১৭৫৭ সালে পলাশির পাতানো যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইংরেজরা। এর মধ্য দিয়ে ভারত উপমহাদেশে ইংরেজ সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হয়। ১৯০ বছর শাসনের পর ইংরেজরা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে দেশের পথ ধরে। তবে ভারত শাসন ও বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণের এই সুদীর্ঘ সময়ে ইংরেজদের প্রথমে খন্ড যুদ্ধ ও পরে রাজনৈতিক আন্দোলনের মোকাবেলা করতে হয়েছে। এটা ঠিক যে, ভারতকে স্বাধীন করার সকল সশস্ত্র তৎপরতা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করলেও রাজনৈতিক সংগ্রামের কাছে শেষ পর্যন্ত তারা হার স্বীকার করতে বাধ্য হয়। ইংরেজরা ভারতে দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের সম্মুখীন হয়েছিল। একটি কংগ্রেস দল (প্র.১৮৮৫), অন্যটি মুসলিম লীগ (প্র.১৯০৬)। এ দুটি দল প্রথমে ইংরেজ বিরোধী স্বাধীনতা লাভের আন্দোলনে একমত থাকার পর চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে লক্ষ্য ও আদর্শে পৃথক হয়ে যায়। কংগ্রেসের লক্ষ্য হয় ভারত আর মুসলিম লীগের লক্ষ্য হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এর জন্য দু’ দল বা তাদের নেতাদের কাউকে নয়, লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে বুকের রক্ত দিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে কতজন হিন্দু আর কতজন মুসলমান ছিলেন, সে সংখ্যা কেউ নিরুপণ করেনি।
উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে, যাকে সাধারণভাবে ভারতভাগ বলা হয়ে থাকে, অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন হচ্ছে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’। দিনটি ছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট। এ দিনটিকে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ও বলা হয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অনেক হিন্দু রাজনীতিক-লেখক দিনটিকে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ডে নামেও আখ্যায়িত করেছেন। তবে বাংলাভাষী হিন্দুমাত্রেই (হঠাৎ কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া) এটিকে পরিকল্পিতভাবে হিন্দু হত্যার দিন বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আর তাদের কাছে এ হত্যার ‘খলনায়ক’ হচ্ছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। আজো তারা এ জন্য সোহরাওয়ার্দিকে প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করে। যাহোক, ১৬ আগস্টে সৃষ্ট হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তিনদিন প্রচন্ড ভয়াবহতাসহ দিন সাতেক চলে। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী নামিয়ে ও দেখামাত্র গুলি চালিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এই দাঙ্গার পর ভারত বিভাগ অনিবার্য হয়ে ওঠে।
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কিন্তু কোনো সহিংসতা বা ঘোষিত দাঙ্গার দিন ছিল না। এ দিনটি সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে যে, ‘১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশনের একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমান প্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের ১৬ অগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের (হরতাল) ডাক দেয়। এই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান ও এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন।’ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ‘এ কলকাতা দাঙ্গায় মুসলমানদের মধ্যে প্রাণহানি অনেক বেশি হয়।’
বস্তুত এ দিনটি সম্পর্কে কোনো হিন্দু লেখক এবং একশ্রেণির হিন্দুঘেঁষা সোহরাওয়ার্দি বিরোধী মুসলিম লেখক কারো কাছ থেকেই যখন নিরপেক্ষ বিবরণ মেলে না তখন আশ্চর্যজনকভাবে আমরা একজন মহান মানুষের নিকট থেকে এ ব্যাপারে অত্যন্ত নিরপেক্ষ ও নির্দ্বিধায় বিশ^াসযোগ্য একটি বিবরণ পেয়ে যাই। তিনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর গ্রন্থটির নাম ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু কারাগারের থাকা অবস্থায় রচিত এ গ্রন্থটি তাঁর শাহাদতের বহু বছর পর প্রকাশিত হয়। ইতিমধ্যে তা সর্বমহলে নন্দিত ও বিপুলভাবে প্রশংসিত গ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে। বলাবাহুল্য যে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে তিনি যা লিখে গেছেন তা শুধু তাঁর জীবন কথাই নয়- কালের দলিলও বটে। তাঁর দেখা, জানা ও শোনা বহু বিষয় এসেছে এ গ্রন্থে। তার মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র কথাও। সে সময় তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ও প্রখ্যাত মুসলিম ছাত্র নেতা হিসেবে বেকার হোস্টেলে অবস্থান করছিলেন।
১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে লিখেছেন, ‘জিন্নাহ সাহেব ১৬ আগস্ট তারিখে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ ঘোষণা করলেন। তিনি বিবৃতির মারফত ঘোষণা করেছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে এই দিবস পালন করতে।’ কিন্তু কলকাতার হিন্দু নেতারা বিষয়টিকে সেভাবে নিলেন না। এ বিষয়টি তৎকালীন বিশিষ্ট মুসলিম ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নজর এড়ায়নি। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার নেতারা এই প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিবৃতি দিতে শুরু করলেন।’
বলা দরকার যে, বঙ্গবন্ধু অসুস্থতাজনিত কারণে কিছুটা বিলম্বে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতায় এসে ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। তার আগেই তাঁর পরিচয় ঘটেছিল প্রখ্যাত দুই নেতার সাথে- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি। বিশেষ করে সোহরাওয়ার্দির সাথে তাঁর সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। সোহরাওয়ার্দি তরুণ শেখ মুজিবের মধ্যে আগামী দিনের বিপুল সম্ভাবনাময় নেতাকে দেখতে পেয়েছিলেন। যাহোক, কলকাতায় আসার পর তিনি সোহরাওয়ার্দির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শীর্ষ মুসলিম ছাত্রনেতা হিসেবে তখনি তার স্থান নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর লেখা থেকে জানা যায় তিনি কিভাবে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’র সাথে সম্পৃক্ত হলেন, ‘আমাদের আবার ডাক পড়ল এই দিনটি সুষ্ঠুভাবে পালন করার জন্য। হাশিম সাহেব (আবুল হাশিম) আমাদের নিয়ে সভা করলেন। আমাদের বললেন, তোমাদের মহল্লায় মহল্লায় যেতে হবে, হিন্দু মহল্লায়ও তোমরা যাবে। তোমরা বলবে, আমাদের এই সংগ্রাম হিন্দুদের বিরুদ্ধে নয়, ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, আসুন আমরা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এই দিনটি পালন করি।’ কিন্তু কোনো কোনো নির্ভরযোগ্য বিবরণ থেকে দেখা যায় যে, যা ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতিবাদের সংগ্রাম- মুসলিমদের প্রতি সন্দেহ পরায়ণ কলকাতার বিশাল হিন্দু গোষ্ঠী এবং স্বল্পসংখ্যক মতলববাজ উর্দুভাষী মুসলমানের হঠকারী মনোভাবের কারণে তা রক্তক্ষয়ী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় পরিণত হয়। যাহোক, ১৬ আগস্টের পূর্বাপর ঘটনা সম্পর্কে অবহিত, এর প্রত্যক্ষদর্শী ও বহু হিন্দু-মুসলিমের জীবন রক্ষায় ব্যাপক ভ‚মিকা পালনকারী শেখ মুজিব এ বিষয়ে অত্যন্ত নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও প্রত্যয়ী ভাষ্যে জানান যে, তারা ছাত্ররা নেতাদের নির্দেশ মোতাবেক হিন্দু ও মুসলিম মহল্লায় প্রচারণা শুরু করেন যে পাকিস্তান তাদের দাবি, আর এ দাবি হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়- ইংরেজের বিরুদ্ধে। কিন্তু হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেস প্রচারণা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়কে বুঝিয়ে দেয় যে এটা হিন্দুদের বিরুদ্ধে।
বঙ্গবন্ধু জানান যে, বাংলার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দি ১৬ আগস্ট শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোনো গোলমাল হলে মুসলিম লীগ সরকারের বদনাম হবে। সম্ভাব্য গোলযোগ এড়াতে তিনি দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। কিন্তু এতে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা ক্ষেপে যায়।
এদিন বিকেলে গড়ের মাঠে মুসলিম লীগের জনসভা আহবান করা হয়েছিল। ছাত্র-জনতাকে শোভাযাত্রা করে গড়ের মাঠে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকা মুসলমানদের উপর হিন্দুরা হামলা শুরু করে। খবর আসে, রিপন কলেজে ছাত্ররা পতাকা উত্তোলন করতে গেলে তাদের উপর হামলা হয়েছে। এরপর ওয়েলিংটন স্কোয়ারে মসজিদের উপর হামলা হয়। এ অবস্থায় তাঁর ভাষ্য, ‘আমরা চল্লিশ-পঞ্চাশজন ছাত্র প্রায় খালি হাতেই ধর্মতলার মোড় পর্যন্ত গেলাম। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা কাকে বলে এ ধারণাও আমার ভালো ছিল না। দেখি, শত শত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক মসজিদ আক্রমণ করছে। মৌলভী সাহেব পালিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। তাঁর পিছে ছুটে আসছে একদল লোক লাঠি ও তলোয়ার হাতে।’ ...‘বাধা দেয়া ছাড়া উপায় নেই।’ ... ‘এখন সমস্ত কলকাতায় হাতাহাতি মারামারি চলছে। মুসলমানরা মোটেই দাঙ্গার জন্য প্রস্তুত ছিল না, এ কথা আমি বলতে পারি।’ পরে লিখেছেন, ‘প্রথম দিন ১৬ আগস্ট মুসলমানরা ভীষণভাবে মার খেয়েছে, পরের দুই দিন মুসলমানরা হিন্দুদের ভীষণভাবে মেরেছে।’
আরো পরে তারা রওনা হন গড়ের মাঠের দিকে। জানতে পারেন কালীঘাট, ভবানীপুর, হ্যারিসন রোড, বড়বাজার সকল জায়গায় মুসলমানদের শোভাযাত্রার উপর হিন্দুরা হামলা করেছে। নানা জায়গায় আটকা পড়েছে মুসলমানরা। মিনিটে মিনিটে টেলিফোন আসছে, শুধু একই কথা, ‘আমাদের বাঁচাও, আমরা আটকা পড়ে আছি। রাতেই আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে শেষ হয়ে যাব।’
সেদিনের কলকাতার ছবি দু’ কথায় তুলে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু, ‘কলকাতা শহরে শুধু মরা মানুষের লাশ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে। মহল্লার পর মহল্লা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এক ভয়াবহ দৃশ্য। মানুষ মানুষকে এইভাবে হত্যা করতে পারে, চিন্তা করতেও ভয় হয়।’ ... ‘মনে হয়েছে মানুষ তার মানবতা হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়েছে।’
এই রক্তপাত, বর্বরতা, হিং¯্রতা, অমানবিকতা, পরস্পরের প্রাণ নেয়ার যে উন্মত্ত রিরংসা- সেই মানবতা হীনতার তিমিরান্ধকারে মানুষের হৃদয়ে মানবতার আলো ঝলক দিয়ে উঠেছে- হোক সে হিন্দু, হোক সে মুসলমান। তিনি জানিয়েছেন যে, তারা শুধু মুসলমানদেরই উদ্ধার করেননি, হিন্দুদেরও উদ্ধার করে হিন্দু মহল্লায় পাঠাতে সাহায্য করেছেন। তিনি এও বলেছেন, ‘একটা কথা সত্য, অনেক হিন্দু মুসলমানদের রক্ষা করতে যেয়ে বিপদে পড়েছে। জীবনও হারিয়েছে। আবার অনেক মুসলমান হিন্দু পাড়া-পড়শিকে রক্ষা করতে যেয়ে জীবন দিয়েছে। আমি নিজেই এর প্রমাণ পেয়েছি। মুসলিম লীগ অফিসে যে সব টেলিফোন আসত, তার মধ্যে বহু টেলিফোন হিন্দুরাই করেেেছ। তাদের বাড়িতে মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে। শীঘ্রই এদের নিয়ে যেতে বলেছে, নতুবা এরাও মরবে, আশ্রিত মুসলমানরাও মরবে।’
তাঁর লেখায় জানা যায়, ‘শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশনে হিন্দু ও মুসলমানদের ক্যাম্প করা হয়েছিল- যাতে বাইরে থেকে কেউ এসেই হিন্দু বা মুসলিম মহল্লায় না যায়। কারণ, মুসলমানরা হিন্দুদের মহল্লায় এবং হিন্দুরা মুসলমান মহল্লায় গেলে আর রক্ষা নাই।’ অন্যত্র লিখেছেন, ‘কলকাতার অবস্থা খুবই ভয়াবহ হয়ে গেছে। মুসলমানরা মুসলমান মহল্লায় চলে এসেছে, হিন্দুরা হিন্দু মহল্লায় চলে গিয়েছে।’
সেই ভয়াবহ দাঙ্গার দিনেও মানুষের বিচিত্র চরিত্র দেখেছেন সাহসী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘একদল লোককে দেখেছি দাঙ্গা-হাঙ্গামার ধার ধারে না। দোকান ভাঙছে, লুট করছে, আর কোনও কাজ নেই। একজনকে বাধা দিতে যেয়ে বিপদে পড়েছিলাম। আমাকে আক্রমণ করে বসেছিল। কারফিউ জারি হয়েছে, রাতে কোথাও যাবার উপায় নেই। সন্ধ্যার পরে কোন লোক রাস্তায় বের হলে আর রক্ষা নেই। কোন কথা নাই, দেখামাত্র শুধুই গুলি। মিলিটারি গুলি করে মেরে ফেলে দেয়। এমনকি জানালা খোলা থাকলেও গুলি করে। ভোরবেলায় দেখা যেত, অনেক লোক রাস্তায় গুলি খেয়ে মরে পড়ে আছে। কোনো কথা নেই- শুধুই গুলি।’
এই দাঙ্গায় শহীদ সোহরাওয়ার্দির ভ‚মিকা প্রসঙ্গেও লিখেছেন বঙ্গবন্ধু। তার কথায় বিদ্যমান বাস্তবতাই প্রকাশিত হয়েছে, ‘শহীদ সাহেব সমস্ত রাতদিন পরিশ্রম করছেন শান্তি রক্ষা করবার জন্য। কলকাতায় চৌদ্দ-পনের শত পুলিশ বাহিনীর মধ্যে মাত্র পঞ্চাশ-ষাটজন মুসলমান, অফিসারদের অবস্থাও প্রায় সেই রকম। তিনি লীগ সরকার চালাবেন কি করে?’
এ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দি আরো এক হাজার মুসলমানকে পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি করতে চান। কিন্তু তৎকালীন ইংরেজ গভর্নর আপত্তি করেন। সোহরাওয়ার্দি পদত্যাগের হুমকি দেয়ার পর অবশ্য গভর্নর রাজি হন। পাঞ্জাব থেকে যুদ্ধ ফেরত সামরিক বাহিনীর লোকদের এনে ভর্তি করেন সোহরাওয়ার্দি। এতে হিন্দুদের মধ্যে ভীষণ হৈ চৈ শুরু হয়। কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভার পক্ষের কাগজগুলো বেশি হৈ চৈ করে।
১৯৪৬-এর ১৬ আগস্টের কলকাতার দাঙ্গা পরবর্তীতেও সম্পূর্ণরূপে প্রশমিত হয়নি। তবে ১৯৪৭-এর ১৪ই আগস্ট উপমহাদেশে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় বা কথিত দেশভাগের ফলে তা স্তিমিত হয়ে আসে। (অবলম্বন: ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২, পৃ. ৬৩-৬৮)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন