সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মন্ত্রিসভায় রদবদল আসছে

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম

সরকার চায় পরিচ্ছন্ন ইমেজ গড়তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই বলেছেন, আবারও যাতে এক-এগারোর মত পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেজন্যই এ অভিযান। তাই চলমান দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে মন্ত্রিসভাকেও পরিচ্ছন্ন করতে শিগগিরই আবারও রদবদল আসতে পারে মন্ত্রিসভায়। টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারে যারা মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের মধ্যে যারা ইতোমধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন, ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন মন্ত্রিসভার রদবদলে তারা বাদ পড়বেন।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবেই মন্ত্রিসভার পুনর্গঠন হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় যে সকল সদস্য দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তারা বাদ পড়তে পারেন এবং তাদের স্থলে নতুন ক্লিন ইমেজের এমপিরা মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন। সূত্রটি আরো জানায়, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বাদ দেয়ার পাশাপাশি সাবেক কয়েকজন দুর্নীতিগ্রস্থ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে, এমনকি গ্রেফতারও হতে পারেন কেউ কেউ। বৈধ উৎস ছাড়া বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবারে আওয়ামী লীগের যারা এমপি ও মন্ত্রী হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের সম্পদের হিসেব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রয়েছে। এমপি হবার আগে ও পরের তাদের পরিপূর্ণ সম্পদের তথ্য গোয়েন্দারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন। কার কী পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে, আয়ের উৎস, দলের জন্য কী ভূমিকা রেখেছেন, নির্বাচন কমিশনের হলফ নামার বাইরের নানা সম্পদের তথ্যও রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন তখন শুধুমাত্র যুবলীগ বা ছাত্রলীগে তা সীমাবদ্ধ থাকবে না। আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনকি মন্ত্রি পরিষদেও এ অভিযান চালাবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বারবারই দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন, এর অর্থ কোন পর্যায়ের দুর্নীতিকেই তিনি আর ছাড় দেবেন না। নভেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গসংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এছাড়া সারাদেশেই তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অপরাধী, অনুপ্রবেশকারী সকলকেই দল থেকে ছেটে ফেলা হবে এবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, দল, সরকার, প্রশাসন, মন্ত্রিসভা যেখানেই দুর্নীতি রয়েছে সেখানেই অভিযান চালানো প্রয়োজন। এক জায়গায় অভিযান চলবে আর অন্য জায়গায় হবে না এমনটা হলে পুরো অভিযান নিয়েই প্রশ্ন তৈরী হবে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বড় বড় প্রকল্পে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকা, ভূমি দখল, স্ত্রী-ভাই-বোন আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মে জড়িত থাকা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের সঙ্গে আতাঁত, নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
এছাড়া বিগত সরকারের মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, খাদ্য বিশৃঙ্খলা ও কেলেঙ্কারি, ভূমি দস্যুতা, নদী-নালা, বালু মহল দখলসহ টেন্ডার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ আয়ের বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণাদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেয়া হয়েছে। দেশের বাইরেও যেসব মন্ত্রীদের অর্থ-সম্পত্তি রয়েছে সে বিষয়েও অবহিত প্রধানমন্ত্রী।
এই শুদ্ধি অভিযানে শুধু মন্ত্রিপরিষদ নয় প্রশাসনের সকল পর্যায়েও অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যে দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের অপকর্মের প্রমাণসহ তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এই সকল দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং চাকুরিচ্যুত করা হবে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা রেদওয়ান খান বোরহান ইনকিলাবকে বলেন, শুধু দল নয়, সরকারের বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠিন অভিযান চালাতে হবে। দল ও সরকারের কিছু দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা ও কর্মকর্তাদের কারণে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের ভাবমূতি নষ্ট হচ্ছে। গুটি কয়েক দুর্নীতিগ্রস্থ নেতা দলে না থাকলে দলের কিছুই হবে না। দলের ত্যাগী নেতারা ঠিকই এগিয়ে আসবে। আর কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার শাস্তির ব্যবস্থা করলে অন্যরাও সাবধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চলমান শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। যারা দুর্নীতি বা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে সৎ ও ত্যাগী নেতারা দলে কাজ করার পরিবেশ পাবেন। কাউকেই ছাড় দেয়া উচিত নয়, আমিও যদি অপরাধী হই তাহলে সরকার যেন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবুও দল পরিশুদ্ধ হোক।
এ বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতারা আওয়ামী লীগের আগামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাবেন। আওয়ামী লীগের সমচিন্তার নয়, এমন কেউ যাতে দলে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, বিতর্কিত ব্যক্তিরা কমিটিতে স্থান না পায়, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছেন। আওয়ামী লীগে লোকের অভাব নেই, তাই খারাপ লোকের দরকার নেই। ভালো লোকদের জন্য দরজা খুলে দিন। শেখ হাসিনা দরজা খুলে দিয়েছেন। ভালো লোকদের জন্য রাজনীতির দুয়ার খুলে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের দরজা খুলে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শুদ্ধি অভিযানের আওতায় যারা আসবে দল তাদের কারো কোনও দায়িত্ব নেবে না। আর গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করে কেউ দলে ঘাপটি মেরে থাকতে চাইলেও যখনই শেখ হাসিনার নজরে আসবে, সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Nurul Islam ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৮ এএম says : 0
তিনি তো সব সময়ই আঙ্গুল তুলে বলেন, সেনাবাহিনী কখনও রাষ্ট্রিয় কাজে নাক গলানোর দুঃসাহস করবেনা। তাহা হলে ১/১১ এর ভয় কেন? ১/১১ এর মত পরিবেশ আসবে কিভাবে?
Total Reply(0)
Dusto Roket ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
তাদেরকেই মন্ত্রী করা হোক। যারা কথার চেয়ে কাজ বেশি করবে।
Total Reply(0)
Aktar Kamal ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:১৯ এএম says : 0
খারে খা ভাগ বাটোয়ারা করে খা।সময় থাকতে খা, তাড়াতাড়ি খা, দিন ফুরালে মিলবেনা দধির হাড়ি।
Total Reply(0)
Anwar Hossain ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
নতুন আসলে কি হবে, কয়লা দুয়ে কখনো ময়লা দুর করা যায়
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২০ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার। আশা করি অব্যাহত থাকবে।
Total Reply(0)
কাজল খান ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
মন্ত্রিসভায় রদবদল করে পরিপক্কদের আনা হোক। দুর্নীতিবাজ অযোগ্যদের বিতাড়িত করা হোক।
Total Reply(0)
তাসলিমা বেগম ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
রদবদল করছেন ভালো কথা, দেশ বাঁচাতে হলে ভারতীয় দালালদের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিন।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
ভারতীয় দালাল মুক্ত মন্ত্রিসভা চাই।
Total Reply(0)
দীনমজুর কহে ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৪৫ এএম says : 0
শূদ্ধি অভিযান।এখন সময়ের দাবী।দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী আর অতি উৎসাহী অতিকথন কারীরাই বেশী খতিকর।এই সকল পয়জন দুর করাই ভাল।দুস্টবলদের চেয়ে শুন্য গোয়াল ভাল।
Total Reply(0)
মিষ্টি ৮ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:৫৮ এএম says : 0
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ........ জনাব হাসানুল হক ইনু সাহেব, বাংলাদেশের ৯ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষ ক্যাসিনোর ব্যাপারে আপনার চমৎকার মন্তব্য শুনতে চায়. আপনি মিডিয়ায় অনুপস্থিত কেন?
Total Reply(0)
আলী আজিম ১০ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম says : 0
আমি আলী আজিম আজীবন প্রত্যয়ই একজন আওয়ামীলীগের আন্দোলন সংগ্রামের কর্মী আমি,জননেএী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আনুগত্যের একজন রাজপথে কর্মী,মানিকমিয়া এভিনিউ থেকে পল্টন ময়দান,জনতার মঞ্চ থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আমি একজন অকুণ্ঠ কর্মী উপসঙ্গ,২১ আগষ্ট গ্রেনেট হামলায় আহতো হওয়া একজন কর্মি আমি আজও বিবেচনাবিহীন,আমার স্ত্রী বিএসএস-এ সংবাদ সংস্থায় চাকুরীতে নিয়োজিত,বাসসের ইতিহাসে সে সংশ্লিষ্ট বিভাগে সর্বোচ্চ শিক্ষিত হয়েও বর্তমান এমডি আবুল কালাম আজাদের অবিবেচনাপ্রসূত অনৈতিক কারনে সে আজ নয় বৎসরে একই পদে আসীন,অথচ আবুল কালাম আজাদের আপন দুই অশিক্ষিত ভাগিনা ৫/৮পাস হয়ে এরা আজ আমার স্ত্রী সমান গ্রেডে আসিনি যা কিনা দুর্নীতিই নয় স্বজনপ্রীতির মাএা ছাড়িয়ে ছেছে, তার নীতি হীন কর্মকান্ডে সংস্হা টি আজ বেশ অনিয়মের মহোৎসবে পরিনত হয়েছে,বিষয়টি বর্তমান বাস্তবতা এক মহা দূর্নীতি,আমি এর একটা ন্যায় সঙ্গত নিরসন চাই,,,জয়বাংলা
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন