খেলোয়াড় থেকে অধিনায়ক, কোচ থেকে নির্বাচক, প্রায় সব ভূমিকাতেই এক অদ্বিতীয় নাম গ্রেগ চ্যাপেল। প্রতিটি দায়িত্বই পালন করেছেন নিষ্ঠা আর দক্ষতার সঙ্গে। আর তাতেই বিশ্ব ক্রিকেটে এখনও দাপুটে দল অস্ট্রেলিয়া। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান এই কিংবদন্তির সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ হচ্ছে ক্রিকেটের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক ও ন্যাশনাল ট্যালেন্ট ম্যানেজারের পদ থেকে গতকালই পদত্যাগ করেছেন চ্যাপেল। আর তাতে ছিন্ন হলো ক্রিকেটের সঙ্গে তার ৫০ বছরের বেশি সময়ের বন্ধন।
শুরুটা তার ব্যাটিং দিয়ে। তাতে অস্ট্রেলিয়ার সেরাদের একজন। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু ও শেষে সেঞ্চুরি। ৫৩.৮৬ গড়ে রান ৭ হাজার ১১০। অন্তত ৮০ টেস্ট খেলেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চ্যাপেলের গড় ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে করেছেন ২৪ সেঞ্চুরি। রেকর্ড হয়তো নেই তবে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজে দেখা গিয়েছিল তার সবচেয়ে দাপুটে ব্যাটিং। হোল্ডিং, গার্নার, ক্রফট, রবার্টসে গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ ‘সুপার টেস্টে’ করেছিলেন ৬২১ রান।
বর্নিল ব্যাটিংয়ের ঝলকেই নজর কেড়েছেন নির্বাচকদের, হাতে উঠেছে অধিনায়তের আর্মব্যান্ড। বিদ্রোহী ওয়ার্ল্ড সিরিজে আগে ও পরের সময়টায় অস্ট্রেলিয়াকে ৪৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দেন চ্যাপেল। ১৯৭৭ অ্যাশেজে পান হারের তেতো স্বাদ, জেতেন ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে। ব্রিজবেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই করেন সেঞ্চুরি। তবে তার অধিনায়কত্বে কালো দাগ হয়ে আছে ১৯৮১ সালের মেলবোর্ন টেস্ট। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ছোট ভাই ট্রেভর চ্যাপেলকে ‘আন্ডারআর্ম’ ডেলিভারির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
সেই কালিমা কাটাতে বেছে নিয়েছিলেন কোচিংয়ের পথ। বিতর্ক পিছু ছাড়েনি সেখানেও। ১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০০২-০৩ মৌসুম পর্যন্ত দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার কোচ ছিলেন চ্যাপেল। ২০০৮ সালে নেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সেন্টার অব এক্সেলেন্সের প্রধানের দায়িত্ব। অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ ও অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গেও কাজ করেন তিনি। যুব ক্রিকেটে তিনি ছিলেন ন্যাশনাল ট্যালেন্ট ম্যানেজার। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন ভারতের কোচ। সময়টা অবশ্য ভালো কাটেনি। ২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয় ভারত। দায়িত্বকালে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ভারতের সে সময়ের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে।
এবার অন্য পথ বাছলেন সেই কলঙ্ক ঘোঁচাতে। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হতে না হতেই অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচক হিসেবে কাজ শুরু করেন চ্যাপেল। দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৮৮ পর্যন্ত। ১৯৮৭ সালে বিশ্বকাপ জিতলেও এই সময়টায় টেস্টে ভুগছিল অস্ট্রেলিয়া। ওই সময়ের অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ডেভিড বুন, স্টিভ ওয়াহর অভিষেক হয়। ২০১০ সালে আবার নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ পান চ্যাপেল। সেবার ছিলেন না বেশিদিন। ২০১১ সালে আবার ন্যাশনাল ট্যালেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১৬ সালে হোবার্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া বিধ্বস্ত হওয়ার পর নির্বাচকের দায়িত্ব ফেরেন চ্যাপেল। শেষটা করছেন ন্যাশনাল ট্যালেন্ট ম্যানেজার হিসেবে।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে ক্রিকেটে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন চ্যাপেল। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম ‘ফাইনেস্ট’ ক্রিকেটার। একই সঙ্গে অধিনায়ক, কোচ, নির্বাচক ও মেন্টর হিসেবে ছিলেন উদ্ভাবক ও পথপ্রদর্শক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন