রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দুই
কুরবানী শুধু ভোগ বিলাস আর পেট পুরে গোশত খাওয়ার জন্য নয়, বিশাল পশু ক্রয় করে ফেইস বুকে ছবি দেয়ার জন্য নয়, নিজেকে সমাজের বড় কুরবানি দাতা হিসাবে পরিচিত করার জন্য নয়, এলাকায় সুনাম সুখ্যাতি অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য নয় বরং মহান রবের হুকুমের কাছে নিজের আমিত্ব কর্তৃত্ব গর্ব অহংকার ভুলে গিয়ে জীবনের সকল কিছু তাঁর রাহে ব্যয় করার মাধ্যমে মনিবের সাথে গোলামের নিবীড় সম্পর্ক গড়ে তোলার অতি উত্তম উপকরণ মাত্র। কুরবানীর মাধ্যমে প্রতিটি মুমেন মুসলমান নতুন করে উজ্জিবীত হয়ে এই শপথ নিবে যে, সকল প্রকার অন্যায় অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে নিজের জান মাল আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দেবে এতেই মুমেনের সফলতা!

কুরবানীতে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক কল্যাণ ও উপকার নিহীত রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে যখন কোন সফলতা আসে তখন একজন মুসলমানের করনীয় হচ্ছে যার অসীম করুণায় সফলতা পেল তাঁকে থেকংস বা ধন্যবাদ দেয়া কৃতজ্ঞতা আদায় করা, শুকরিয়া জ্ঞাপন করা, মহান মালিকের কুদরতী পা’য়ে সিজদা দেওয়া এবং তাঁর নামে পরিবার পরিজনের জন্য কিছু ব্যয় করা, পাড়া প্রতিবেশীদের জন্য সমাজ ও দেশের জন্য কিছু উৎসর্গ করা কুরবানী এর উত্তম নমুনা। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত হচ্ছে-“হে নবী আমি অবশ্যই আপনাকে (নিয়ামতে পরিপূর্ণ) কাওসার দান করেছি। অতএব তোমার মালিককে স্মরণ করার লক্ষ্যে তুমি নামাজ পড়ো এবং তাঁরই উদ্দেশ্যে তুমি কুরবানী করো। সুরা কাওসার আয়াত (১-২)

প্রিয় জন্মভূমি সোনার বাংলাদেশ সহ বিশে^র প্রায় সকল দেশে সকল মানুষের মাঝেই দেখা যায় যে যখন কোন আনন্দ বা খুশির বিষয় থাকে, তাহলে মিষ্টি বিতরণ, মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ, দান সদকা করতে দেখা যায়। বেশীরভাগ সময়ে জয়ের আনন্দে রং ছিটিয়ে আশ পাশের এলাকায় হৈ হুল্লা করে, আনন্দ মিছিল বের করে, পথ যাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে খুশির সংবাদ জানান দেয়া হয় যা মোটেই কাম্য নয়, কারণ এতে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। কখনো কখনো খেলার মাঠে জয় লাভের পর মহান মালিক কে সিজদা করতে দেখা যায়, যদিও তুলনামূলক ভাবে এই অভ্যাসটি অনেক কম। আসলে তাই করা উচিৎ। মিষ্টি মুখ করানো, দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ ও অতি উত্তম কাজ ।

কুরবানীর পশুর রক্ত মাংশ এর আকার আকৃতি ইত্যাদি আল্লাহ তায়ালার কোন-ই প্রয়োজন নেই বরং এর সবকিছু-ই আমাদের জন্য। আমাদের কোন না কোন উপকারার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। যখন কোন চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, প্রবাসী অথবা অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত নারী পুরুষ কোন পশু কুরবানী করতে চায় কিন্তু তার পশু নেই। সে বাজার হতে যখন পশু ক্রয় করে তখন পরোক্ষভাবে সমাজের অপরাপর পেশায় নিয়োজিত সকলের প্রতি তার অবদান শুরু হয়ে যায়। যা ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রের অগণিত কল্যাণ বয়ে আনে। শুধু কুরবানীতেই হালাল পশু জবাই হয়না বরং দৈনন্দিন জীবনে মানুষের জীবন ধারনের এক অসীম প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে পশু পাখী জীব জন্তু। যার কোন না কোন অংশ আমাদের উপকারে আসছে। উন্নত মানের জুতা, মানি ব্যাগ, বেল্ট তৈরীতে পশুর চামড়াই প্রধান উপাদান। মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরীতে দুধের বিকল্প নাই। আমাদের শরীরে পুষ্টি যোগাতে, বিয়ে-শাদী, শিশুদের আকীকা, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে হালাল পশুর গোশতের বিকল্প আর কিছুই নাই। তাহলে অতি সহজেই বুঝা গেল যে শুধু কুরবানীতেই পশু জবাই নয় বরং প্রতি নিয়তই মানুষের কল্যানে পশু জবাই আল্লাহ বৈধ করেছেন।

অপচয় অপব্যয় ব্যতীত যদি বৈধ পথে মানবতার কল্যাণে পশু জবাই করা হয় কুরবানী দেয়া হয় তা হলে নি:সন্দেহে তা ছওয়াবের কাজ,পূণ্যের কাজ মানবতা মনুষত্বের কাজ,সমাজ সেবা মূলক কাজ। যদি কেহ সামর্থ রাখে তাহলে ভাল কাজ প্রতি মুহূর্তে করলেই সমস্যা কোথায় ? যদি কুরবানী মানুষের ক্ষতির কারণ হতো তাহলে আল্লাহ এ বিধান দিতেন না। যারা কুরবানীতে পশু নিধনের দোহাই দিয়ে জাতীয় আয়ের জন্য মায়া কান্না করে, তারা নিজেরাই জাতীয় দায়! এ দেশের বোঝা! দেশ জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর শত্রু। তারা মূলত মহান আল্লাহর বিধান কে উপেক্ষা করতে চায়! তারা মুসলমান নামের কলঙ্খ! নকল মুসলমান! মুসলমান উম্মাহর পোড়াহ! তাদের কে সামাজিক ভাবে বয়কট করা দরকার । সরকারের উচিৎ যারা এ জাতীয় বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের কে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির সম্মুখীন করা!

আর কুরবানী হচ্ছে মুসলিম জাতীর পিতা হযরত ইব্রাহীম আ: এর সুন্নত। যা আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় একটি আমল। কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে পৌছে যায়। কুরবানী কৃত পশুর প্রতিটি লোমের বিনিময়ে একটি করে নেক দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md.Faiz Ullah Nuri. ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:০০ পিএম says : 0
খুব সুন্দর দলিলে লিখে মুমিনীনদের কল্যাণ করা হয়েছে।অসংখ্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন