রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

কথিত জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর গল্প

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ
দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনিদের খুনের তা-বলীলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জুন থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছিল পুলিশের জঙ্গিবিরোধী কথিত সাঁড়াশি অভিযান। প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ১৭ জুন শেষ হয়েছে এ অভিযান। পুলিশের ভাষ্য মতে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গির সংখ্যা দু’শরও কম। পর্যবেক্ষক মহল ও পুলিশের কর্মকর্তাদেরই কেউ কেউ পুলিশের এ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আশানুরূপ ফল মেলেনি বললেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ এতে অনেক সফলতা অর্জিত হওয়ার কথা বলেছে। প্রয়োজনে আবার অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে এ অভিযান চলাকালেই জঙ্গি হামলায় একজন নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নামে পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের জোর অভিযোগ উঠেছে। এমনও বলা হয়েছে যে ঈদের আগে পুলিশের উপরি আয়ের ব্যবস্থা করতেই এ জঙ্গিবিরোধী অভিযান। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের শেষ পর্যায়ে পুলিশের রিমান্ডে থাকা এক জঙ্গি এবং অপর এক জঙ্গি নেতার কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে  রাজধানীর উত্তরার একটি খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি; যা এ অভিযানে পুলিশের আরেক বিরাট সাফল্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  
বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে মানুষ খুনের ঘটনা ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কথিত জঙ্গি ও দুর্বৃত্তরা পাল্লা দিয়ে মেতেছে হত্যার উৎসবে। অবাক করার বিষয় হলো, জঙ্গি বিষয়ে সদাসতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরোয়া না করে তারা খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। জাপানি নাগরিক, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ী, হিন্দু পুরোহিত কেউ তাদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। সর্বশেষ মাদারীপুরের এক কলেজ শিক্ষক হামলার শিকার হন, যদিও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচেছেন তিনি। দেশব্যাপী নানা স্থানে হত্যা অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে গত ৫ জুন চট্টগ্রামে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী দু’সন্তানের জননী মাহমুদা আক্তার মিতুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জঙ্গি বা দুর্বৃত্ত কারা এ হত্যাকা-ে জড়িত তা নিয়ে অস্পষ্টতার মধ্যে পুলিশ ১০ জুন থেকে সারাদেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে। ১৭ তারিখে এ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়োজনে আবার অভিযান চালানো হবে। যাহোক, ১০-১৭ জুন পর্যন্ত পুলিশি অভিযানে আটক হয়েছেন ১৪ হাজার ৫৫২ জন। পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যে আটক সন্দেহভাজন জঙ্গির সংখ্যা ১৯৪ জন। অর্থাৎ তাদের সংখ্যা দু’শ পর্যন্ত যায়নি। গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যার দু’শতাংশও নয় তারা। এ অভিযান নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কথা উঠেছে। জঙ্গিদের ধরার জন্য অভিযান চালানো হলো। কিন্তু তাদের সংখ্যা ১৯৪ জন হলে বাকি ১৪ হাজার ৩৫৮ জন কারা? পুলিশ এখনো তাদের জঙ্গি বলে আখ্যায়িত করেনি। তাহলে তাদের ধরা হলো কেন? এরা কি চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী-মলম পার্টির সদস্য? তাদের যদি ধরা হবে তাহলে অভিযানের নাম জঙ্গিবিরোধী অভিযান কেন? আর তাদেরকে এতদিন ধরা হয়নি কেন? নাকি বিএনপি যেমন বলেছে যে তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্যই এ অভিযান, সেটাই সত্য?
কথা হচ্ছে, এ ১৪ হাজার ৩৫৮ জনের মধ্যে দু’চারজন অপরাধী যে নেই বা থাকতে পারে না, তা নয়। কিন্তু আটককৃতদের প্রায় কেউই যদি জঙ্গি না হয় তাহলে তাদের আটক করে পুলিশ বাহবা পাবে কি? এর জবাব হলো, পুলিশ তা ইতোমধ্যেই পেয়ে গেছে। পুলিশ সদর দফতর থেকে এ অভিযানকে সফল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষের মনোভাবটি এ রকম যে ১৫ হাজারের মধ্যে ২শ’ জঙ্গি পাওয়া কম কথা নয়। এ বিরাট সাফল্য। আগে আর কখনো কোনো অভিযানে এত বিরাট সংখ্যক জঙ্গি ধরা পড়েনি।
পুলিশের ভাষ্যে জানা যায় যে, সাম্প্রতিককালে জমিয়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি, হিযবুত তাহরীর, ইসলামী ছাত্রশিবির প্রভৃতি দেশের এসব  হত্যাকা-ের সাথে জড়িত। যদিও এর আগে কয়েকজন বিদেশি হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয়  ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক জিহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএস, তবে পুলিশ তা নাকচ করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে আইএস নেই। তার অর্থ হচ্ছে, এসব হত্যাকা- দেশের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোই ঘটাচ্ছে। পুলিশের ভাষায়, সরকারকে বিপাকে ফেলাই তাদের উদ্দেশ্য। বিশেষ করে হিন্দুদের হত্যার পেছনে যে উদ্দেশ্য রয়েছে তা হলো বড় বন্ধু দেশ ভারতকে এ সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা। তবে এতগুলো হত্যাকা- ঘটলেও পুলিশ এসব হত্যার পেছনের সুস্পষ্ট কারণ বের করতে পারেনি। এখনো প্রমাণিত হয়নি যে কারা সুনির্দিষ্টভাবে দায়ী।
পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান শেষ হওয়ার পর ১৮ জুন একটি শীর্ষ দৈনিকে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে এ অভিযান থেকে যে পরিমাণ সাফল্য পাওয়ার কথা ছিল তা পাওয়া যায়নি। পুলিশ বাহবা নেয়ার জন্য সাধারণ গ্রেফতারকেও বিশেষ অভিযানের নামে চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক একটি সংবাদপত্রকে বলেন, ঘোষণা দিয়ে জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানের ভালো ফল পাওয়া গেছে। সেই সাথে পুলিশ সদর দফতরের এক ঊর্ধŸতন কর্মকর্তা এ অভিযানকে সফল আখ্যায়িত করে বলেন, এতে অনেক সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের মধ্যে একটি ভীতি সৃষ্টি করা গেছে। তাদের সম্পর্কে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা গেছে। আটক ১৯৪ জন জঙ্গির কাছ থেকেও আরো তথ্য পাওয়া যাবে। পুলিশের জনসংযোগ দফতর জানায়, আটক জঙ্গিদের মধ্যে জেএমবির ১৫১ জন, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ-এর ৭ জন, হিযবুত তাহরীরের  ২১ জন, এবিটির ৬ জন, আনসার আল ইসলামের ৩ জন, আল্লাহর দল-এর ৪ জন, হরকাতুল জিহাদ বা হুজি’র ১ জন ও আফগানিস্তান ফেরত এক জঙ্গি সংগঠনের এক সদস্য রয়েছেন।
এদিকে সমালোচকরা ঘোষিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানকে গণগ্রেফতার নামে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেছেন, এত ঢাক-ঢোল পেটানো অভিযানে বড় কোনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গি গ্রেফতার হয়নি। তারা বলছেন, গত ১৮ মাসে জঙ্গিদের ৪৭টি হামলায় যে ৪৯ ব্যক্তি নিহত হন তাদের হত্যার জন্য দায়ী কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মিতু নিহত হন চট্টগ্রামে। সে চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আটক হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। কিন্তু পুলিশেরই কথা, তাদের মধ্যে জঙ্গির সংখ্যা মাত্র ৩ জন। তাদেরকে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী বলা হয়েছে। মিতুর কোনো হত্যাকারীকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ইতোপূর্বে মিতু হত্যায় আটক দু’জনও এতে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি দেয়নি।
বলা দরকার, দেশব্যাপী যখন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কথিত সাঁড়াশি অভিযান চলমান, তার মধ্যেই এ অভিযানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জঙ্গিরা ১৫ জুন বিকাল বেলা মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর বাসায় ঢুকে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে তিনি বেঁচে যান, ধরা পড়ে হত্যা চেষ্টাকারী হিযবুত তাহরীরের কথিত সদস্য ফাইজুল্লাহ ফাহিম। তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে অভিযানের শেষের দিকে ১৬ জুন দিবাগত রাতে সাড়ে ১২টায় দুর্বৃত্তরা নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে আসিফ উদ্দিন শান্ত নামে এক কলেজছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় আহত হয় আরো ৩ জন। অভিযানের শেষদিন ১৭ জুন শুক্রবার সন্ধ্যায় জমি নিয়ে বিরোধে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর কেয়াগ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক পুলিশ সদস্য রাজা মৃধাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ থেকেই মোটামুটি ধারণা করা যায় যে ঘোষিত সাঁড়াশি অভিযান অপরাধীদের মধ্যে তেমন ভীতি সৃষ্টি করতে পারেনি। উল্লেখ্য, বিএনপি শুরু থেকেই এ অভিযানকে ‘সরকার বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন চালানোর কৌশল’ বলে আখ্যায়িত করে। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় যে পুলিশ এই অভিযানের নামে গণগ্রেফতার করে ঈদের আগে বাণিজ্য করছে।       
শুধু বিএনপির অভিযোগ নয়, এ জঙ্গি দমন অভিযান সম্পর্কে  বিশেষজ্ঞ  মহল নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রি. জে.(অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, যে জঙ্গিদের গ্রেফতারের কথা বলা হচ্ছে তারা কারা? দেশে অব্যাহত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পুলিশের ভাবমর্যাদা সংকটে পড়েছিল। এখন সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযানে পুলিশের বাণিজ্য ছাড়া খুব বেশি লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, যে ১৪ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সবাই যদি সন্ত্রাসী হতো তাহলে দেশ ছারখার হয়ে যেত। তিনি বলেন, বহু নিরীহ মানুষ এই অভিযানে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা এখনো থানার সামনে বা জেলগেটে অপেক্ষা করছেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৬ জুন এক বিবৃতিতে গণগ্রেফতার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত অপরাধের যথাযথ প্রমাণ ছাড়া লোকজনকে অযৌক্তিকভাবে, গণহারে গ্রেফতার তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা। বরং অপরাধমূলক কর্মকা-ের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সাপেক্ষে গ্রেফতার হওয়া লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা এবং তাদের তাৎক্ষণিকভাবে আদালতের সামনে হাজির করা উচিত। অথবা তাদের তাৎক্ষণিকভাবে ছেড়ে দেয়া উচিত।  
পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অনেককেই আদালতে হাজির করা হয়নি। অনেককেই  মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে গ্রেফতার বাণিজ্যের লক্ষ্যে। সে সাথে পুলিশ হেফাজত থেকে গ্রেফতারকৃতের উধাও হওয়ার অভিযোগ করেছেন কোনো কোনো স্বজন।  
এদিকে, পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের অব্যবহিত পরে ২ জন জঙ্গির  তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।  নিহতদের একজন হচ্ছেন ফাহিম। তিনি মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষকের উপর হামলার সময় আটক হন। ১৭ জুন শুক্রবার আদালত তাকে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে দেয়। পুলিশের ভাষ্যমতে, রিমান্ডের প্রথম দিনে দিবাগত রাতে স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তারা ফাহিমকে নিয়ে অভিযানে বের হলে বন্দুকযুদ্ধে ফাহিম নিহত হন। বলা দরকার যে, নিহত ফাহিমের দু’হাতে হাতকড়া লাগানো ছিল। অতএব, নিশ্চিত যে সে বন্দুকযুদ্ধে অংশ নেয়নি। তাহলে তার সহযোগীদের সাথে সেই গভীর রাতে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের সময় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলো না কেন? এর জবাব নেই। অন্যদিকে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যায় অংশ নেয়া শরীফুল নামক এক জঙ্গি শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর খিলগাঁও থানার মেরাদিয়ায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। বহু বছর ধরেই পুলিশ ও র‌্যাব সবাইকে এই কথিত বন্দুকযুদ্ধের আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে আসছে। কিন্তু এবার এ দুটি হত্যাকা- নিয়েই প্রচ- সমালোচনা শুরু হয়েছে। ফাহিম পুলিশ রিমান্ডে ছিল। তার জীবনের দায়-দায়িত্ব ছিল পুলিশের। পুলিশ তার জীবনের হেফাজত করেনি। এর কোনো বিচার হবে কিনা কে জানে। অন্যদিকে পুলিশ এতদিন বলেছে যে, অভিজিৎ হত্যাকারীদের সবাই বিদেশে পালিয়ে গেছে। শরীফুল ছিল হত্যাকারী টিমের দ্বিতীয় ব্যক্তি। টিভি ফুটেজে তার ছবি দেখে লাশের সাথে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। সে কী করে কবে ঢাকায় এলো? সকল মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ফাহিম বা শরীফুলকে হত্যা করে জঙ্গিদের সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য লাভের সম্ভাব্য সুযোগ হারিয়ে ফেলা হলো কিনা? আবার এ প্রশ্নও উঠেছে তাদের হত্যার মাধ্যমে আসল হত্যাকারীদের আড়াল করা হলো কিনা? তার চেয়েও যা গুরুতর হয়ে দেখা দিয়েছে তাহলো শরীফুলের লাশ স্বজনরা ঢাকায় এসে শনাক্ত করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম শরীফুল নয়, মুকুল রানা। জানা যায়, সাতক্ষীরার কলেজছাত্র মুকুল এক বছর আগে ঢাকায় চলে আসে। এখানে সে কী করত তা তার স্বজনরা জানেন না। পুলিশ বলেছে, শরীফুল বিভিন্ন নামে সক্রিয় ছিল। অভিজিৎসহ ৬টি খুনের সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিল সে। এদিকে ২১ জুন পত্রিকার খবরে তার পিতা আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যশোর থেকে তার ছেলেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে সে নিখোঁজ। এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানায় জিডিও করা হয়। এই ধোঁয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে কেন তাকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হলো, সেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি। সর্বশেষ এ দুই অপ্রমাণিত জঙ্গির নির্মম হত্যা বিচারহীনতার মধ্যে দেশের আইনের ঘুরপাক খাওয়ার রূঢ় বাস্তবতাকে তুলে ধরে। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন যে আর কতদিন এই কথিত বন্দুকযুদ্ধের নিষ্ঠুর গল্প শোনানো হবে মানুষকে?
এর মধ্যে সারাদেশ তোলপাড় করা আরেকটি ঘটনা ঘটে ১৮ জুন। এদিন এক পুলিশ সদস্যের তথ্য মোতাবেক উত্তরার দিয়াবাড়ি খাল থেকে ১০৮টি পিস্তল, ১ হাজার রাউন্ড গুলি, ৪৬২টি ম্যাগাজিন ও ১০টি বেয়নেট পাওয়া যায়। পরদিন আরো ৩২টি ম্যাগাজিন ও গান ক্লিনার পাওয়া যায়। জানা যায়, একটি গাড়িতে করে সেখানে এসব অস্ত্র ফেলে যাওয়া হয়। রাজধানীতে পুলিশের এত চেকপোস্ট ও তল্লাশির মধ্যে নম্বর প্লেটবিহীন একটি গাড়ি কীভাবে এত পিস্তল ও গুলিভর্তি ব্যাগ দিনের বেলা বহন করল তা এক প্রশ্ন। পুলিশ বলছে, সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ভয় পেয়ে বা নিরুপায় হয়ে জঙ্গিরা এগুলো ফেলে গেছে। কিন্তু এত সহজ সমীকরণ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে যে জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিষ্ফল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। জঙ্গিরা আর কোনো অস্ত্র নয়, শুধু পিস্তল দিয়ে কি বা কতদূর করতে পারত, তাও একটা প্রশ্ন। এদিকে এ অস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার কথা শুনে বহু মানুষই হতাশ। তারা বলছেন, তিনি দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার মতো কথা না বলে দলীয় নেতার মতো রাজনৈতিক কথা বলছেন, যা ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অতি সম্প্রতি দেশে যেসব বিভিন্নমুখী ঘটনা ঘটছে, বিভিন্ন রকম বক্তব্য ও দাবি উত্থিত হচ্ছে, তাতে প্রকৃত দেশহিতৈষী মহলের ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে। দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই, গণতন্ত্র ইতোমধ্যেই ভূলুণ্ঠিত, মুক্ত মত প্রকাশ ভীতি কবলিত, মৃত্যু ঘুরছে ছায়ার মতো। এরপর স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি আসন্ন বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। এমতাবস্থায় দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন মানুষের গভীরভাবে ভাবনার সময় এসেছে বলে মনে হয়।
লেখক : সাংবাদিক
h_mahmudbd@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
farjana ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:৩৩ পিএম says : 0
kisu bolar nai
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন