বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নিজের ছায়া হয়েই রইলেন তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ট্রেন্ট ব্রিজে তামিম ইকবালকে বোল্ড করে মিচেল স্টার্কের উদযাপনটা বেশ মনে পড়ে। চতুর্থ স্টাম্পে করা অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারের ঘণ্টায় ১৪৬ কিলোমিটার গতির বলটা তামিম ‘প্লেড অন’ হয়েছেন। বোল্ড করে তামিমের দিকে মুখ টিপে এমনভাবে হাসছিলেন স্টার্ক, যেন বলতে চাইছিলেন, ‘এভাবে কেউ আউট হয়!’

ব্যাটে লেগে বল স্টাম্পে চলে এলে কখনো ভাগ্যের দোষ দেওয়া যায়। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে কী বলা যায়? তামিম গতকালও প্লেড অন হলেন। বাঁহাতি ওপেনারের টেকনিকে সমস্যা? যদি এদিনও তিনি ভাগ্যকে দোষ দেন, তাহলে টানা ছয় ম্যাচে বোল্ড হওয়াকে কী বলবেন? তামিমের ১২ বছরের ক্যারিয়ারেই তো এমন ঘটনা ঘটেনি! বিশ্বকাপে ট্রেন্ট ব্রিজে স্টার্কের বলে বোল্ড হওয়া দিয়ে শুরু। পরে আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান- টানা চার ম্যাচে বোল্ড হয়েছেন তামিম। টানা দুই ম্যাচে বোল্ড হলেন শ্রীলঙ্কা সফরেও।

ব্যাট হাতে বাজে সময় কাটাচ্ছিলেন। তবুও কলম্বোতে গতকালের শুরুটা ছিল তামিমময়। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে চার মেরেছেন। নুয়ান প্রদীপকে জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মেরে পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিতে। মনে হচ্ছিল ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙবেন আজ। কিন্তু হলো না। ইনসাইড-এজ হয়ে তামিম ৩১ বলে ১৯ রান করে প্যাভিলিয়নে।

ইসরু উদানার বলে আহামরি কোনো গতি ছিল না। ধীরগতির উইকেটে বাঁহাতি পেসার বোলিং করছিলেন লাইন ও লেংথ মেনে। অফ স্টাম্পের বাইরে ফোর্থ স্টাম্প বরাবর বল করে তামিমকে বারবার খেলানোর চেষ্টা করছিলেন। সেই ফাঁদেই তামিম আটকা পড়লেন। বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে বল টানলেন উইকেটে। লেগ স্টাম্পে বলের আঘাত। ইনসাইড-এজ হয়ে তামিম সাজঘরে।

বিশ্বকাপ থেকেই তামিম আটকা ব্যর্থতার বৃত্তে। তার ব্যাটিং, আউটের ধরনে স্পষ্ট, টাইমিংয়ে গড়বড় করছেন দেশসেরা ওপেনার। শেষ ছয় ইনিংসের প্রতিটিতেই বোল্ড। ইনসাইড-এজ হয়েছেন তিনবার। বাকিগুলোতে হয় আগে ব্যাট চালিয়েছেন, না হয় পরে। উইকেট বিলিয়ে এসেছেন নিজের ব্যর্থতায়।

কলম্বোতে প্রথম ওয়ানডেতে মালিঙ্গা তার উইকেট উপড়ে ফেলেছিলেন দারুণ এক ইনসুইং ইয়র্কারে। তাতে কিছু করার ছিল না। গতকালও শুরুতে তাকে এই পরীক্ষায় ফেলেছিলেন প্রদীপ। ভাগ্য ভালো, ব্যাট সময়মতো নামাতে পেরেছিলেন। নয়তো এদিনও ফিরতে হতো সিঙ্গেল ডিজিটে। দেশসেরা ওপেনার দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তার থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশায় ছিল দল। অধিনায়ক তামিম সেই প্রত্যাশা মেটাতে পারলেন না।

ক্যারিয়ারের ২০১ ইনিংসে তামিম আউট হয়েছেন ১৯৩ ইনিংসে। নট আউট থেকেছেন ৮টিতে। ৩১ বার আউট হয়েছেন বোল্ড। ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৮৯ ইনিংসে। উইকেটের পেছনে ৩৮ ইনিংসে। এ ছাড়া এলবিডবিøউ ১৪, রান আউট ১৫ ও স্টাম্পড হয়েছেন ৬ বার।

এফটিপি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কা সফরের পর এ বছর আর ওয়ানডে ক্রিকেট খেলবে না বাংলাদেশ। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে ১৭ ওয়ানডে। এ বছর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার ওপরে সাকিব আল হাসান, ১১ ম্যাচে ৯৩.২৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরি, ৭ ফিফটিতে করেছেন ৭৪৬ রান। ১৭ ওয়ানডেতে ৫৩.১৪ গড়ে এক সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৭৪৪ রান করে দুইয়ে মুশফিক। তিনে আছেন তামিম, সমান ম্যাচে করেছেন ৪৪০ রান। এ বছর রানসংখ্যায় সবার ওপরে থাকা সাকিবের সঙ্গে তামিমের পার্থক্য এতটাই। গড়টা শুনে বাঁহাতি ওপেনার অস্বস্তিই বোধ করবেন- ২৫.৮৮। স্ট্রাইকরেটও খুব একটা উজ্জ্বল নয়- ৭২.২২। ওয়ানডেতে তামিম তিন অঙ্কের দেখা পান না এক বছর হয়ে গেল। ফিফটিও কেবল মাত্র একটি!

কী হয়েছে তামিমের- এ প্রশ্ন গত কিছুদিনে এতবার হয়েছে, নতুন করে তোলাটাও বাহুল্য। বিশ্বকাপের পর তামিম দাবি করেছেন, তাঁর টেকনিকে কোনো সমস্যা নেই। দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি নাকি বলেছেন, টেকনিকে সমস্যা হলে তাঁকে বলতেন। টানা ৬ ম্যাচে বোল্ড হওয়া, বারবার ইয়র্কারে ভারসাম্য রক্ষা করতে না পেরে উইকেটে ভূপাতিত হওয়া, বল স্টাম্পে টেনে আনা- টেকনিকে ত্রুটি একেবারেই নেই, সেটি কি এখন আর বলা যায়?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন