শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদিগন্ত

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ও চর্চার কথকতা

প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ রেজাউর রহমান : রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই-এই প্রবচনটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভুল বলে প্রমাণিত হচ্ছে। সরকার প্রধান ও সরকারি দলের নেতৃবৃন্দ ২০১৯ সালের পূর্বে সাধারণ নির্বাচনের চিন্তা পরিহার করে দেশে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বলেই মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকেই প্রাধান্যদিচ্ছেন। আর এটাই যদি তার অগ্রাধিকার হয়Ñতা’হলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে ধরনের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচনের শেষ তিন ধাপ, ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনের মতোই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনÑযা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। এসব নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম কাচুপি ছিলো ব্যাপক। গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত অবাধ, নিরপেক্ষ ও ভয়-ভীতিহীন নির্বাচনের ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আর এ জন্য এখনও যে দলটিকে বৃহত্তম বিরোধীদল হিসেবে গণ্য করা হয়Ñসেই বিএনপি দলনেত্রীর অবদানও কম নয়। রাজনৈতিক দল ছোট বা বড়ো যে রকমই হোক না কেনোÑতাদের লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতায় গিয়ে নিজ নিজ দলের কর্মসূচি বাস্তবায়নের। দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি কি পেয়েছেÑতার একটি সমীক্ষা করলে দেখা যাবে যে ইতিবাচক কিছুই জোটেনি দলটির ভাগ্যে।
এক বছরের সামান্য কিছু পূর্বে পার্শ্ববর্তী বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচনে অন্তত পনের বছর পরে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতা গ্রহণের দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আসনে ছিলেন কংগ্রেসের ড. মনমোহন সিং। যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনেও ক্ষমতায় আসীন থেকেই প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে নতুন সরকার গঠন করেছেন। এখন দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ হওয়ার বহু আগে থেকেই খোদ বিএনপির অনেক নেতা স্বীকার করেছেন যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে না যাওয়াটা ছিল ভুল। দাবায় যেমন ভুল চাল দিলে মন্ত্রী ও রাজা হারাতে হয়, তেমনি রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষমতায় যাওয়া পিছিয়ে যায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনে যোগ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহা-সচিব দেশবাসী ও দলীয় কর্মীদেরকে ফলাফল গণনা ও ঘোষণা করা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে থাকতে বলেছিলেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের দিনেও বিএনপি সেই পন্থা অনুসরণ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতো। তার ফলে ওই দিনটি পর্যন্ত তাদের যে শক্তি ছিলো, যে কর্মীবাহিনী ছিলোÑজনগণের যে নীরব সমর্থন ছিলোÑতার সম্মিলিত ফল হিসেবে অন্তত, তাদের একশত জাতীয় সংসদ আসন পাওয়া বিস্ময়ের কিছু ছিল না। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশবাসীর, এ দেশের গণতন্ত্র পাগল জনগণের যে তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি’র কোনো আমলেই বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদেরকে সংসদে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে দেখেনি।
এখানেও আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নীতি ও সিদ্ধান্ত কোনো আমলেই সঠিক ছিলো না। যদি যুক্তি দিয়ে বলা হয় যে, জাতীয় সংসদের ব্যয়বহুল অধিবেশন বর্জন করার প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন বিএনপি’র প্রথম আমল ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদের মাঝামাঝি মাগুরায় অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে তৎকালীন সরকারি দল বিএনপি’র ব্যাপক কারচুপি, বিরাট অর্থ ব্যয় করার ও কেন্দ্র দখলের প্রতিক্রিয়া স্বরূপÑতা’হলেও প্রশ্ন থেকে যায় যে আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে সম্পূর্ণ আলাদা লক্ষ্য, নীতি ও আদর্শের অনুসারী বিএনপিকেও তাই অন্ধের মতো অনুসরণ করতে হবে? আওয়ামী লীগ নেত্রী ১৯৯৬ সালে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে থাকেন, ২০১৪ সালে এসে ওই একই দাবিতে বিএনপিকেও কি দশম সংসদ গঠনের জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করতে হবে?
রাজনীতিতে পারিবারিক-রাজনৈতিক আবহে বড় হওয়া শেখ হাসিনা যে পরিপক্বতার, যে দক্ষতার পরিচয় ও প্রমাণ দিয়েছে সেই পরিপক্বতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপি চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা দেখতে পাই যে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে সংলাপে বসার আমন্ত্রণ জানালে তা দীর্ঘসূত্রিতার কবলে ফেলে বিএনপি নেত্রীর কার্যত: প্রত্যাখ্যান করেন। প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন কথোপকথনে বলেছিলেন, ‘আসুন আমরা আলোচনায় বসি। আপনি আপনার আহূত তিনদিনের হরতাল প্রত্যাহার করুন।’ জবাবে বিরোধীদলীয় এবং বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, হরতাল শেষে বসবেন। এখানে আমরা যা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিÑতা হোতো না যদি বিরোধীদলীয় নেত্রী বলতেন ‘আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী- আপনি বলছেন হরতাল প্রত্যাহার করতে এবং আলোচনায় বসতে। আপনার সম্মানে আমি হরতাল প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা নিচ্ছি শরীকদের সাথে আলাপ করে।’ কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছিলেন, হরতাল হবেÑতারপর বসা হবে। হরতালের তিনদিন হরতাল হয়েছেÑকিন্তু দুই নেত্রীর বসা আজও হয়নি।
এখানে আরো একটি পরিপক্ব রাজনীতির প্রমাণ আমরা পাই এক বছর আগে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের অকাল মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুলশানস্থ বিরোধীদলীয় নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছুটে যাওয়ার মধ্যে, যে কার্যালয়ে কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো বিএনপি নেত্রীকেÑসেই ভবনে শোক ও সমবেদনা জানাতে স্বয়ং দেশের প্রধামন্ত্রীকে ঢুকতে না দিয়ে যে অসৌজন্য প্রকাশ করা হয়েছেÑতার দৃষ্টান্ত বিরল। যে দুটি ঘটনা দেশের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করার দিকে অবদান রাখতে পারতোÑসেগুলো এভাবেই নষ্ট করা হয়েছে। গত বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপি নেত্রীর আহ্বানে যে অবরোধের কর্মসূচি পালন করা হয়Ñতা ছিলো মূলত এক অঘোষিত সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধÑযাতে ব্যবহার করা হয় পেট্রলবোমা এবং আক্রমণ হয় চোরাগোপ্তা। এটা যদি বিএনপির কর্মসূচি না হয়Ñতবে আন্দোলন বানচাল করার উদ্দেশ্যে সরকার দলীয় ক্যাডাররাই এটা করছেÑঘোষণা দিয়ে বিএনপি নেত্রী অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন এবং তাতে যারা প্রকাশ্যে কোনো দলের সমর্থক না হয়ে নীরবে ভোট বিপ্লব ঘটানÑতাদের মূল্যবান সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হতেন। অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শুরু করলেও তিন মাস পরে তা ঘোষণা দিয়েই প্রত্যাহারের প্রয়োজন ছিল।
প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ১৯৯১ সালে এরশাদোত্তর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ৩০.৮১% ভোট পায়। আর আওয়ামী লীগ পায় ৩০.০৮% ভোট। বিএনপি ঐ সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রায় সমান ভোট পেয়ে জাতীয় সংসদে লাভ করে ১৪০টি আসন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে সরকার গঠন করে বিএনপি। তবে জামায়াত সরকারে যোগ দেয়নি। আওয়ামী লীগ সারা দেশে প্রদত্ত ভোটের এক কোটি দুই লাখ উনষট্টি হাজার আটশত ছিয়াশি ভোট পেয়ে জাতীয় সংসদের আসন পেয়েছিলো ৮৮টি। বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছিলো ৩শ’ আসনেই, তবে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছিলো ২৬৪টি আসনে। বিএনপি ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়ে ১৪০টি আসন পেলেও সারা দেশে মোট প্রদত্ত ভোটের এক কোটি পাঁচ লাখ সাত হাজার পাঁচশত উনপঞ্চাশ ভোট পায়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর খানেক আগে থাকতেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগ। বিএনপি সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাধারণ নির্বাচনের সময়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। ফলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আওয়ামী লীগ সে নির্বাচন বর্জন করে এবং আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের নির্বাচন দ্বারা একটি পুতুল সরকার গঠিত হয়েছে বলা হলেও মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের রাতব্যাপী অধিবেশনে দেশে সাধারণ নির্বাচনের সময়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার আইন পাস করলে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা সাথে সাথে তা মেনে নেন। নব-গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে ঐ বছরেরই (১৯৯৬) জুন মাসে সপ্তম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ঐ নির্বাচনে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয় দলই ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয়ী হয়। বিএনপি জয়ী হয় ১১৬টি আসনে। এখানে লক্ষণীয় যে সারা দেশে প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিলো এক কোটি আটান্ন লাখ বিরাশি হাজার সাতশ বিরানব্বইটি ভোট, আর বিএনপি পেয়েছিলো এক কোটি বিয়াল্লিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার নয় শত ছিয়াশিটি। সে সংসদে জাতীয় পার্টির ৩২জন নির্বাচিত হয়। সংসদে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিলে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
অষ্টম জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ২৫২টি আসনে মনোনয়ন দিলেও ১৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। আর আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিলেও মাত্র ৬২টি আসনে জয়লাভ করে। বিএনপি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে ১৯৯৬ সালে তাদেরই প্রণীত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন অনুযায়ী সদ্য অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা করার ব্যাপারে অনড় থাকলে আওয়ামী লীগ পুনরায় এক দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে সামরিক বাহিনীর চাপে দুই বছর মেয়াদী এক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেনÑসেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ত্রিশটি আর আওয়ামী লীগ পায় দুই শত ত্রিশটি আসন।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দল থাকা অবস্থায় ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল এবং আরো একবার ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল এবং বিএনপি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং আরো একবার ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন বর্জন করেÑফলে সরকার যারাই গঠন করুক, জাতীয় সংসদের ব্যয় বহুল অধিবেশন বিরোধী দল হিসেবে হয় আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বর্জন করায় সংসদ কোনো সময়েই প্রাণবন্ত বা কার্যকর ছিলো না। প্রায় সময়েই একতরফাভাবে সরকারি দল যেমন খুশী তেমন আইন পাস করিয়ে নিয়েছে। দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন শুধু বিএনপি নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বর্জন করায় সারা বিশ্বে নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা ভোটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অবশিষ্ট ১৪৭ আসনে নির্বাচনের নামে হয়েছে প্রহসন মাত্র। সংসদে রয়েছে সরকারিদলেরই একাংশ মন্ত্রিসভার তিনজন সদস্যÑযাদেরকে নেয়া হয়েছে হু. মু. এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে অথচ বিরোধীদলের নেতা হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা রওশন এরশাদ আর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বয়ং হু. মু. এরশাদ।
এসব অসঙ্গতি, স্ববিরোধিতা ও তুঘলকী কর্মকা- এবং বিরোধী বা ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন, বিরোধীদলকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় আটাশ হাজার মামলা-মোকদ্দমা দায়ের ইত্যাদির প্রতিবাদকারী সকলকেই সরকার ও সরকারিদলের নেতৃবৃন্দ বিএনপির ‘বি’-টিম আখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। এমন কি, দুর্নীতির চিত্র যারা তথ্য-উপাত্তসহ তুলে ধরেন যেমন- টিআইবি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগÑতাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে যাচ্ছেন যে তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিকল্পিত উপায়ে বিএনপি’র স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী নিজে যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন রাজনীতিতে সকলের অংশীদারিত্ব, নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক কারণে সহিংসতা বর্জন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যÑবারবারই তা অসমাপ্ত থেকে যাচ্ছে। এর কারণস্বরূপ প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলটির অদূরদর্শিতা, সংসদ অধিবেশন বর্জন, নির্বাচন বর্জন এবং সরকারি দলের তোষামোদকারীদের অবাঞ্ছিত চাপ ইত্যাদি দায়ী হতে পারে। কাজেই আমরা দেখতে পাই যে গণতন্ত্রের জন্য আজীবন নিরলস সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু কন্যাকেও বারবার গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার কঠিন কাজ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে। তবে দেশের বিরাট সংখ্যক নাগরিকের প্রত্যাশা হলো, দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই নিজেদের দলের মধ্যে ও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে অবদান রাখুক।
 লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন