নানা বিতর্ক আর সমালোচনার মধ্যে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আল-নাহিয়ান খান জয়কে সভাপতি ও লেখক ভট্রাচার্যকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়া হয়। চলমান ইমেজ সংকটে ছাত্রলীগের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা ফিরিয়ে আনতে কয়েকটি পরিকল্পনায় এগোচ্ছে নতুন নেতৃত্ব। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ প্রচলিত প্রটোকল পদ্ধতির পরিবর্তনের কথা ভাবছে শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি গেস্টরুমে টর্চার বন্ধ করে যারা অতি উৎসাহী হয়ে এর অপব্যবহার করে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য। গতকাল বুধবার ইনকিলাবের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন ডাকসুতে ছাত্রলীগকে পূর্ণ প্যানেলে জয়ী করে আনতে তার পরিকল্পনার কথাও।
লেখক ভট্রাচার্য ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। তার বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে। তিনি ওই এলাকার এমপি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্যেও ভাতিজা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শেষ করেছেন নিজ এলাকায়। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েন যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। এরপর ২০০৮-০৯ সেশনে ভর্তি হন ঢাবিতে। পালন করেছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ হল শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব। ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
ঢাবিতে ১ম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করলেও সংগঠনের শীর্ষ পদে আসার কখনও স্বপ্ন দেখেছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এরকম টার্গেট নিয়ে রাজনীতি শুরু করিনি। যখন যে ইউনিটে ছিলাম সে ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদকের দেয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। আমি ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কখনো ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করিনি। আমার মাধ্যমে যদি ১০জন কর্মীও সুপথে যায় সেটাই হবে সফলতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে একটা দোদুল্যমান অবস্থা লক্ষ্য করেছি। তাই আমি সবসময় চাই তাদের কাছাকাছি থেকে সুষ্ঠু তত্বাবধান করতে। এজন্যই আমি হলে থেকে তাদের তত্বাবধায়ন করছি।’
ছাত্রলীগের বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিতর্কিতদের একটা লিস্ট করা হয়েছে, পদবঞ্চিতরাও একটা তালিকা দিয়েছিলেন। আমরা একটা কমিটি গঠন করে তদন্ত করার মাধ্যমে সবকিছু সমাধান করব যেন একসাথে বিষয়গুলোর সুরাহা হয়। নেত্রীর সাথে দেখা করার পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি বৈঠক করবো। এরপর যারা প্রকৃতপক্ষে দোষী তাদের বহিষ্কার করে পদবঞ্চিতদের পদায়ন করা হবে।’
ছাত্রলীগের এ শীর্ষ নেতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন দেয়া কঠিন হলেও চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়ে বলেন, ‘যেহেতু আমরা এরআগে থেকেই ছাত্রলীগের দায়িত্ব পালন করছি তাই সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। দপ্তর সেলেও জেলা, উপজেলা কমিটিগুলোর বিস্তারিত আছে। তাই কাজটি কঠিন হলেও আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেব।’
সংগঠনের চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে যে ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম ও লেনদেনের বিষয়গুলো এসেছে আমরা সেখানে টিম পাঠাবো। এরপর তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইমেজ ফিরিয়ে আনার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। সারাদেশের কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করে সম্মেলনের সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরী করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। চেইন অব কমান্ডারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কর্মীদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে অনেক সমস্যা কেটে যাবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আবাসিক হল নির্মাণ, আসন সংখ্যা বৃদ্ধিসহ ছাত্রদের সুবিধার দাবি-দাওয়াগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হবে বলে তিনি বলেন। এর পাশাপাশি প্রচলিত গেস্টরুম, জোর করে মিটিং-মিছিল করানো ও প্রটোকলে সংস্কার আনার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, গেস্টরুমসহ মিছিল মিটিংয়ে যারা অতি উৎসাহী হয়ে এর অপব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা কাউকে জোর করে প্রটোকল নেয়াতো দূরের কথা কেউ প্রটোকল দিতে চাইলেও আমরা তাদের নিষেধ করবো।’
পদায়নের ক্ষেত্রে আঞ্চল বা কোন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী তা না দেখে ব্যক্তিগত, পারিবারিক রাজনৈতিক আদর্শকে প্রাধান্য দেয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমিটির ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা প্রাধান্য পাবার কিছু নাই। পদ দেয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আদর্শের বিষয়টিই দেখা হবে। এছাড়া অঞ্চল বা ডিপার্টমেন্ট অন্য আর কিছু বিবেচনায় আসবে না।’
ডাকসুর ধারাবাহিকতা রক্ষায় ছাত্রলীগ সর্বাত্মক সহযোগীতা করবে উল্লেখ করে লেখক ভট্রাচার্য জানান, ‘সামনের ডাকসু নির্বাচনে যেন ছাত্রলীগ একটা পদও না হারায় সেজন্য আমরা কাজ করব। আমরা গুজব প্রতিহত করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করব। আর ছাত্রদের মাঝে জনপ্রিয় নেতাদের মধ্য থেকে ডাকসুর প্যানেল নির্বাচন করা হবে।’
নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে এ নেতা বলেন, ‘এটা আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন এমনভাবে ছাত্রলীগকে উপস্থাপন করতে চাই যার মাধ্যমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ভাবমূতি বৃদ্ধি পাবে। আগামী দিনেও আমি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাজের সাথে যুক্ত হবো।’
ইনকিলাবের মাধ্যমে সারাদেশের কর্মীদের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যে আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ সে শক্তি বজায় রাখতে হবে। ছাত্রলীগে কোন ধরণের গ্রুপিং, সুপারিশ কিছুই লাগবে না। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যার উন্নয়নের অংশীদার হয়ে আমরা ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চাই।’#
মন্তব্য করুন