উত্তর: আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার বাইতুল্লাহ পর্যন্ত যাওয়ার সামর্থ আছে, আল্লাহর জন্য সে ঘরে হজ্জ করা তার উপর ফরজ। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭।)
পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। ইবাদতের মধ্যে হজের এমন একটি বৈশিষ্ট আছে, যা অন্য কোন ইবাদতে নেই। ফিকহের পরিভাষায় ইবাদত দুই প্রকার। ইবাদাতে বাদানিয়া এবং ইবাদাতে মালিয়া। অর্থাৎ, শারীরীক ইবাদত এবং আর্থিক ইবাদত।
অনেক ইবাদত শারীরীকভাবে সম্পন্ন করতে হয়। এখানে আর্থিক কোন বিষয় জড়িত থাকে না। যেমন নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি। আরেক ধরণের ইবাদত আছে, যা অর্থ দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন দান-সদাকাহ, জাকাত, ফিতরা ইত্যাদি। কিন্তু হজ এমন এক ইবাদত, এখানে যেমন অর্থ ব্যয় করতে হয়, তেমনি শারীরীক পরিশ্রমও করতে হয়। যে কারণে এটি একই সঙ্গে শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের মধ্যে পড়ে। তাই প্রাপ্তির দিক থেকে, সওয়াবের দিক থেকে হজের মর্যাদা অনেক ওপরে। (ফিকহুল হজ ওয়াল উমরাহ।) হজের ফজিলত অনেক বেশি। অফুরন্ত সাওয়াব, রহমত, বরকত আর মর্যাদায় পরিপূর্ণ মহান ইবাদত পবিত্র হজ। যাদের জীবনে অন্তত একবার হলেও হজ পালন নসিব হয় তারা খুবই সৌভাগ্যবান মানুষ। মুমিন জীবনে পবিত্র হজের চেয়ে মহান আর কোন ইবাদত আছে কী? হজের মাধ্যমে মুমিনের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মাবরুর হজের বিনিময় হল জান্নাত। (বুখারী ও মুসলিম।) হজ্জের ফযীলত এত বেশি যে, এ পবিত্র ইবাদত হাজীকে গুনাহমুক্ত পবিত্র নতুন জীবন এনে দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করল এর মধ্যে কোন অশ্লীল ও মন্দ কাজ করল না, সে এমন নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরল যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় প্রসব করেছে। (বুখারি ও মুসলিম।)
হজের ফযীলত এত বেশি যে, শয়তান তা দেখে হতাশ হয়ে পড়ে। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, আরাফাতের দিনের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাহকে অন্য কোন দিনই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় না। (মুসলিম।) হজরত তালহা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আরাফাতের দিন শয়তানকে সর্বাধিক হীন, পেরেশান, ইতর ও রাগী অবস্থায় দেখা যায়। এটা এ জন্য যে, এ দিন আল্লাহর অফুরন্ত রহমত বর্ষণ ও বান্দাহর বড় বড় গুনাহ মাফের বিষয়টি শয়তান স্পষ্টভাবে নিজের চোখে দেখে থাকে। (তারগিব ওয়াত তাহরিব।)
হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, একজন হাজী তার পরিবারের ৪০০ লোকের বিষয়ে সুপারিশ করতে পারবেন। আর হাজী তার গুনাহরাশি থেকে এমনভাবে বের হয়ে নিষ্পাপ হয়ে যান, যেমন তার মা তাকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ট করেছিলেন। (মুসনাদে বাযযার।) হাজী যখন ইহরাম পরে এ মহান ইবাদতে মশগুল হন তখন তার সম্মানার্থে চারপাশের সৃষ্টি জগতও অংশগ্রহণ করে। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কোন মুসলিম ইহরাম পরে তালবিয়াহ পড়তে থাকে তখন ডান ও বাম দিকের সব পাথর, বৃক্ষ, মাটিকণা এককথায় জগতের সবকিছু হাজীর সঙ্গে তালবিয়াহ পড়তে থাকে। (তিরমিজি।)
হজরত বুরাইদা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, হজের অর্থ ব্যয় করা আল্লাহর পথে দ্বীনের পথে জিহাদের পথে অর্থ ব্যয় করার সমান। এতে ৭০০ গুণ সওয়াব রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ।) অন্য হাদীসে এসেছে, তোমরা হজ ও উমরাহ একসঙ্গে আদায় কর। কেননা এ দুটো দারিদ্রতা ও পাপকে দূর করে দেয়। যেমন রেত স্বর্ণ, রৌপ্য ও লোহা থেকে মরিচা দূর করে দেয়। (তিরমিজি।) হজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন হাজীর সাথে তুমি সাক্ষাত কর তখন তাকে সালাম দাও এবং করমর্দন করো। তার ঘরে প্রবেশ করার আগে তোমার গুনাহ মাফের জন্য তাকে দোয়া করতে বল। কেননা হাজী নিজে গুনাহ মুক্ত হয়ে এসেছে। সে দোয়া করলে তার দোয়া কবুল হওয়ার আশা করা যায়। (মুসনাদে আহমাদ।)
এভাবে অসংখ্য হাদিসে পবিত্র হজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজ সকল দিক থেকে এক অনন্য ইবাদত। বান্দাহকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আল্লাহভিরু এবং ছওয়াবের অধিকারী বানাতে হজের মত আর কিছু নেই। তাই সামর্থ থাকা সত্তেও হজ না করা বা বিলম্ব করা বড়ই বোকামী। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে পবিত্র হজে বাইতুল্লাহ এবং জিয়ারতে মদিনাতুল মুনাওয়ারা নসিব করুন। আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন: মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন