বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
আন্তর্জাতিক পরিসরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি আজকের পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে একই সাথে জটিল ও গুরুত্ববহ ইস্যু। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর উন্নতি সমগ্র বিশ্বকে আজ একই আঙ্গিনায় এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় মানব সভ্যতার স্থিতি, উন্নতি, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক সহনশীলতা, সাম্য ও শ্রদ্ধাবোধ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আজ অনেক বেশি প্রয়োজন। এখানে শত কোটি মানুষের দেশ যেমনি আছে তেমনি আছে মাত্র হাজার কয়েক জনঅধ্যুষিত রাষ্ট্রও। বিশাল অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়ার মতো দেশের সমমর্যাদা নিয়ে আছে নাউরু আর ভ্যাটিকানের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রও। অন্যদিকে আণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের পাশাপাশি আছে সামরিক বাহিনী নেই এমন দেশও। পরস্পরের অখ-তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমমর্যাদা নীতি এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলছে। সুতরাং ধনী-দরিদ্র ছোট-বড় যাই হোক না কেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা পরস্পরের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মানসিকতার সাথে একান্তভাবেই সম্পৃক্ত। সঙ্গত কারণেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ এক জটিল ও কঠিন অনুশীলনের কাজ। আর ভারতের মতো প্রতিবেশী যাদের ভাগ্যলিখন তাদের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কের ধরন অনেকটা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থার মতো। বলা হয় ‘আমেরিকা যার বন্ধু তার সাথে শত্রুতার প্রয়োজন নেই’। ভারতের বেলায়ও এমন বাস্তবতা আমাদের জন্য সত্যি পীড়াদায়ক। সব সময় কাচ স্বচ্ছ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতেও যখন ‘অশ্বল্থাম্মা হত ইতি গজ’ টাইপের কুটিলতা ও জটিলতা পরিদৃষ্ট হওয়ার পরও আস্থার দুর্গটি অটুট ও নির্ভরযোগ্য থাকে কেমন করে? বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুরু থেকেই চোরাবালিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার এই অভিন্ন মূল্যায়ন অস্বীকার করা যাবে কেমন করে?
ব্যক্তিগত পর্যায় গুম-খুন, ধোঁকা-প্রতারণা মন্দ চরিত্র হিসেবে বিবেচিত হলেও পশ্চিমা ধ্যানধারণার মতো চাণক্য দর্শন মতেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে হেন গর্হিত কাজগুলো বৈধ নয় শুধু বরং সফল রাজনৈতিক জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গও। আর উরঢ়ষড়সধপু ও কূটনীতি শব্দ দুটির মূল চেতনা বা দাবিও তাই। সুতরাং ধূর্ত কূটনীতিবিদ তার অনৈতিক এবং গর্হিত কাজের জন্যও নিন্দিত না হয়ে ঝানু ও সফল কূটকৌশলী হিসেবে নীতিবানদের কাছেও নন্দিতই হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী সা¤্রাজ্য বিস্তারে ইউরোপীয় জাতিসমূহকে এটি এক সময় অস্ত্রের চেয়েও কার্যকর শক্তি জুগিয়েছিল এবং আজও একইভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে আধিপত্য অটুট রাখার ক্ষেত্রে। আর আঞ্চলিক পর্যায়ে ভারতও একই পলিসির স্বার্থক অনুশীলনে নিয়োজিত যেন। হেন আচরণ প্রতিবেশীদের আরামের ঘুম হারাম হওয়ার কারণ হলেও ভারতের সুনিন্দ্রার অপরিহার্য অনুষঙ্গ সবসময়ই। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শ্মশানযাত্রার কথাই বলি আর ১/১১-এর নাটকের কথাই বলি সব নাটকীয়তায় ভারতের সেই কৌশলগত উপস্থিতি অস্বীকার করবে কে? নাটক শুরু হলেও শেষ হয়নি, সুতরাং শেষ দৃশ্যের ভয়াবহতা কল্পনা করে বাংলাদেশিদের শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় কী? আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত এবং তা আমরা কাজে ও কথায় সবসময় প্রকাশ করে আসছিও। শান্তি বাহিনী দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি ও অখ-তা বিনষ্টের বৈরী আচরণ, বাংলাদেশকে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা বা ফেনসিডিলের প্লাবনে ডুবিয়ে মারার অব্যাহত কার্যক্রম, বাংলাদেশের সীমানা ঘিরে দেড় শতাধিক ফেনসিডিল কারখানা (কাঁটাতারের বেড়া গরু আটকালেও ফেনসিডিল আটকায় না। দিন দিন ফেলানীদের মৃত্যু মিছিল দীর্ঘতর হলেও এ পর্যন্ত ফেনসিডিল বাহকের মৃত্যুর রেকর্ড আছে কী?)। সিঙ্গাপুর হওয়ার সুযোগটাও মুফতে বিকিয়ে দিয়ে ৩ বিঘা নয়, হাজার কিলোমিটারের ট্রানজিট সুযোগ দিয়ে দেয়া হলেও ভারতের বিবেচনায় তাও যেন যথেষ্ট নয়। আমাদের স্বাধীনতা তাদের দৃষ্টিতে হয়তোবা ‘সোনার হরিণ’ পাইয়ে দেয়ার মতো দুর্লভ ঘটনা। কিন্তু তাদের প্রাপ্তিটা সোনার হরিণের চেয়ে কম না বেশি কৃতজ্ঞতা বোধের কারণে সেই প্রশ্নটা আমরা কোনো দিন ভুলেও মুখে আনিনি। কিন্তু তাতেও তুষ্ট নয় যেন প্রতিবেশী। কারণ স্বাধীনতা পাইয়ে দেয়ার ঋণটা স্বাধীনতা বিকিয়ে দেয়ার মতো উদারতা ছাড়া আর কিসে পরিশোধ সম্ভব? এত দিন আকারে-ইঙ্গিতে বললেও আমাদের আইকিউ কম বিবেচনায় সরাসরি এই দাবিটাই তোলা হচ্ছে এখন সর্বোচ্চ মহল থেকে। তারা যেন বলতে চাচ্ছেনÑ ‘তোমাদের স্বাধীনতা আমাদের প্রেমের তাগিদ নয়, মানবতার প্রেরণাও নয় (এমনটি হলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম আর কাশ্মীরের স্বাধীনতা কবেই না দেয়া হতো?) নিছক বিনিয়োগ। সুতরাং বিনিয়োগের সুদ যা দিলে তাতে তুষ্ট নই, সময় হয়েছে এবার আসলটাই ফেরত দাও।’
কথাটা নিছক বানিয়ে বলা নয়, ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে এই দাবিটাই রেখে গেলেন মোদি। তার ভাষায় ‘ইতিহাসের বড় ভুলগুলো শোধরানোর সময় হয়ে গেছে’। আমাদের সুধী সুশীল বুদ্ধিজীবী মহল মোদির ইঙ্গিতটা বোঝলেন কিনা তা বোঝা গেল না। আমাদের কথা হলো, ‘ইতিহাসের বড় বড় ভুল’ বলতে মোদি যদি সিকিম ও কাশ্মীর দখল না বোঝিয়ে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন ইতিহাসের বড় বড় ভুলের কারণে বাংলা নয়, কেবল পাঞ্জাবও ভাগ হয়েছে, তা হলে সংশোধনের আবদার বা দাবিটা পাকিস্তান সফরে তিনি করলেন না কেন? তার মানে কী পূর্ব সীমান্তে সময় হলেও পশ্চিম সীমান্তে এখনও সময় হয়নি? তা হলে আমরাও কী বলতে পারি যে, একই রকম ভুলের কারণে আগরতলাও আজ ভারতের অংশ। তার সাড়ে তিন দিক ঘিরে আছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থান ছাড়াও ভাষা, কৃষ্টি কালচার, ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত বিবেচনায়ও দিল্লি বা গুজরাটের চেয়ে ঢাকা তাদের অনেক বেশি আপন। যোগাযোগের জন্য প্রয়োজন পড়ে না ট্রানজিট বা করিডোর। আর লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী ভুল সংশোধন করা গেলে বাংলাদেশের বুকচিরে ট্রানজিট বা করিডোর চিন্তা থেকে রেহাই পেয়ে যায় দিল্লি, সাথে সাথে সেভেন স্টিারের উৎপাত থেকেও মিলে যায় মুক্তি। তাহলে মোদি কি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজি? প্রধানমন্ত্রী মোদির ঢাকা সফরের পরপরই বিজেপির আরেক নেতার তথ্য প্রকাশ, ‘মুসলমানরা ভারত বিভক্তি চায়নি, কংগ্রেসের ভুলের কারণেই ’৪৭-এর বিভাজন’। তাহলে ভুল যারা করেছেন তারা তো দিল্লিতেই আছেন, ভুলের জন্য মোদি তাদের উঠবোস করালেই পারেন, ঢাকায় এসে অযাচিত প্রস্তাব কেন? মোদি বলবেন কি ’৪৭ ভুল হয়ে থাকলে আজও ভারতে সরকারি চাকরি, শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায় ব্রিটিশ ভারতের চেয়েও পিছিয়ে কেন? একবার তুলনা করে দেখবেন কি আমাদের বাংলাদেশের সাথে ’৪৭-এর আগে-পরের প্রতিটি সূচকে আমরা কতটা পিছিয়ে আছি? অবশ্যই সেই সৎসাহস হবে না মোদি বাবুর। তা হলে ’৪৭-এর বিভাজন ‘অশুদ্ধ’ বলার যুক্তিটা সংখ্যালঘু দলনের সুযোগটা অংশত হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ক্ষোভও জিঘাংসা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় কি, যখন খোদ মোদিরই রয়েছে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ পরিচিতি। আমেরিকার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন প্রার্থী স্বঘোষিত মুসলিমবিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় কামনায় ভারতীয় হিন্দুদের বিশেষ পূজা ও প্রার্থনার আয়োজন ইতিহাসের ‘ভুল’ শুদ্ধকরণের আলামত না ’৪৭-এর ঐতিহাসিক বাস্তবতারই স্বীকৃতি জ্ঞাপক?
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন কেমনÑএমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা-দিল্লির যে কোনো কূটনীতিক বলবেন, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অন্তরঙ্গ ও চমৎকার! অর্থাৎ আওয়ামী লীগের আদর্শিক মিত্র কংগ্রেসও এক্ষেত্রে যোজন দূরত্বে এক সময় দেখা হওয়া পথিকের মতো। অথচ দুই বিপরীত দর্শনে বিশ্বাসী দুই সরকার অনেকটা শাপ আর নেউলের মতো। মোদি আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক। আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে বিশ্বাসী এবং এ প্রশ্নে নাকি আপসহীনও। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ছাড়া উভয়ের মধ্যে বাহ্যত কোনো মিল নেই। এটি ঐক্যের জন্য কোনো নিয়ামক না হয়ে বরং বিরোধই বাধার কথা। অথচ মিত্রতার জন্য চাই কোনো না কোনো মৌলিক বা অভিন্ন ইস্যুতে অভিন্ন মত। মোদির মুসলিমবিদ্বেষ সর্বজন স্বীকৃত। তার দল অখ- ভারতে বিশ্বাসী। ‘এই অভিন্ন চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগও’Ñ এমনটি ভাবা আদৌ কী সম্ভব? ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ কংগ্রেস সরকারের বিদায় আর উগ্রপন্থি সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপির উত্থানে এ দেশে ৫ জানুয়ারির সংবিধান রক্ষার অসাম্প্রদায়িক সরকারটি বড় রকমের বিপর্যয়ে পড়ে যাচ্ছে এমন একটি শঙ্কা ছিল আওয়ামী লীগেও। সুতরাং তলে তলে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয় যেমনি ভাবছিল তারা, তেমনি বিরোধী জোটও বিজেপির বড় রকম উত্থানের অধীর প্রতীক্ষায় ছিল এই ভেবে যে, মোদির সরকার কংগ্রেস মিত্র ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আওয়ামী লীগের পরিবর্তে তাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই আগ্রহী হবে এবং এতে করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নমনীয় হতে বাধ্য হবে। সুতরাং অভিনন্দন জানানোর প্রতিযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকারকে খানিকটা পিছিয়ে পড়তেও দেখা গেছে। আবার বামপন্থিদের কারো কারো এদেশীয় মৌলবাদীদের সাথে সখ্যের সম্ভাবনা চিন্তা করে ফের নিজামীদের উত্থান চিন্তায় ভীষণভাবে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল যেন। অন্যদিকে অতি উৎসাহীদের কেউ কেউ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে শান্তি বাহিনীকে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশের আদলে পতিত কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়ার বিষয়েও এক রকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন। সব আশা সংশয় উড়িয়ে দিয়ে মোদি প্রমাণ করে দিলেন তারা আসলে তালে ঠিক। বিজেপির বিজয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না এমন ঘোষণার পরও ৫ জানুয়ারির সরকারের সংশয় কাটছিল না এ জন্য যে, এটা বাবুর কথার কথা কিনা? সব বিভ্রান্তি নিরসন করে মোদি বাবুর ৫ জানুয়ারির সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের ঘোষণায় বিস্ময় হতবাক আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয়ই। বিশ্ব যার বৈধতা দিল না সাম্প্রদায়িক মোদি জনমত উপক্ষো করে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিলেন কোনো ধরনের দর কষাকষি ছাড়াই। এটা সম্ভব হলো কোন স্বার্থের টানে যেখানে আওয়ামী লীগ, কংগ্রেস আর বিজেপি এক। মসজিদ ভাঙা, সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে সমগ্র বিশ্ব মোদি ও তার দলের প্রতি ধিক্কার জানালেও অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগকে কোনো দিন সোচ্চার দেখা যায়নি বিজেপির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত জুলুম-অত্যাচারের জন্য সবসময় আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে এলেও বিজেপি বা কংগ্রেস এ জন্য কখনো অভিযোগের তর্জনী আওয়ামী লীগের দিকে না তুলে ‘কেষ্টা বেটা’কেই নির্দেশ করতে দেখা গেছে সব সময়।
সুতরাং এদেশের ৫ জানুয়ারির সরকার ক্ষমতায় থাকা না থাকার ব্যাপারে যেন ধরেই নিয়েছে জনগণ কী-ছার, ভারতের আশীর্বাদ যত দিন আছে ক্ষমতা থেকে নামায় কে? সুতরাং দৃপ্ত ঘোষণা ২০১৯-এর আগে কোনো নির্বাচন নয়, আর সেই নির্বাচনও হবে ৫ জানুয়ারির আদলেই। অতঃপর একই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ হয়তোবা যত দিন চন্দ্র-সূর্য থাকে! সুপ্রতিবেশীর দাবি নিয়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বরাবরে যে প্রশ্নটি রাখতে ইচ্ছে করে তা হলোÑ আজীবন নয়, রোজ কিয়ামত পর্যন্ত বিজেপির ক্ষমতায় থাকার শর্তে তার ভারতে ৫ জানুয়ারি মডেলের নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে তিনি রাজি হবেন কী? আমাদের আস্থা, মোদি কেন ভারতের কোনো পতিত রাজনীতিকেরও এমন ঘৃণিত প্রস্তাবে সায় দেয়ার কথা নয়। মোদি তথা ভারতীয়দের শ্রেষ্ঠত্ব বোধ করি এখানেই। ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য আমরা যত সহজে দেশপ্রেম বিবেক ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিতে পারি মোদিরা তা পারেন না। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে গণতন্ত্রী ভারতের জন্য গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ কি প্রয়োজন নয়? নিজের সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে যে প্রতিবেশী ছেলেটিকে টি স্টলে চাকরি দেয়ার কুপরামর্শ দেয় এমন কূটকৌশলীকে সুপ্রতিবেশী বলবে কে? সুতরাং ফেনসিডিল নয়, বিভাজনের কূট বুদ্ধিও নয়, সম্ভব হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হোন, শ্মশানযাত্রায় নয়। এটি ভারতের মর্যাদা, নিরাপত্তা এবং লালিত গণতান্ত্রিক চেতনারও পরিপূরক। ’৭১-এর সহযোগিতার সুফল বাংলাদেশের জনগণ পরিপূর্ণ রূপেই পেতে চায়। তাই আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন পরোপকারে সহযোগী হওয়ার সুযোগ এখনো তিরোহিত নয়। তবে প্রথম পদক্ষেপটা নেয়ার অবস্থান সঙ্গত কারণেই ভারতের। প্রতিবেশীর দুর্বলতাকে হাত করে বাজিমাত করার কুচিন্তা গণতন্ত্রী বৃহৎ ভারতের জন্য আদৌ মর্যাদার বিষয় হতে পারে কী? বাংলাদেশে ভারতবিরোধী চেতনা অনুধাবনে সক্ষম কেউ কী নেই বিশাল ভারতে? সিটমহলবাসীর প্রায় সাত দশকের মানবিক সমস্যা নরেন্দ্র মোদির আমলেই সমাধান হতে দেখলাম আমরা এবং অতি সহজেই। সুতরাং আমরা মনে করি, পরস্পরের শ্রদ্ধা ও ক্ষমতানীতির পাশাপাশি কূটিলতা পরিহার ভারতবিরোধী চেতনা অবসানে হতে পারে প্রজ্ঞাসম্মত প্রতিকার। দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি বৃহত্তর স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিষয়টি ভেবে দেখবেন এটি বোধকরি দুরাশা নয়। অসঙ্গতও নয়।
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন