শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআনুল মাজীদ শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী মু’জিযা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

পিয়ারা নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. মু’জিযাসমূহের মধ্যে কোরআনুল মাজীদ শ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী মু’জিযা। তা আল্লাহর দীন ইসলাম এবং ইসলামের সভ্যতার এক বড় প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ’র দ্বিতীয় খ- ২৯১ পৃষ্টায় বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কালাম আল কোরআন সাইয়্যেদুল মুরসালীন হযরত মুহাম্মাদ সা. এর উপর অবতীর্ণ। এটি সকল সৃষ্টজীবকে তার প্রতিযোগিতায় অক্ষমকারী। সকল মানুষ-জিন, প্রবীণ-নবীন, প্রথম দিকের ও শেষ দিকের সকলের জন্য এটি চিরন্তন মু’জিযা। কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও কেউ আল কোরআনের সূরার তূল্য একটি সূরাও রচনা করতে পারবে না।

শুধু তা-ই নয়, কোরআন মাজীদ নাযিল হওয়ার সময় থেকে অদ্যাবধি তাওয়াতুর (অবিচ্ছিন্ন) পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়ে আসছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত পদ্ধতিতেই বর্ণিত হতে থাকবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত উক্ত পদ্ধতিতেই বিদ্যমান থাকবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে : আমিই কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী। (সূরা আল হিজর : আয়াত ৯)। কাশফে আসরাব শরহে উমুলুল বাযদাভীতে বলা হয়েছে : কোরআনুল মাজীদ রাসূলুল্লাহ সা. এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে মাসহাফে লিখিত এবং সংশয়মুক্তভাবে মুতাওয়াতির পদ্ধতিতে নবী সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে। (পৃ. ৬৯-৭০, খ. ১)।

আল কোরআনে সর্বমোট ১১৪টি সূরা রয়েছে। বর্তমান মাসহাফে সুবিন্যস্ত সূরাসমূহের বিন্যাস যদিও অবতীর্ণের বিন্যাস মতো নয়, তবুও বর্তমান ক্রমধারা অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সা.-এর ফরমান ও নির্দেশ অনুযায়ী বিন্যস্ত করা হয়েছে। মহান আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ সা. কে সম্বোধন করে ইরশাদ করেছেন : হে নবী আপনি কোরআনপাক তাড়াতাড়ি মুখস্ত করে নেয়ার উদ্দেশ্যে আপনার জিহ্বা সঞ্চালন করবেন না। কেননা, আপনার অন্তরে কোরআন সঞ্চিত করা ও তার পাঠোদ্বার করার দায়িত্ব আমার ওপর ন্যাস্ত। সুতরাং আমি পাঠ করলে আপনি তার অনুসরণ করুন। অত:পর তা বর্ণনার দায়িত্ব আমার।

কোরআন মাজীদ সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজ হতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে একসাথে অবতীর্ণ হয়। অত:পর প্রয়োজন ও মুসলেহাত অনুযায়ী কিছু কিছু করে অবতীর্ণ হতে থাকে। অত:পর লাওহে মাহফুজের বিন্যাস অনুযায়ী মাসহাফে সংকলিত ও বিন্যস্ত হয়। (আল ইতকান : পৃ. ১৬৫)।

বস্তুত কোরআন মাজীদ আল্লাহপাকের কালাম ও তার আদি সিফাত। সুতরাং অন্যান্য সিফাতের মতই তা অনাদি ও অনন্ত। নব উদ্ভাবিত বা সৃষ্ট নয়। ইমাম আজম হযরত আবু হানিফা রহ. স্বীয় ‘ওয়াছিয়্যাহ’ গ্রন্থে লিখেছেন, আমরা দৃঢ়ভাবে স্বীকার করি যে, কোরআনুল কারীম আল্লাহর কালাম, তার ওহী, তার অবতারিত গ্রন্থ এবং তার সিফাত। আল কোরআন তিনিও নয়, তিনি ভিন্নও নয়। বরং তার সিফাত, মাসহাফে লিখিত। যবানে পঠিত, হৃদয়ে সংরক্ষিত, আল্লাহর কালাম, মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে বলে কোরআন মাখলুক সে অবশ্যই কাফির। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ২৬)।

কোরআন মাজীদ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। শব্দ ও মর্ম দু’টো মিলেই কোরআন। সুতরাং অনারব ভাষায় কোরআনুল কারীম নামাযে তিলাওয়াত করা জায়েজ নেই। অনারব ভাষায় তার অনুবাদকে ‘কোরআনের অনুবাদ’ বলতে হবে। কেননা, মূল কোরআন আরবী। এ প্রসঙ্গে দিকদর্শন হচ্ছেÑ এই যে, ক. যদি কেউ অনারব ভাষায় (বাংলা, উর্দূ, ফার্সি, ইংরেজী ইত্যাদি) কোরআনের অনুবাদ পড়ে এবং তাকেই মূল কোরআন মনে করে নামাজে তা পাঠ করে, তবে হয়ত সে পাগল যার উপযুক্ত চিকিৎসা দরকার, অথবা সে যিন্দিক যার শরীয়ত সম্মত শাস্তি মৃত্যুদ-। (শরহে ফিকহে আকবার : পৃ. ১৫২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
মোহাম্মদ মোশাররফ ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫৩ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত আগত সমগ্র সৃষ্টিকূলের হিদায়াতের জন্য এবং সকল ক্ষমতার উপর তাঁর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ নবী মুহাম্মদ সা. এর উপর চিরন্তন মু‘জিযা আল-কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেন। যেমনিভাবে মূসা আ. আল্লাহ প্রদত্ত মু‘জিযা লাঠির মাধ্যমে সে সময়ে বিদ্যমান যাদুকরদের সকল যাদুকে পরাভূত করে আল্লাহর একত্ববাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেন।
Total Reply(0)
জোহেব শাহরিয়ার ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
ঈসা আ. কে এমন সময় আল্লাহ তাআলা নবী হিসেবে প্রেরণ করেন, যখন সমসাময়িক চিকিৎসা শাস্ত্র প্রভূত অগ্রগতি সাধন করেছিল এবং এ অগ্রগতির জন্য তারা নিজেদের চিকিৎসা শাস্ত্রে শ্রেষ্ঠ দাবী করতো। ঈসা আ. তাঁর প্রদত্ত মু‘জিযার মাধ্যমে জন্মান্ধ, বধির, কুষ্ঠরোগসহ নানা রোগের আরোগ্য করেন, কিন্তু সে সময়ের চিকিৎসা শাস্ত্রের পন্ডিতরা ঐ সকল রোগের চিকিৎসা করতে অপারগ হয়েছিলো।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা যখন শেষ নবী মুহাম্মদ সা. কে আরবজাতির নিকট প্রেরণ করেন, তখন তারা আরবী ভাষার চর্চার মাধ্যমে ভাষার দিক দিয়ে উচ্চশিখরে আরোহন করেছিল। তারা বর্তমান যুগের ন্যায় ভাষা চর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিযোগিতা করত এবং বিজয়ীদের বিশেষ সম্মান দিত ও পুরষ্কৃত করত। এ সময় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সা. এর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট আরবী সাহিত্যে শেষ আসমানী গ্রন্থ আল-কুরআন নাযিল করেন। আল-কুরআনের এ ভাষাশৈলী দেখে কাফের-মুশরিকরা এর তাৎপর্য অনুধাবন করে সাধারণ মানুষের কাছে অপ-প্রচার চালাতে লাগলো যে মুহাম্মদ সা. যাদুকর, তাই তাঁর কাছে গেলে কুরআনের মাধ্যমে সে মানুষদের মোহগ্রস্ত করে ফেলবে।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
কুরআন নাযিলের সময় যেমনিভাবে কুরআন সে সময়কার বিশেষ জ্ঞান (আরবী ভাষা) কে পরাভূত করেছিল, ঠিক আজও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখে পরাভূত করেছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত জ্ঞান-বিজ্ঞান আসবে সেগুলোকেও কুরআনুল মাজিদ পরাভূত করবে। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সকল জ্ঞানের সমাবেশ ঘটিয়েছেন।
Total Reply(0)
Mahmud Hussain ২৯ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
কুরআন নাযিলের পর থেকে বিজ্ঞানীরা এর অনেক তত্তে¡র সাথে দ্বিমত পোষণ করে, কিন্তু পরবর্তীতে তারা অধিকতর গবেষণা করে পবিত্র কুরআনের অনেক তত্তে¡র সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন