শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়ি ও ভাঙ্গাগড়ার খেলা রাজধানীজুড়ে

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর রাস্তাঘাটে সংস্কার আর ভাঙ্গাগড়ার খেলা চলছে। সপ্তাহ কিংবা মাস নয়-বছরের পর বছর ধরে চলে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। একটা প্রতিষ্ঠান শেষ করে তো আরেক প্রতিষ্ঠান শেষ করে। দেখা যায়, গোটা রাস্তা সংস্কার ও পুনঃনির্মাণনের পর আবার একই রাস্তায় গভীর খনন চলছে। এতে করে একই রাস্তা বার বার খনন করার কারণে রাস্তার অস্তিত্ব থাকে না। তখন গাড়ি চলা তো দূরের কথা পায়ে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে যায়। ওই রাস্তাকে ঘিরে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। ভোগান্তি বাড়ে নগরবাসীর। রাজধানীর কাকরাইল ও রামপুরায় এমনই খনন কাজ প্রতিদিনের ভোগান্তি কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। রামপুরায় টিভি ভবনের বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ শেষ না হতেই সেখানে স্যুয়ারেজ লাইনের মোটা ব্যাসার্ধের পাইপ রাখা হয়েছে রাস্তার উপরেই। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, খুব শিগগিরি সেখানে স্যুয়ারেজ লাইনের জন্য খনন কাজ শুরু হবে।
ভুক্তভোগিদের মতে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাও এসব খোঁড়াখুঁড়ির যন্ত্রণার বাইরে নয়। সমন্বয় করে কাজ করলে নগরবাসীকে এতোটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না। সেবা সংস্থার সমন্বয়হীন উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধকলে বছরের পর বছর ধরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।
শুধু কাকরাইল, রামপুরা নয়, গোটা রাজধানীজুড়েই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে করে সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। প্রতিদিনই এসব সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা, তিতাস গ্যাস ও টেলিফোন বিভাগসহ নানা উন্নয়ন সংস্থার দফায় দফায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই রাজধানীর-বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের এই বেহাল দশা। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও এসব সড়কের অনেক জায়াগায় কার্পেটিং, পাথরকুচি ও ইট উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জানত চাইলে ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্দেশ আছে বর্ষার আগেই সব ধরনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করতে হবে। এজন্যই বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে।
রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় রাস্তার পাশে বড় গর্ত করে স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। স্থানীয় এক গাড়ির ব্যবসায়ী বলেন, পল্টনের দিক থেকে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে কাজের বেশ গতি ছিল। এখন চলছে ঢিমেতালে। আমাদের শোরুমের সামনেই অপরিকল্পিতভাবে বিশাল গর্ত করা হয়েছিল। এতে করে কয়েকটি দোকান ভেঙ্গে পড়েছে। মার্কেটের সামনে গর্ত সুতরাং কয়েকদিন ব্যবসা একেবারেই চলেনি। এখন চশমার মার্কেটের বেহাল অবস্থা। ওই ব্যবসায়ীর মতে, এতোবড় ধরনের কাজ করার আগে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলা উচিত। এতে তারাও একটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখার সুযোগ পেতো। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কয়েকদিন পর আবার আরেক সংস্থা একই স্থানে যে কাজ শুরু করবে না তার গ্যারান্টি কোথায়। পল্টন থেকে কাকরাইল পর্যন্ত স্যুয়ারেজ লাইনের এই খনন কাজের জন্য যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে যানজট অসহনীয় পর্যায়ে ঠেকছে। যার প্রভাবে পল্টন, কাকলাইল এলাকা ছাড়িয়ে শাহবাগ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে।
রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের বকশী বাজার অংশে ভাঙ্গাচোরাসহ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। ফ্লাইওভারটি মূলত ঢাকা মেডিক্যালের সামনে নামলেও ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ রাস্তার দু’পাশে ডিভাইডার দিয়ে বকশীবাজার পর্যন্ত দখলে রেখেছিল। এর দু’পাশে ১৫ ফুটের মতো রাস্তা খালি ছিল যানবাহন চলাচলের জন্য। সেই ডিভাইডারগুলো ভাঙ্গা হচ্ছে। এতে করে ওই রাস্তায় রাত-দিন ভয়াবহ যানজট লেগেই আছে। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, মেডিক্যাল থেকে বকশীবাজর পর্যন্ত শুধু শুধু ফ্লাইওভারের ডিভাইডার দেয়া ছিল। এতে করে রাস্তায় গাড়ি চলাচল করতে পারতো না। এ নিয়ে বহুবার অভিযোগ দেয়ার পর ডিভাইডার ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কার হলে ওই এলাকার যানজট একেবারে কমে যাবে বলে ওই ট্রাফিক পুলিশ জানান। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য,  শুধু ডিভাইডার ভাঙলেই হবে না এই এলাকার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ না করলে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোটা রাজধানীজুড়েই রাস্তাগুলোতে নিম্নমানের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করায় পিচ ঢালাই, ইট, বালি, সুরকি, খোয়া উঠে মাটি বেরিয়ে এসেছে। রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের প্রধান রাস্তাটির বেহালদশা বেশ কিছুদিন ধরে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে আইসিডির দিকের রাস্তাটিরও বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরে।
মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলায় মালিবাগ এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কের অবস্থা বেহাল। বিশেষ করে মগবাজার, মালিবাগ মৌচাক, ইস্কাটন, সাত রাস্তার মোড় ও এর আশপাশের রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ। মগবাজার থেকে সাতরাস্তার মোড়ের দিকে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলার কারণে এখানকার রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি না হলেও এসব গর্তে পানি জমে থাকে। সব সময়ই এ এলাকায় কাদাপানি থাকতে দেখা যায়। একটু গতিতে গাড়ি চললেই রাস্তার ময়লা কাদাপানি পথচারীদের শরীরে গিয়ে পড়ছে।
এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা এবং রামপুরা থেকে পল্টন পর্যন্ত সড়কের চেহারাও খুবই খারাপ। এ সড়কের সংস্কার এবং উন্নয়নের দুই সিটি কর্পোরেশন গত তিন অর্থবছরে প্রায় ১৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। মালিবাগ-শান্তিনগর এলাকার সড়ক সংস্কারে আলাদাভাবে কাজ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এরপরও এ সড়কে পিচ ঢালাই দুর্বল হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পিচ ঢালাই উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা জানিয়েছেন, নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে পাল্লা দিয়ে ঢাকা ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, ডেসা, ডেসকোসহ বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী সংস্থা উন্নয়নের নামে শুরু করে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। আর পরিকল্পনার অভাবে একই রাস্তা বারবার কাটা পড়ে, যা এখন একরকম ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে। কিছু রাস্তায় ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে তা কার্পেটিং না করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়। অথচ সেবা সংস্থাগুলোর উন্নয়নকাজে খোঁড়াখুঁড়ির ২৮ দিনের মধ্যে শেষ করার নিয়ম। এসবের জন্য রাজধানী উন্নয়নে সরকারের মহাপরিকল্পনা এবং সিটি করপোরেশনের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আরজু ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৮ এএম says : 0
একটা সুশৃংখল পদ্ধতিতে এগুলো হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Rahman Sadman ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২১ এএম says : 0
এ না হলে কি আর ইনকাম হবে। প্রতি বছরেই তা হয়,আর এটাই হলো ডিজিটেল এর নতুন নমুনা।
Total Reply(0)
Fahim Liton ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২১ এএম says : 0
Vai Ai kag ta valo hochea kostw holea o Karon Ai lane dea moila pani bear hobea Ai ta oneak dorkar jodi kajta thik vavea hye
Total Reply(0)
Hasan Mohammad Akram ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:২২ এএম says : 0
উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন
Total Reply(0)
Firoz ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪০ এএম says : 0
বছরের পর বছর ধরে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী।
Total Reply(0)
Mamun ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৪১ এএম says : 0
সমন্বয় করে কাজ করলে নগরবাসীকে এতোটা ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
Total Reply(0)
Sumon ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১১:৫৫ এএম says : 0
Many many thanks to the reporter and Inqilab
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন