বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নতুন করে আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক কথায় বলা যায় প্রেক্ষাগৃহগুলোতে নতুন সিনেমার খরা চলছে। নিকট অতীতে খেয়াল করলে দেখা যাবে ঈদুল ফিতরের পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু নতুন সিনেমার কোনো খবরই নেই। গত ঈদে শাকিব খানের সিনেমা ‘পাসওয়ার্ড’ মুক্তি পেয়েছে। ইতোমধ্যে সিনেমাটি বেশ ভালো ভাবেই গ্রহণ করেছেন দর্শক। যদিও সিনেমাটির বিরেদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু আর কতো দিন? সারা বছর তো আর দর্শক এক সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসবেন না। আর সারা বছর এই এক সিনেমা চালিয়ে প্রেক্ষাগৃহ মালিকেরাও মুনাফার মুখ দেখবেন না। তাই নিজ দায়িত্বেই রাজধানীর অর্ধশত বছরের পুরোনো প্রেক্ষাগৃহ ‘মধুমিতা’র মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ওপার বাংলা থেকে সিনেমা আমদানি করছেন।
কয়েকদিন আগে টালিগঞ্জ থেকে ওপার বাংলার সুপারস্টার জিৎ অভিনীত ‘বচ্চন’ আমদানি করা হয়েছে বলে ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেছেন প্রদর্শক সমিতির এই নেতা। সিনেমাটি বর্তমানে সেন্সর বোর্ডের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদের মালিকানাধীন ‘ইন উইন এন্টারপ্রাইজ’ ডিস্টিবিউশন কোম্পানি জিতের ‘বচ্চন’ আমদানি করেছে।
ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহ মধুমিতার এ মালিক জানিয়েছেন, ‘অচিরেই সিনেমাটির সেন্সর ছাড়পত্র আমাদের হাতে পৌচ্ছাবে। ইচ্ছা আছে আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই সিনেমাটি প্রদর্শনের।’
সাফটা চুক্তির মাধ্যমে বাপ্পির ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’-এর বিপরীতে আনা হয়েছে জিতের ‘বচ্চন’। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেই ধারণা করছেন টালিগঞ্জের জিৎ হয়তো এদেশের দর্শকদের মন জয় করবেন। কারণ ওপারের মতো এপারেও জিতের অগনিত ভক্ত রয়েছে। যে কারণে ‘বচ্চন’ হয়তো এদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো থেকে ভালো ব্যবসাও এনে দেবে আমদানিকারককে। তবে বাপ্পি চৌধুরী অভিনীত যে সিনেমাটি দেশেই ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়েছে সেটা ভারতে গিয়ে কি আর ব্যবসা করবে! বিষয়টি অনেকেই আবার সিংহ ও বিড়ালের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলছেন, আসছে সিংহ আর যাচ্ছে বিড়াল।
এদিকে সাফটা চুক্তি এবং চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়ে ইনকিলাবের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা যে কিভাবে দিন পার করছি সেটা আমরাই জানি। এছাড়া অন্য কারোর জানার কথাও নয়। একবার ভেবে দেখেন তো একটি সিনেমা দিয়ে কিভাবে সারা বছর পার করা সম্ভব! মানছি শাকিবের সিনেমা ভালো ব্যবসা করে। এবং গত ঈদের সিনেমাটিও ভালো ব্যবসা করেছে। তাই বলে তো আর এই এক সিনেমার ব্যবসা দিয়ে সারা বছর কর্মকর্তা, কর্মচারিদের মেইনটেইন করা সম্ভব নয়। নিজেদের লাভ তো পরের কথা!’
নওশাদ আরও বলেন, ‘সাফটা চুক্তিতে মাঝে মধ্যে কয়েকটি সিনেমা আনা হয়। তবে আমি মনে করি সাফটা চুক্তি বলে কোনো ধরনের চুক্তিই রাখা উচিত নয়। কারণ এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মধ্যে কিন্তু বেশি ফারক নেই। সরকার যদি কোনো ধরনের চুক্তি না রেখে স্বাধীন করে দিতো, তাহলে আমাদের সবার অবস্থায় অনেক বেশি ভালো হতো। কিন্তু এই বিষয়টি কেউ বুঝতে পারছে না। অথচ দিনে দিনে এই শিল্পটি চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে। লোকসান গুনতে গুনতে দেশের বিখ্যাত সব হল আজ বন্ধ। যেগুলো আছে সেগুলোর অবস্থাও বেশি ভালো নয়। হয়তো এভাবে চলতে থাকলে এগুলোও কোনো একদিন বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ধ্বংসাত্মক সব চুক্তি দিয়ে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে আরো রসাতলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে হলে এদেশ এবং ওদেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। মার্কেট বাড়াতে হবে। তাহলেই হয়তো প্রযোজকের পুঁজি ফেরত আসবে এবং প্রতিনিয়তই তারা নতুন নতুন সিনেমা নির্মাণ করবেন। প্রেক্ষাগৃহগুলোতেও দর্শক ফিরবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন