মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বিশ্বকাপের ‘অ্যাশেজ’

মুখোমুখি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া

মো: জাহিদুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের উত্তাপ বলে বোঝানোর মতো নয়। তেমনি উপমহাদেশের বাইরে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার লড়াইয়েও তেমনি উত্তাপ দেখা যায়। বাইশ গজের এই লড়াই রূপ নেয় যুদ্ধে। তাতে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি সাবেকেরাও যোগ দেন। দর্শকদের মাঝেও দেখা যায় বেপরোয়া মনোভাব। সবকিছুই একটি ম্যাচকে কেন্দ্র করে। বিশ্বকাপের ৩২তম ম্যাচে তেমনি উত্তপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আজ লর্ডসে দুপুর সাড়ে তিনটায় দুই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হচ্ছে।

এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট দল হিসেবে মাঠে নেমেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের বেশ আগে থেকেই ইংলিশ খেলোয়াড়দের বারুদে ফর্ম সবা চোখেই তাদের এই মর্যাদার সিংহাসনে বসিয়েছে। স্বাগতিকদের শুরুটাও ছিলো চোখ ধাঁধাঁনো। ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শক্তিশালী দল দক্ষিন আফ্রিকাকে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শুরু এউইন মরগানদের। পরের ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হোঁটচ খেলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছিলো দলটি। কিন্তু নিজেদের ৬ষ্ঠ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে আবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে শিরোপার অন্যতম দাবিদাররা।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে। মাঝে ভারতের বিপক্ষে হার ছাড়া স্বগৌরবেই হেঁটেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রকাশ পেয়েছে অজিদের বোলিং দুর্বলতা। মাঝে ক্যারিবিয় বাঁধায় প্রায় পড়ে গিয়েছিলো দলটি। শেষরক্ষা হয় মিচেল স্টার্ক ও ব্যাটসম্যান বনে যাওয়া কোল্টার নাইলে।

তাই আজকের ম্যাচে কোন দলকেই এককভাবে এগিয়ে রাখার সুযোগ নেই। তবে স্বাগতিক হওয়ার সুবাদে এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। আবার পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখবে অস্ট্রেলিয়াকে। দুই দলের এ পর্যন্ত দেখা হয়েছে ১৪৭ বার। যার মধ্যে ৮১ বার জয় দেখেছে অস্ট্রেলিয়া। ইংলিশদের জয় ৬১ ম্যাচে। দুটি ম্যাচ টাই হয়েছে, বাকি তিনটি পরিত্যক্ত হয়েছে। অবশ্য ইংলিশ কন্ডিশনে এগিয়ে আছে ক্রিকেটের আবিস্কারকরা। ইংল্যান্ডে দুই দল ম্যাচ খেলেছে ৬৮টি। যার মধ্যে ইংল্যান্ডের জয় ৩৪ ম্যাচে, অস্ট্রেলিয়ার ৩০ ম্যচে। আর ফল হয়নি ৪টি ম্যাচ। আজকের ভেন্যুতে অবশ্য দু’দল মুখোমুখি লড়েছে ২ ম্যাচে। দুই দলই একটি করে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। ইংল্যান্ডের জয়টি অবম্য পুরোনো, ১৯৭৯ সালে! অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১৯৯৯ সালে। বিশ্বকাপের ৭ বারের লড়াইয়ে আধিপত্য অজিদের। অ্যারন ফিঞ্চের দলের ৫ জয়ের বিপরীতে মরগানের দলের জয় ২ ম্যাচে।

অজিদের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ইংলিশ অধিনায়ক মরগানের। তিনি ৫১ ম্যাচে করেছেন ১৮৫১ রান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক রিকি পন্টিং। তার সংগ্রহ ৩৯ ম্যাচে ১৫৯৮ রান। অজি ব্যাটসম্যান পন্টিং অবশ্য অবসর নেয়ায় ইংলিশ বোলারদের দুশ্চিন্তা কম। কিন্তু ফর্মের চূড়ায় থাকা মরগানের বিপক্ষে পরীক্ষা দিতে হবে স্টার্ক-কামিন্সদের।

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচ খেলে ৫ জয় ও এক হারে অস্ট্রেলিয়ার পয়েন্ট ১০, যা তাদের টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে। অন্যদিকে সমান সংখ্যক ম্যাচে ৪ জয় ও ২ হারে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ৮, টেবিলে তাদের অবস্থান চারে। শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রাখতে ইংল্যান্ডের জন্য জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থাকা শ্রীলঙ্কা, ছয়ে থাকা বাংলাদেশ ও সাতে অবস্থান করা বাংলাদেশ তাদের প্রতি মুহুর্তেই চোখ রাঙানি দিচ্ছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া অবস্থান অনেকটা নিরাপদ, তবে নিশ্চিত নয়।

ইংলিশ শিবিরে একটি দুশ্চিন্তা প্রবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওপেনার জেসন রয়ের ইনজুরি। অজিদের বিপক্ষে খেলার সম্ভাবনা থাকলেও মরগান জানিয়েছেন, তিনি খেলবেন না। মরগান বলেন, ‘রয়ের ইনজুরি আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। সকালের স্ক্যান রিপোর্ট তাই বলছে। কিন্তু আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চাইছি না। যদিও রয় আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়।’

পরিসংখ্যানে ইংল্যান্ডের চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও মুখোমুখি শেষ পাঁচ লড়াই ভাবাচ্ছে অস্ট্রেলিয়াকে। সেই পাঁচ দেখায় একটি ম্যাচও জেতেনি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। যদিও অজি অধিনায়ক সেই সময়ের তুলনায় বর্তমান দলতে অনেক শক্তিশালী মনে করছেন। অ্যরন ফিঞ্চ বলেছেন, ‘আমার ধারনা, এতোদিনে দলে একটা ভারসাম্য এসেছে। আমাদের ক্রিকেটাররাও ভালো খেলছে। ব্যাটিংয়ে এবং বোলিংয়েও উন্নতি চোখে পড়ছে। তাই আগের হার নিয়ে খুব একটা ভাবছি না।’

তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশও পরোক্ষভাবে খেলবে। কারন বাংলাদেশের শেষ চারে যাওয়ার সমীকরনে অজিরা জিতলেই লাভ। ইংলিশরা জিতলে কিছুটা কঠিন হয়ে পড়বে সমীকরন। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আক্ষেপ মুছতে তাই এ ম্যাচের দিকেও তাকিয়ে থাকবেন বাংলাদেশী ক্রিকেট ভক্তরা।
আগামী আগস্টের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে অ্যাশেজ। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সবচেয়ে মর্যাদার এ লড়াইয়ের আগে বিশ্বকাপের লড়াই অন্যরকম এক আমেজ তৈরি করবে। আজকের ম্যাচের আগেই তাই অ্যাশেজের উত্তাপ দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির শঙ্কা মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপের সময়টা পেছানো যায় কি-না? আইসিসির এমন প্রস্তাবে আগস্টের ঐ ‘ব্যস্ত সূচি’র কথা জানিয়ে তা নাকচ করে দেয় ইংল্যান্ড! তার মানে? বিশ্বকাপের চেয়ে অ্যাসেজই যে ইংলিশদের কাছে বড়। তারই মহড়া আজ ক্রিকেটের তীর্থভ‚মি লর্ডস!

ওয়ানডেকে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া
ইংল্যান্ড ১ র‌্যাঙ্কিং ৪ অস্ট্রেলিয়া
মুখোমুখি ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া টাই/পরি.
ওয়ানডে ১৪৭ ৬১ ৮১ ২/৩
ইংল্যান্ডে ৬৮ ৩৪ ৩০ ৪
লর্ডসে ২ ১ ১ ০
বিশ্বকাপে ৭ ৫ ২ ০

সর্বাধিক ম্যাচ
ইংল্যান্ড : এউইন মরগ্যান, ৫১টি
অস্ট্রেলিয়া : মাইকেল ক্লার্ক, ৪৪টি

অধিনায়ক হিসেবে
ইংল্যান্ড : এউইন মরগ্যান, ২৩টি
অস্ট্রেলিয়া : রিকি পন্টিং, ৩০টি

সর্বোচ্চ দলীয়
ইংল্যান্ড : ৪৮১/৬
অস্ট্রেলিয়া : ৩৪২/৯

সর্বনিম্ন দলীয়
ইংল্যান্ড : ৮৬
অস্ট্রেলিয়া : ৭০

বড় জয়
ইংল্যান্ড : ২৪২ রানে ও ৯ উইকেটে
অস্ট্রেলিয়া : ১৬২ রানে ও ১০ উইকেট

সর্বাধিক রান
ইংল্যান্ড : এউইন মরগ্যান, ৫১ ম্যাচে ১৮৫১
অস্ট্রেলিয়া : রিকি পন্টিং, ৩৯ ম্যাচে ১৫৯৮

সেরা ইনিংস
ইংল্যান্ড : জেসন রয়, ১৫১ বলে ১৮০
অস্ট্রেলিয়া : শেন ওয়াটসন, ১৫০ বলে ১৬১*

সর্বাধিক সেঞ্চুরি
ইংল্যান্ড : গ্রাহাম গুচ, ৩২ ম্যাচে ৪টি
অস্ট্রেলিয়া : অ্যারন ফিঞ্চ, ২৫ ম্যাচে ৬

সর্বাধিক ফিফটি
ইংল্যান্ড : এউইন মরগ্যান, ৫১ ম্যাচে ১৬টি
অস্ট্রেলিয়া : গ্রাহাম গুচ, ৩২ ম্যাচে ১৩টি

সেরা জুটি
ইংল্যান্ড : ৩য় উইকেটে রয়-রুটের ২২১
অস্ট্রেলিয়া : ২য় উইকেটে ওয়াটসন-পন্টিংয়ের ২৫২*

সর্বাধিক উইকেট
ইংল্যান্ড : জেমস অ্যান্ডারসন, ৩২ ম্যাচে ৩৮টি
অস্ট্রেলিয়া : ব্রেট লি, ৩৭ ম্যাচে ৬৫টি

সেরা বোলিং
ইংল্যান্ড : ক্রিস ওকস, ১০-০-৪৫-৬
অস্ট্রেলিয়া : অ্যান্ডি বিকেল, ১০-০-২০-৭

সর্বাধিক ক্যাচ
ইংল্যান্ড : অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, ৩৬ ম্যাচে ১৮টি
অস্ট্রেলিয়া : রিকি পন্টিং, ৩৯ ম্যাচে ১৭টি

সর্বাধিক ডিসমিসাল
ইংল্যান্ড : জস বাটলার, ২৭ ম্যাচে ৪৬টি
অস্ট্রেলিয়া : অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ৩৫ ম্যাচে ৬৪টি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন