বিরলে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক যুবককে গাছের সাথে বেঁধে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনার পরদিন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। নির্যাতনকারীদের অব্যাহত হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে পরিবারটি। থানার অফিসার ইনচার্জ দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানালেন।
যুবক উপজেলার শহরগ্রাম ইউপি’র চাপাই নওদাপাড়া গ্রামের মৃত কান্দুড়া চন্দ্র রায়ের পুত্র দিলীপ চন্দ্র রায় (৩০) কে পূর্বের একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ জুন শুক্রবার সকালে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। শনিবার দুপুরে ঘটনায় ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার যুবক দিলীপের মা কল্পনা রাণী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৬ মাস আগে নির্যাতিত যুবক দিলীপের সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর এক মেয়ের সাথে প্রেমের অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠার গুজবে উভয় পরিবারের সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় এবং ঐ ঘটনায় দিলীপ গত ৬ মাস ধরে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র পলাতক ছিল। দিলীপ আবার বাড়ীতে ফিরে এলে পূর্বশক্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার দিলীপসহ তাঁর পরিবারের লোকজন জানান, দিলিপের সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর মেয়ের কোন সম্পর্ক ছিলনা। তার পরেও শেষমেষ মিথ্যা কথা বলে দিলিপের স্ত্রী স্বপনা রাণীর সাথে দিলিপের কলহ বাঁধিয়ে দেয়। ফলে দিলিপ ক্ষোভে বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। আবার গত ১ মাস পুর্বে দিলীপ বাড়ীতে ফিরে এসে স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে সংসার পরিচালনা করে আসছে। এর আগে দিলিপের মা কল্পনা রাণীর নিকট টাকা কর্জ্জ চায় শমেষ। টাকা কর্জ্জ না দেয়ার কারণে পূর্বের শত্রুতার জের ধরে শমেষ ও তাঁর লোকজন দিলিপকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে এ মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে এবং খবর পেয়ে স্থানীয় শহরগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মুরাদ ঘটনাস্থলে এসে শুক্রবার বিকালে তিনিও দিলীপকে নির্যাতন করে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে সাদা কাগজে সহি নিয়ে দিলীপকে ছেড়ে দেয়।
১৪ জুন শুক্রবার সকালে দিলীপ বাড়ী থেকে বের হলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর নিতাই চন্দ্র রায়ের পুত্র শমেষ চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে তার ভাই বাবলু চন্দ্র রায়, নির্মল চন্দ্র রায় ও তার মামা একই উপজেলার ধামইড় ইউপি’র দারইল গ্রামের মৃতঃ আন্ধারু চন্দ্র রায়ের পুত্র মন্টু চন্দ্র রায়গণ দিলীপকে তুলে বাড়ীতে নিয়ে যায় এবং মধ্যযুগীয় কায়দায় দিলীপকে বাড়ীর ভিতরে থাকা কাঁঠাল গাছের সাথে বেঁধে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাশবিক নির্যাতন করে।
এ বর্বর নির্যাতনের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য রঞ্জন চন্দ্র রায় ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা অরুণসহ এলাকার বেশকিছু লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে এ অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদ জানালে শমেষ ও তার লোকজন তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। বিকালে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান (মুরাদ) ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনিও ঐ যুবককে শারিরিক নির্যাতন করে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তাঁর কাছে সাদা কাগজে সহি নিয়ে ছেড়ে দেয়। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মুরাদের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, দিলীপ তাঁর দোষ স্বীকার করেছে বলে তাঁকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঐ টাকা স্থানীয় মন্দিরে দেয়া হবে। এ ছাড়া আর কোন কিছু মন্তব্য করতে রাজি হননাই তিনি।
নির্যাতনকারী শমেষ চন্দ্র রায়, বাবুলু চন্দ্র রায়, নির্মল চন্দ্র রায় ও মন্টু চন্দ্র রায়ের নিকট জানতে চাইলেও আমাদের প্রতিবেদকের নিকট কোন মন্তব্য করতে রাজি হোননি তাঁরা।
এ ব্যাপারে বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) এটিএম গোলাম রসূলের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বিষয়টি প্রথমে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে অবগত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ অফিসার প্রেরণ করি। নির্যাতিত যুবক এর মা কল্পনা রাণী শনিবার একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন