ইসলামের ইতিহাসে ১০ মুহাররম আশুরা হিসেবে যুগে যুগে নানা কারণে প্রসিদ্ধ হয়ে আসছে। তবে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের কাছে কারবালা প্রান্তরে তাঁর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন রাজিয়া আল্লাহুর শাহাদত বরণের মর্মান্তিক শোকাবহ ঘটনা সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। বিশেষ করে আবেগপ্রবণ বাঙালি মুসলমানদের কাছে ১০ মুহাররম কারবালার ঘটনা নিয়ে রচিত গদ্য-পদ্যে রচিত হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থ।
এমন এক সময় ছিল যখন বাঙালি মুসলমানের ঘরে ঘরে প্রায় নিয়মিত বসত পুঁথি পাঠের আসর। এসব আমার কাছাছুল আম্বিয়া, সোনাবানের পুঁথি প্রভৃতির পাশাপাশি থাকত শহীদে কারবালা প্রভৃতি পুঁথি পাঠের ব্যবস্থা। বাঙালি মুসলমানের অনেকেই সে সময় এসব পুঁথি পাঠের আসরের মাধ্যমেই তাদের সাহিত্য ক্ষুধা মেটাত।
পরবর্তীকালে যখন আধুনিক সাহিত্য সৃষ্টিতে তারা মনোনিবেশ করল, তখন অমর কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেন তাদের জন্য রচনা করলেন বিষাদ সিন্ধু নামক ইতিহাস বিষয়ক উপন্যাস। যা অদ্যবধি বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য সৃষ্টির এক অমর দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। ইতিহাসের সঙ্গে উপন্যাসের যে পার্থক্য, তা “বিষাদ সিন্ধুর” ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তাই ইতিহাসের ... .... নিরিখে তার বিচার করা সম্ভব নয়, উচিৎও নয়।
এসবের পরও “বিষাদ সিন্ধু যে মীর মশাররফ হোসেনের এক অমর সৃষ্টি, তা অনস্বীকার্য। শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যারা সাহিত্য পিপাসু, তাদের মধ্যে “বিষাদ সিন্ধু” পাঠ করেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। বিষাদ সিন্ধুর মোট তিনটি পাঠ রয়েছে। (এক) মুহাররম পর্ব, (দুই) উদ্ধার পর্ব ও (তিন) এজিদ বধ পর্ব। মনে হয় তৃতীয় তথা এজিদ বধ পর্ব রচনা না করে লেখক তার ইমাম হোসেনের হত্যাজনিত শোকের বিষন্ন মনের খেদ মেটাতে পুরোপুরি .... হচ্ছিলেন না। এতে মূল গ্রন্থ বিষাদ সিন্ধুর নামকরণের স্বার্থকতাও এসেছে।
বাংলা সাহিত্যে শুধু মীর মশাররফ হোসেনই কারবালার শোকাবহ ঘটনা নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছেন তা নয়। এ বিষয়ে গদ্যো-পদ্যে অনেক সাহিত্যিকই সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন। তাদের মধ্যে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ না করলে শুধু জাতীয় কবির প্রতি অবিচার করা হবে না, বিষয়টির প্রতিও অবিচার করা হবে।
মুহাররম নিয়ে লিখতে গিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার মুহাররম শীর্ষক কবিতায় নিজস্ব ভাষা ও ভঙ্গিতে লিখেছেন :
কবিতা : নীল সিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া, আমাদের লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া কাদের কোন ক্রনধসী কারবালা ফোরাতে যে কাঁদনে আসু আনে সীমারেরও ছোরাতে।
কবিতা : রুদ্র .... ওঠে দুনিয়া দামেশকে
জয়নালে পরানো ও খুনিয়ারা ... কে?
হায় হায় হোসেন ওঠেরোল ঝঞ্ঝায়
তলোয়ার কেপে ওঠে এজিদরে ....
উম্মাদ দুল দুল ছুটে ফেরে মদিনায়
আলী জাদা হোসেনের দেখা হেথা মদিনায়।
মা ফাতেমা ....... কাঁদে খুনি ......
বেটাদের নাম নিয়ে বধূদের শ্বেতবাস।
কবিতা : পুত্রহীনার আর বিধবার কাঁদনে
ছিঁড়ে আনে মর্মের বাঁধনে
..... শয্যায় কাদে একা জয়নাল
দাদা তেরি ঘর নিয়া বরবাদ ময়দান।
[অগ্নিবীণা]
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন