শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ইরাক, ইসরাইল ও সিরিয়ার নারীবাদী কণ্ঠস্বর

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শাহরিয়ার সোহেল
পৃথিবীর সর্বত্রই রয়েছে আহাজারি, এক বিষণœ ক্রন্দনের সুর। সে সুর অন্য কোথাও নিয়ে যায় আমাদের। আমরা অন্যভাবে নিজেদের ভাবতে পারি। সে সুর মনের গহীনে বাজে মৃদুলয়ে, কখনো উচ্চকিত, কখনো ক্ষোভ, ঘৃণা, ভালোবাসা, সংগ্রামের সাথে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নারীবাদী শক্তিশালী কণ্ঠস্বরের মতো ইরাক, ইসরাইল ও সিরিয়ারও রয়েছে নারীবাদী শক্তিশালী কণ্ঠস্বর। তাদের চেতনা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন নয়। পৃথিবীর যে কোন জায়গার অনুভূতিই এক, প্রকাশ ভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে।
আধুনিক আরবি কবিতার উৎপত্তি ইরাকে, চল্লিশের দশকের বাগদাদ নগরে। আর তার অন্যতম প্রধান পথিকৃৎ একজন নারী, যার নাম নাজিক আল মালাইকা। ১৯২৩ সালে বাগদাদে জন্মগ্রহণকারী মালাইকা চব্বিশ বছর বয়সে প্রচলিত ধারার বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন ভাষা, ছন্দ ও বক্তব্যে নিরীক্ষাধর্মী একটি কবিতা রচনা করেন। তা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আরবি কবিতায় যুক্ত হয় আধুনিক মাত্রা। তিনি ও সতীর্থ কবি বদর শাকির মিলে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারার জন্ম দেন, যা আরবি কবিতার ইতিহাসে তাফিয়া আন্দোলন বলে পরিচিত। ব্যক্তিগত জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা মালাইকা অজ¯্র কাব্যগ্রন্থ ও তিনটি কাব্য বিষয়ক প্রবন্ধ গ্রন্থের রচয়িতা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শার্পনেল এন্ড এসেস।
নববর্ষ আসে, নববর্ষ যায়। কিন্তু নারীদের কষ্ট থাকে চিরকালীন অব্যাহত। নারীরা শৃঙ্খলিত হতে হতে উড়ার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা এতই নির্যাতিত যে, মৃত্যুও তাদের অবহেলা করে। কষ্টের নির্মম পরিহাস নারীরা পদে পদে ভোগ করে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট। নাজিক আল মালাইকা  নববর্ষ কবিতায় বলেছেন,
নববর্ষ এগিয়ে চল
জেগে উঠবার কোনো সম্ভাবনা নেই আমাদের
আমাদের রক্তনালিগুলো সব শোলায় তৈরি
ওতে কোনো বিক্ষোভের প্রবাহ নেই
কে বলে আত্মার ফেটে পড়ার কথা
মৃত্যুর পর যেন কবরও প্রত্যাখ্যান করে আমাদের।
ইসরাইলের অন্যতম প্রধান কবি দাহলিয়া রাভিকোভিচের জন্ম ১৯৩৬ সালে তেল আবিবে। সাহিত্যের ছাত্রী দাহলিয়া তার প্রথাবিরুদ্ধ খোলামেলা কবিতার জন্য বিখ্যাত। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ লাভ ফর এন অরেন্জ (১৯৫৯) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই তা খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তার অপর দুই উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ শাউটিং অব এবিস এবং দ্য ড্রেস।
মন যত স্তব্ধ হোক, পাথরেও চিড় ধরে। নারীদের মন বিস্বাদে ভরপুর। কোন শান্তি তাদের স্পর্শ করে না। তবু ফোঁটা ফোঁটা পানি পাথরেও ফাটল ধরায়; আর নারীর মন যতো কষ্টেই পাথর হোক, সেও ভালোবাসা পেলে গলে খান খান হয়ে যায়। শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় শীতল প্রাণের স্পর্শ যেন অসীমকে ছোঁয়া। দাহলিয়া রাভিকোভিচ অহংকার কবিতায় বলেছেন,
অতএব শ্যাওলা জন্মায় গায়ে আগাছাও বাড়ে
সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ফিরে যায় ফের
তারা তবু গতিহীন স্থির
তারপর একদিন ছোট্ট এক সীল মাছ
এসে গা ঘষতে যায় গায়ে
আর অমনি পাথর চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে
তোমাকে বলেছিলাম না মানুষ যখন ভাঙে
এরকম আচমকাই ভাঙে।
সানিয়া সালেহর জন্ম ১৯৩৯ সালে সিরিয়ার দামাস্কাসে। কবি স্বামী মোহাম্মদ আল মাঘুত-এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে আধুনিক আরবি কাব্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ প্রেস্ড টাইম, দ্য ইংক অব এক্সিকিউশন ইত্যাদি
অভিনয় করেই আমাদের প্রত্যেকের জীবন পার করতে হয়। তবে নারীদের জীবন পুরোটাই যেন অভিনয় শিল্পে ভরপুর। তাদের মনের বেদনা অসীম, অথচ ঠোঁটের কোণে লেগে থাকে ঈপ্সিত হাসি। শরীর বেদনায় ভারাক্রান্ত অথচ গ্রীবা বাঁকিয়ে হেলেদুলে চলে তাদের শরীর। পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত অথচ পুরুষের সামনেই মেকি হাসি দিয়ে কাটাতে হয় জীবন। সানিয়া সালেহ নির্বাসন কবিতায় সে সত্যই উন্মোচিত করেছেন।
শোকের কারণে
সে ওইসব রঙিন পোশাক পরেছে
মুখে এঁটেছে সুখের মুখোশ
সে তার গল্পগুলো জিহ্বার ডগায় বেঁধে নিয়েছে
যেন তারা দুর্বল মুহূর্তে প্রতারণা না করে
তারপর মুক্তোখচিত জুতো পায়ে
সে হেলতে দুলতে এগিয়ে চলেছে
রাত্রির অন্ধকারে একা
আমার চোখ ছাড়া আর কোনো নক্ষত্র
জেগে নেই তার জন্য।
ইরাক, ইসরাইল ও সিরিয়ার নারীবাদী কবিরা শক্তিশালী কণ্ঠে গেয়েছেন মানবতার জয়গান। নারীদের প্রতি ধর্ষণ, অত্যাচার, বৈষম্য প্রভৃতির বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার। নারীদের জেগে ওঠার আহ্বান রয়েছে তাদের কবিতায়। যে সব পুরুষদের জন্য নারীরা অবহেলিত, তাদের বিরুদ্ধে এ সকল কবিদের রয়েছে দারুণ ঘৃণা-ক্ষোভ। নারীরা নিষ্পেষিত, নির্যাতিত। এ অবস্থা থেকে তাদের উত্তরণ দরকার। শুধু বসে বসে অশ্রু ফেলা নয়। অশ্রুই যেন হয়ে ওঠে শক্তিশালী বারুদ আর অন্যায়কে প্রতিরোধ করতে পারে যথাযথভাবে। এটাই ইরাক, ইসরাইল ও সিরিয়ার নারীবাদী কবিতাগুলির মূল সুর। মূল ধ্বনি, মূল সুর একাকার হয়ে মিশেছে মনের সত্য সাগরে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন