৮২ রান। এরপর আর তেমন জুটি গড়তে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। সেট হওয়ার আগেই স্টিভ স্মিথকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মাদ হাফিজ। এসেই মার শুরু করা গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ও ওয়ার্নারকে ১৯ রানের ব্যবধানে তুলে নেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। আগের ম্যাচে নিজের মন্থরতম ফিফটি করা ওয়ার্নার এদিন ওয়ানডেতে ১৫তম সেঞ্চুরি তুলে নেন নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায়। তার ১১১ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে ছিল ১১ চার ও একটি ছক্কার মার।
ওয়ার্নার ফেরার পরও অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৪ উইকেট ২৪২। এরপর উসমান খাজা ও শন মার্শের উইকেট দুটি তুলে নিয়ে ফিঞ্চের দলের বড় ইনিংসের স্বপ্ন চূর করে দেন আমির। পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নিজের বোলিং কোটার শেষ বলে অ্যালেক্স কারিকে লং অনে ক্যাচ বানিয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেট পাওয়া আমিরের বোলিং ফিগার ছিল ১০-২-৩০-৫।
রান উৎসবের বিশ্বকাপে ৩০৮ রানের লক্ষ্যটা সহজ মনে হতেই পারে। তবে ১১ ওভারের মধ্যে ৫৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কাজটা কঠিন করে তুলেছিলেন অজি পেসাররাও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন