রক্তের সম্পর্ক বজায় রাখা ও আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখা মানুষের বুনিয়াদি আখলাকের অন্তর্ভুক্ত। এ জগতে আমরা কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা ও ধারণা ছাড়া যা কিছু কাজ করি সেগুলোকে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। তাহলে সবার মধ্যেই আত্মীয়তার বন্ধন ও রক্তের সম্পর্কের একটা গভীর সম্পর্ক নজরে পড়বে।
যার অন্তরে এ অনুপ্রেরণা ও অনুরাগের বিন্দু-বিসর্গও নেই তার তরফ থেকে অন্যান্য লোকের নির্দয়তা, অত্যাচার, কঠোর হৃদয়তা ও শত্রæতা যা কিছুই লাভ করুক না কেন সেটা অনেক কম কথা; বরং তার চেয়ে অধিক কিছুই তার নিকট থেকে লাভ করা সহজতর। এ জন্য ইসলামী শিক্ষার ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্কের একটি বিরাট ভ‚মিকা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আল্লাহপাকের খাস ও নির্দিষ্ট নামগুলোর মধ্যে আল্লাহ নামের পর যে নামটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণভাবে পরিব্যপ্ত, সেটি হচ্ছে রহমান অর্থাৎ খুবই দয়ালু ও অনুকম্পাশীল। এ নামের মধ্যে আরো একটি নাম আছে, তা হলো রাহীম অর্থাৎ যিনি ক্ষমার আধার ও ক্ষমায় পরিপূর্ণ।
হযরত ঈসা আ.-এর উম্মতদের একটি বিশেষ নৈতিক গুণ হলো রক্তের সম্পর্ককে বজায় রাখা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ‘এবং যেসব লোক তাদের অনুগত হয়ে গেল আমি তাদের অন্তরে দয়া ও অনুকম্পাকে ঢেলে দিলাম। এ গুণটির মধ্যে উম্মতে মুহাম্মাদীও তাদের সাথে অংশীদার রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে লোক মুহাম্মাদ সা.-এর সাথে রয়েছে তারা কাফিরদের ওপর খুবই শক্তিমান এবং তারা পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্রচিত্ত।’ আপসে পরস্পর সম্পর্কিত লোকদের মধ্যে একজনের সাথে অপরজনের যে নেক সম্পর্ক স্থাপিত হয় তাকে ছেলায়ে রেহেম বা রক্তের সম্পর্কের প্রতি যত্নবান বলা হয়। কেননা, রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়তার সব সম্পর্ক ও যোগসূত্র মাতৃউদর বা দয়ার দ্বারাই সৃষ্টি হয়।
এমনিভাবে রাহীম, রহমান ও রেহেম নামক নামগুলোর উৎপত্তিও ঘটেছে এ মূল ধাতু থেকেই। এর দ্বারা ওই পরিমাণ ফল বেরিয়ে আসে যে, রক্তের সম্পর্কের অনুরাগ রহমতসম্পন্ন আল্লাহর রহমতের প্রতিবিম্ব। এ থেকেই দুনিয়াজোড়া আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলে পাক সা. বলেছেন, রক্ত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আল্লাহপাকের রহমান গুণ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
একদা এক ব্যক্তি স্বীয় সন্তানকে সাথে নিয়ে রাসূল সা.-এর দরবারে আগমন করল এবং সন্তানটিকে তার বুকে শুইয়ে রাখল। রাসূল আকরাম সা. এ দৃশ্য দেখে বললেন, তুমি কি তার ওপর রহম করছ? লোকটি বলল, হ্যাঁ তাই করছি। রাসূল সা. বললেন, আল্লাহপাক তোমার ওপর এর চেয়েও অধিক রহম ও করমকারী। যতটুকু রহম তুমি সন্তানের ওপর করছ আল্লাহপাক সব দয়া ও অনুকম্পাকারীদের থেকে সমাধিক দয়া ও অনুকম্পাশীল।
ইসলামে যে দয়াদ্রচিত্ততা ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার তালীম দিয়েছে তা কেবলমাত্র মুসলমানদের সাথেই নয়; বরং এর পরিসর খুবই বিস্তৃত। এতে সব বনি আদমই শামিল রয়েছে। যেমন ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা দুনিয়াবাদীদের প্রতি দয়া করো। তাহলে আসমানে অধিষ্টিত সত্তাও তোমাদের স্নেহ ও দয়া করবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন