রাজধানীতে চলছে হরদম রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। দফায় দফায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের ভয়াবহ দুরবস্থা। নগরবাসী প্রতিনিয়ত ঝুঁকি, বিড়ম্বনা ও কষ্টকে সঙ্গী করেই এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের পশেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মুগদাপাড়া, মানিকনগর ও ধলপুরের বিভিন্ন সড়কে একযোগে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। রাস্তা খুঁড়ে তোলা ময়লা-আবর্জনাসহ বিভিন্ন আকৃতির পাইপগুলো সড়কের উপরেই রেখে দেয়া হয়েছে। কোথাও রাস্তার মাঝখানে আবার কোথাও রাস্তার একপাশে মাটি ও পিচ-পাথরের বড় বড় খন্ডগুলোও স্ত‚প করে রাখা হয়েছে। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই এই সড়কগুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে চরম জনদুর্ভোগ। এসব সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনের আরোহী ও পথচারীদের এ নিয়ে যেন বিরক্তির শেষ নেই।
বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর আওতাধিন মানিকনগর বিশ্বরোড থেকে বালুর মাঠ পর্যন্ত সড়কটি প্রায় দেড় বছর ধরে অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ৫ থেকে ৬ বার এ সড়কটি খোঁড়াখুঁড়ির কবলে পড়েছে। বর্তমানের প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এই সড়ক দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলার কারণে এই সড়কটি বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বন্ধ থাকার কারণে মানিকনগর, মুগদাপাড়া, মান্ডা, ঝিলপাড় ও মানিকনগর বালুরমাঠ এলাকার প্রায় দুই লাখ মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। প্রতিদিন এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, কল কারখানা ও গার্মেন্টসের কর্মীরা এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়াও এ সড়কটির পাশে রয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদরাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পায়ে হেটে জীবনের ঝুকি নিয়ে প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়ত করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ধীরগতিতে চলা এ কাজ শেষ হতে আর কতদিন সময় লাগবে এ তথ্য কারও জানা নেই।
এছাড়াও রাস্তাটির বেশ কয়েক স্থানে ম্যানহোলের উপর ¯øাপ ব্যবহার করতে হয়। সেই ¯øাপের দশাও করুন। এ ¯øাপগুলো কি ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি, নাকি কাদা-মাটি দিয়ে তৈরি। তা নিয়েও জনমনে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে। ম্যানহোলের মুখে ¯øাপ বসিয়ে যাওয়ার দুয়েক দিনের মাথায় এগুলো ভেঙ্গে ঝুরঝুরে মাটির মত হয়ে দেবে যায়। এতেকরে এই পথ দিয়ে চলাচলকারিদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। প্রতিদিন দেড় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই বসে থাকতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিথুন চন্দ্রশীল বলেন, বিভিন্ন সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য এই সড়ক কাটার জন্য অনুমতি দিতে হয়েছে। গত ছয় মাসের মধ্যে পরপর কয়েকটি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান এই সড়কটি কেটে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণে ইচ্ছা থাকার পরও আমরা সড়কটি মেরামত করতে পারিনি। তিনি বলেন, বর্তমানে সড়কটি উন্নয়নের কাজ অতিদ্রæত এগিয়ে যাচ্ছে। আর মাস খানেকের মধ্যে সড়কটি দিয়ে এলাকাবাসী নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।
এ সড়কটি দিয়ে নিত্য চলাচলকারী মানিকনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক কতদিন বন্ধ থাকতে পারে এর আগে আমার জানা ছিল না। গত প্রায় দুই বছর ধরে আমাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কটি দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে। আর গত ছয় মাসেরও বেশি সময় সড়কটি দেয়ে কোন প্রকার যানবাহন যাতায়াত করতে পারে না। তিনি বলেন, এই সড়কটি দিয়ে এখন পায়ে হেটে যাতায়াত করতেও ভয় হয়। যে কোন সময় ময়লা-আবর্জনায় কিংবা গর্তে পড়ে যে কোন দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, আমি এমন ধরণের উন্নয়ন কাজ এর আগে আর কখনো দেখিনি। উন্নয়নের নামে একটা সড়ক একেবারে বন্ধ করে দিয়ে এলাকাবাসীকে বিপদে ফেলা ছাড়া আর কি হতে পারে।
এ এলাকার একজন গৃহিনী রুম্পা আক্তার মৌলী বলেন, প্রতিদিন ছেলেকে নিয়ে এই সড়কটি দিয়েই স্কুলে যেতে হয়। স্কুলের সময় হলে ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, এই সড়ক দিয়ে চলাফেরা তো নয় যেন জমের সাথে যুদ্ধ করা। এইভাবে যে আর কত কাল এই যুদ্ধ করতে হবে কে জানে।
একদিকে এই এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা যেমন বেহাল অন্যদিকে স্যুয়ারেজ লাইনগুলোও ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোনো কোনো রাস্তায় মলমূত্র ছড়িয়ে পড়ে। আছে পানিবদ্ধতার সমস্যা। এই এলাকার দিনের পর দিন যত্রতত্র পড়ে থাকে ময়লা-আবর্জনার স্ত‚প।
খোঁড়াখুঁড়ির এমন চিত্র শুধু মানিকনগরের এই সড়কেরই নয়। এই চিত্র এখন রাজধানীর প্রায় সড়কেরই। এর মধ্যে দুয়েকটি দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা, পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বুঝার উপায় থাকে না কোথায় খানাখন্দক আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ, মেট্টোরেলের কাজ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক, অলিগলি খুঁড়ছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এক প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পরদিন আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খুড়ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমন সমন্বয়হীনতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার জন্যই নগরীর এই বেহাল দশা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রেকৌশলী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির অঞ্চল-৫ এর আওতাধীন মানিকনগর বিশ্বরোড থেকে বালুরমাঠ সড়কে ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব এই কাজটি যেন শেষ করা হয়।
ডিএসসিসি’র ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল বসিত খান বাচ্চু বলেন, মানিকনগর বিশ্বরোড থেকে বালুরমাঠ সড়কটির উন্নয়ন ও স্যুয়ারেজের কাজ চলার কারণে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীদের সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন আমাকে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করার অনুরোধ করেছি। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন