বাজারে বিভিন্ন রকমে ও স্বাদে বিস্কুট ও চানাচুর পাওয়া যায়। এসব খেতে সুস্বাদু হলেও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান , ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমান খুব কম থাকে। সহজলভ্য কম মূল্যের মাছকে ব্যবহার করে অধিক পরিমান পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট ও চানাচুর উৎপাদনের জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (শেকৃবি) ফিশারিজ, একোয়াকালচার এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একদল গবেষক। বাকৃবির মাছের আচার ও নুডুলস এর পর এবার শেকৃবিতে বিস্কুট ও চানাচুর উৎপাদন করলো।
নিজস্ব অর্থায়নে ফিসারিজ অনুষদের শিক্ষকগণ কয়েক মাস যাবৎ গবেষনা করে বাংলাদেশে এই প্রথম পাঙ্গাস মাছের বিস্কুট ও চানাচুর (ঝঅট ঋরংয ইরংপঁরঃ-১্ ঝঅট ঋরংয ঈযধহধপযঁৎ-১) এবং সিলভার কার্প মাছের বিস্কুট ও চানাচুর (ঝঅট ঋরংয ইরংপঁরঃ-২ ্ ঝঅট ঋরংয ঈযধহধপযঁৎ-২) উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। গবেষনা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেন শেকৃবির প্রভাষক মোঃ মাসুদ রানা, সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন অত্র অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব। কার্যক্রমটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন করেন ড. এ. এম. সাহাবউদ্দিন, এবং ড. মোঃ মহিব্বুল্লাহ।
বর্তমানে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পন্ন, প্রতি বছর লক্ষ্য মাত্রা হতে অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে পাঙ্গাস ও সিলভার কার্প মাছ দুটির উৎপাদনের হার বেশী কিন্তু ভোক্তাদের চাহিদা ও বাজার দর দিন দিন কমতে থাকায় চাষীরা পাঙ্গাস ও সিলভার কার্প মাছ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। মাছ দুটির প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধি সহ মূল্য সংযোজন (ভ্যাট) পণ্য উৎপাদন করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে মাছ দুটিকে চাষী পর্যায়ে পাওয়া যাবে না বলে গবেষকরা মনে করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাঙ্গাস ও সিলভার কার্প মাছ দুটির প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা বৃদ্ধি ও চাষীদের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে শেকৃবির ফিশারিজ, একোয়াকালচার এন্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের একদল গবেষক তুলনামূলক কম মূল্যের মাছগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে সুস্বাদু ও পুষ্টি গুন সমৃদ্ধ বিস্কুট ও চানাচুর উদ্ভাবন করেন। যা একই সাথে মানুষের দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান , ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মিটাবে।
যে কোন সময় খাবার উপযোগী খাদ্য দুটি মোড়কজাত পণ্য হিসাবে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন সম্ভব। ফলে চাষী পর্যায়ে পাঙ্গাস ও সিলভার কার্প মাছ উৎপাদনে আগ্রহ বাড়বে। তাছাড়াও পুষ্টি গুনে ভরপুর এবং প্রাণীজ আমিষ সমৃদ্ধ এই পণ্যগুলো ছোট ছেলেমেয়েদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং গর্ভবতী নারীদের পুষ্টির সংকুলানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে গবেষক দল দাবি করেন।
অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের গবেষনায় দেখা গেছে মাছের বিস্কুট ও চানাচুরে মোটামুটি ৪০-৫০ শতাংশ আমিষ, ২০-৩০ শতাংশ চর্বি, ২০-২৫ শতাংশ শর্করা, ১০-১৫ শতাংশ মিনারেল এবং ১০-১২ শতাংশ ফাইবার বিদ্যামান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ এর নিকট গবেষকদল তাদের উদ্ভাবিত বিস্কুট ও চানাচুর হস্তান্তর করেছেন। এবং উদ্ভাবিত পণ্য খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের গবেষণা পরিচালনায় সর্বাত্ত্বক সহযোগিতা তিনি করবেন। এ ধরনের মূল্য সংযোজিত মাছের উদ্ভাবন পাঙ্গাস ও সিলভার কার্প মাছের মত স্বল্পমূল্যের মাছ চাষে চাষীদেরকে সঠিক বাজার মূল্য পেতে সহায়তা করবে এবং সাথে সাথে বাংলাদেশের জনগনের আমিষের চাহিদা পূরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন