সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বান্দাহর হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না

আল্লামা মুহিব খান | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

মানুষের সঙ্গে যাবতীয় দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতুলনীয় সুন্নতসমূহের অন্যতম একটি সুন্নত। কোনো মুসলমান প্রকৃত ঈমান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবেদারির দাবি করতে পারে না, যদি সে লেনদেন ও হক আদায়ে স্বচ্ছ না হয়। মানুষের সারাজীবন জুড়েই ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সমাজ ও সমষ্টিগত লেনদেন বা দেনা-পাওনার সম্পর্ক বিদ্যমান। জীবনযাপন সংসার সমাজে দেনা-পাওনার বাইরে কেউ থাকে না। যদি কেউ ইচ্ছা করে চাকরি, বাণিজ্য বা ধার-দেনার মতো কোনো কাজে নাও জড়ায়, তবুও তার ওপর উত্তরাধিকারসহ নানা রকম অনিবার্য বিষয় এসেই যায়।
সে ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সুন্নতটির অনুসরণ তার ওপর আবশ্যক। দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে শরীয়তের কঠোরতা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন সকল হকদারের হক অবশ্যই আদায় করে দেয়া হবে। এমনকি শিংবিহীন ছাগলের হক শিংওয়ালা ছাগলের কাছ থেকে আদায় করে দেয়া হবে। -সহীহ মুসলিম

এ হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যায়, দুনিয়াতে মানুষে মানুষে শুধু নয় কুল মাখলুকাতের মাঝে বিদ্যমান সকল অন্যায় বৈষম্য ও বে-ইনসাফির সমতা বিধান ও সমাধান আখেরাতের আদালতে হবে। কেউ কারও হক নষ্ট করে দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও আখেরাতে তাকে অবশ্যই পাকড়াও করা হবে এবং সে হক আদায় করা হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তা হলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেয়া হবে।’ -সহীহ বুখারী

এই হাদিস নির্দেশ করে হক আদায়ের অনিবার্যতার প্রতি। আমরা অনেক সময় মনে করি, দুনিয়াতে ছোটখাটো দেনা-পাওনা আদায় না করলেও বা করতে না পারলেও তেমন কোনো অসুবিধা নেই। পাওনাদার কয়েকদিন তাগাদা করে পরে এক সময় নিজেই ভুলে যাবে বা হাল ছেড়ে দেবে। সত্যিই এমনটিই ঘটে থাকে। কিন্তু দুনিয়াতে শক্তি বা সুযোগের অভাবে পাওনা আদায় করে নিতে না পারলেও আখেরাতের আদালতে সে তার পাওনা ঠিকই চাইবে, এমনকি যদি সে দুনিয়াতেই ক্ষমা করে দিয়ে না থাকে তবে আখেরাতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বা সামান্যতম দেনা-পাওনার দাবিও সে ছাড়বে না।

কারণ, সেখানে লেনদেন অর্থ-সম্পদের বিনিময় করার সুযোগ থাকবে না বলে নেক আমল দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আর আখেরাতে নেক আমলের চেয়ে প্রয়োজনীয় আর কিছুই হবে না। সুতরাং দুনিয়াতে অর্থ-সম্পদে বা সম্মানের হক ফেরত না পেলেও আখেরাতে হক আত্মসাৎকারীর কাছ থেকে নেক আমল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের আমলের পাল্লা ভারী করার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না।

হাদিসে এ কথাও বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি বা হক নষ্টকারী ব্যক্তির নেক আমল না থাকলে বা ফুরিয়ে গেলেও তার ছাড় নেই; বরং পাওনাদারের পাপের অংশ তাকে চাপিয়ে দেয়া হবে এবং পাওনাদারকে পাপমুক্ত করা হবে। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। কত মর্মান্তিক এই হাদিসের ঘোষণা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
কাজী হাফিজ ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
কারো হক কখনো নষ্ট করবেন না , কাউকে কষ্ট দিবেন না ! যদি ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে কষ্ট দিয়েও ফেলেন তাহলে তার কাছ থেকে অবশ্যই মাফ চেয়ে নিন কেননা ঐ ব্যক্তি যদি আপনাকে মাফ না করে তাহলে আল্লাহ ও আপনাকে মাফ করবেন না !
Total Reply(0)
মরিয়ম বিবি ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
হ্যা এটাই সত্যি । বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেন-নি।
Total Reply(0)
নাসিম ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৬ এএম says : 0
কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে যে ভাবেই হোক তাকে তার পাওনা ফিরিয়ে দিতে হবে, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে।
Total Reply(0)
মশিউর ইসলাম ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১৭ এএম says : 0
তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ জমীন থেকে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন ইনশা-আল্লাহ। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করে থাকলে সেটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।
Total Reply(0)
Foysal Ahmed ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:১২ এএম says : 0
Thanks a lot to writer
Total Reply(0)
Md.Sohel Parvez ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৫৮ এএম says : 0
ONAK VALO LAGLO
Total Reply(0)
Sarwar Alam Mazumder ১০ মার্চ, ২০২০, ৪:৫৯ পিএম says : 0
We are requesting you can publish such useful Hadiths frequently. May Allah reward you with His bounties.
Total Reply(0)
Faisal ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:২৮ এএম says : 0
আমি যদি কারও প্রাপ্য অর্থ ফেরত না দিয়ে থাকি তবে ইসলামে এর বিধান কি?
Total Reply(0)
Mohammad ১৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:৩১ এএম says : 0
তওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করে থাকলে সেটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহও ক্ষমা করবেন না।
Total Reply(0)
Al Amin ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:৪৫ পিএম says : 0
আল্লাহর হক (সলাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি) চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন কিন্তু বান্দার হক আল্লাহ কখনও ক্ষমা করবেন না এটা বান্দার অধিকারের কাছে সীমাবদ্ধ রেখেছেন যদিও আল্লাহ সর্বশক্তিমান।
Total Reply(0)
Mobin Ibney Hossain ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৩৪ এএম says : 0
আমি একজনকে অংশিদার ব্যবসার উদ্দেশে অনেক বিশ্বাস করে অনেকগুলো টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করে না। ফোনও ধরে না। আমার অনেক কস্টের টাকা। আমি বলে বুঝাতে পারবো না।।।।আমি কখনো মাফ করবো না।।।
Total Reply(0)
Afroja Rahman Jhumu ৬ মার্চ, ২০২২, ১০:৫৭ পিএম says : 0
আমি যদি কারোর হক আদায় না করে থাকি এখন করা সম্ভবও না কারণ মানুষটা অপরিচিত & কোথায় আছে জানিনা কিন্তু আমি অনুতপ্ত। এখন আমার করণীয় কি? আমি পরিশোধ করতে চাই কিন্তু মানুষটা কোথায় আছে বা কে এই মানুষ আমি জানিও না। প্লিজ, হেল্প মি। আমি সত্যি অনুতপ্ত।
Total Reply(0)
Lalacahen ismlam ৯ এপ্রিল, ২০২২, ৩:৩৩ পিএম says : 0
কিস্তি টাকা তো হারাম টাকা আত্মোসাত করলে এটা কী বান্দার হক বুঝায়
Total Reply(0)
Syed Abdul Kafi ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৭ পিএম says : 0
হাদীসের বরাত দিলে অবশ্যই কোন কিতাবের, কোন অধ্যায়ের কত নম্বর হাদীস তা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক। পাঠকের হক আছে হাদীসের সঠিকতা যাচাই করার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন