শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

কাশ্মীরে নিজের পায়ে গুলি করছে ভারত

ভারতীয় সমালোচকদেরই প্রশ্ন মোদি কী ধরনের নেতা

দ্য ইকনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

একেকটা সপ্তাহ যাচ্ছে আর কাশ্মীরে ভারতীয় ধরপাকড়-নিপীড়ন চরম রূপ নিচ্ছে। সেখানকার ফোন লাইন, ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের আটক, সপ্তাহ তিনেক ধরে কারফিউ জারি করেও আশ মেটেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। তার সরকার ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকারকর্মীসহ কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে কারাবন্দি করেছে।

একটি নৃতাত্তি¡ক-ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর এই নিপীড়ন ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপির ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। প্রতিহিংসাপরায়ণ জাতীয়তাবাদের এই পরমানন্দদায়ক উচ্ছ¡াসের সঙ্গে মিল খুঁঁজতে হলে সেøাবোদান মিলোশোভিচের অধীনস্ত সেই সার্বিয়ার কথাই স্মরণ করতে হবে।

দ্য ইকোনমিস্ট জানায়, কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আনন্দে লম্ফঝম্ফ করছিল। কাশ্মীরিদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের খবর প্রকাশ করায় বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোকে সামাজিকমাধ্যমে তুলাধোনা করেছেন ভারতীয় অনেক সাংবাদিক। দেশটির গণমাধ্যমের সর্বসম্মত সম্মতি মোদি সরকারকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। গত সপ্তাহে রাহুল গান্ধীসহ বিরোধী নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলকে কাশ্মীর সফরে যেতে দেয়া হয়নি।
এই দায়মুক্তিই বলে দিচ্ছে, কীভাবে হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মতো এক অসাধারণ ক্ষমতায় সবাইকে প্রলুব্ধ করতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদি। কীভাবে তার সুর অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।

এদিকে অধিকাংশ বিদেশি সরকার ঘরোয়া সঙ্কট নিয়ে এতটাই বিক্ষিপ্ত চিত্ত যে, কাশ্মীরের ঘটনায় তারা মনোযোগ দিতে পারছে না। হিন্দুত্ববাদী মোদি ও তার অনুসারীরা সেই সুযোগটিও ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। ভারতকে একঘরে করতে পাকিস্তানের কঠোর প্রচারাভিযানও ব্যর্থ হয়েছে।

কাশ্মীর পরিস্থিতি এখনও অবনতির দিকে যাচ্ছে। ভারতের শুভাকাক্সক্ষীদের প্রশ্ন- মোদি নিজের ও তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী অনুসারীদের জন্য অবারিত ক্ষমতার অধিকারী হচ্ছেন। ঠিক তখন তা একটি যৌক্তিক ও স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত যে দাবি করছে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিনা?
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাশ্মীর নিয়ে যে খবর ছাপা হচ্ছে, তা সমানভাবে ভারতীয় সরকারের সমালোচনামূলক। বিশেষ করে কাশ্মীরের পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিক বলে ভারতের সুস্পষ্ট মিথ্যা দাবি নিয়ে এই সমালোচনা হচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরেও একই দাবি করা হয়েছে।

কাশ্মীরের সড়কগুলোতে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সেনাদের উপস্থিতির ছবি প্রথম পাতায় প্রকাশ করার মানে দাঁড়ায়, মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্যটি কার্যত সামরিক দখলদারিত্বের অধীনে।
কাশ্মীরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে যাচ্ছেন বলে যে ভাষ্য মোদি দিয়েছেন, তাও অদৃশ্যমাণ এবং স্পষ্টত প্রতারণামূলক। ভ‚স্বর্গ বলে খ্যাত রাজ্যটির লেখক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকরা তাদের ইতিহাস ও ভাগ্য নিয়ে বিশ্বের দর্শকদের এমন জ্ঞানই দিচ্ছেন।

এসব সমালোচনাকে অপ্রাসঙ্গিক ও অসহায় বলে খুব সহজেই সমালোচনা করা সম্ভব। কিন্তু এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে, যখন ভারতীয় রাজনীতি ও অর্থনীতির অনেক কঠিন সমালোচকরা প্রশ্ন ছুড়ছেন যে মোদি কী ধরনের নেতা।
অর্থনৈতিক উপাত্ত কিংবা পাকিস্তানের ভ‚খÐের ভেতরে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দম্ভ ভারতের বাইরে নিবিড় পর্যবেক্ষণের পাত্তা পাচ্ছে না।

কিন্তু তার নজরদারিতেই মুসলমানদের পিটিয়ে হত্যার ঘটনা মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের উৎপত্তি নিয়ে ১৯২০-এর দশকে ইউরোপীয় ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের মতোই সবার মনোযোগ টানতে পেরেছে।
খবর ও বিশ্লেষণে লক্ষণীয়ভাবেই ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভøাদিমির পুতিন, জেইর বোলসোনারো ও রদ্রিগো দুতার্তের মতো লোক-খেপানো রাজনীতিবিদদের দলে মোদিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না।

এমনকি দুর্বৃত্ত দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিতি পাওয়া পাকিস্তানও মোদি সরকারকে ফ্যাসিবাদী ও বর্ণবাদী বলে আখ্যায়িত করার মতো আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে।
২০০২ সালে মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার কলঙ্ক মুছতে মোদি পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলে যে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটিও এখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর পশ্চিমাদের অনেককে তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদকে উসকে না দিয়ে তিনি ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চান। সে সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চান।
অর্থনৈতিক আধুনিকতাবাদী হিসেবে যে ভাবমর্যাদা তিনি গড়ে তুলেছিলেন, ২০১৬ সালে পুরনো মুদ্রা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তের পর সেটিও হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কাশ্মীর-পরবর্তী ঘটনায় এই ভাবমর্যাদা রক্ষা করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

কাশ্মীরে মোদি ধরপাকড় শুরু করার আগেই ভারত থেকে তহবিল তুলে নিচ্ছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বলে আরেক হতাশার খবর পাওয়া গেছে।

ভারতের জনপরিসরে এই গোঁড়ামি তাদের আরও বিস্ময়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদি তারা মনে করেন যে এসবের পরও সামাজিক সঙ্গতি এবং তাদের নেতাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিচারশক্তি বহালই থাকবে।
১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পরে কয়েক দশকে অ-পশ্চিমা দেশগুলোতে নৈতিক নেতৃত্ব ও মহাত্মা গান্ধীর মতো বিশ্বের ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের কারণে পাশ্চাত্যে বহু আগে যে সম্মান ভারত লাভ করেছিল, ইতোমধ্যে দেশটি তা খুইয়েছে।

স্বতন্ত্র বহু সাংস্কৃতিক গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে ভারত সম্পর্কে সর্বশেষ যে আখ্যান পরিচিতি পেয়েছে। এবার তাও বিতর্কের মুখে পড়েছে।
একটি উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তা মারাত্মক পরিণতিই ডেকে আনবে। যেটি চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে একেবারে বেমানান।

কাজেই মুদ্রামূল্য রদ করার চেয়েও কাশ্মীরিদের ওপর নিপীড়ন আত্মঘাতের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য কর্মকাÐ। এটা যত বেশি দিন চলবে, ভারত তার মূল কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়েছে বলে সংশয় দীর্ঘায়িত হবে। ভারতীয় হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার গতি এমন ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে চলে যাবে, যেখান থেকে আর ফেরার উপায় থাকবে না।
(নিবন্ধকার পঙ্কজ মিশ্র, বøুমবার্গের কলামিস্ট, ‘এইজ অব অ্যাঙ্গার : এ হিস্ট্রি অব দ্য প্রেজেন্ট’, ‘ফ্রম দ্য রুইনস অব এম্পায়ার : দ্য ইন্টেলেকচুয়াল হু রিমেইড এশিয়া’ বইয়ের লেখক।)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Khaled Hossain ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 1
হে আল্লাহ জালিমদের হাত থেকে তুমি সকল মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন, আমিন।
Total Reply(0)
Kamal Ahmed ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 1
Need free kasmir
Total Reply(0)
Khaled Hossain ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 1
কাশ্মীর সহ পৃথিবীর সকল মানুষ দের ভাল ভাবে বেচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হোক
Total Reply(0)
Anjum Ali Sawpon ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 1
এ সূর্য উঠবেই।মেঘের কি আর সাধ্য আছে সে আলো লুকাবার
Total Reply(0)
Khokon Chowdhury Madarsha ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 1
এটা কাশ্মীরের জন্য সুযোগ। স্বাধীনতার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে গেরুয়া কশাই।
Total Reply(0)
MD Bellal Sikder ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 1
ভারতের অনেক বামপন্থি দল,সিভিল সোসাইটি বা বুদ্ধিজীবী আছে যারা মোদীর অন্যায় কাজের বিরুধিতা করে।কিন্তু বাংলাদেশের কোন হিন্দু নেই যে বিবেক দিয়ে কথা বলে
Total Reply(0)
Nishchup Rafi ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 1
ভারতের অর্থনীতিতে চরমভাবে ধাক্কা খাবে এতে কোন সন্দেহ নেই, উগ্র হিন্দুত্ববাদ কে প্রাধান্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় টিকে থাকে তারা কখনো দেশের উন্নয়ন করতে পারে না, কাশ্মীরের তরুণরা অস্ত্র হাতে তুলে নেবে এটা হানডেট পারসেন শিওর, আর যখন ভারত একটা অশান্তির দিকে এগোবে তখন ভারতে বিদেশী সংস্থা আর বিনিয়োগ করবে না এখনই তো প্রায় 100 সংস্থা উঠে গেছে ভারতেল থেকে, ভারতকে চরম মূল্য দিতে হবে
Total Reply(0)
Md Firoj Khan ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 1
কাশ্মীরে মুসলিমরা গনহত্যার শিকার হচ্ছে,,,, কিন্তু জুতাসংঘ নিরব ভুমিকা পালন করছে,, এর মাধ্যমে বোধা যায় ইহুদি খৃস্টান মূর্তি পূজারি নাস্তিক বেধরমি কখনো মুসলিমদের ভালো চায় না
Total Reply(0)
Md Azadul Islam ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ৬:০৩ এএম says : 1
গণতন্ত্রের ধ্বজাধারি,মানবতার ফেরিওয়ালারা আজ কোথা? তারা কেন আজ চোখ বন্ধ করে আছে? করণ কি শুধু একটাই যে কাশ্মীরা মুসলিম? মনে রাখবেন সবকিছুর একটা শেষ আছে তবে সকল শেষের অবস্থা ভালো হয় না। মোদি আগুনে হাত দিয়েছে।
Total Reply(0)
Md saiful islam ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 1
মোদির বিচার হবে মুসলিমের হাতে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন