এগুলো বিচ্ছিন্ন, আবার অবিচ্ছিন্ন ঘটনা। এগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, গালকালচার কমে গেলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। ভারতীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে গোটা জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীরে এখন সশস্ত্র বিদ্রোহীর সংখ্যা দুইশ’-চারশ’র মতো। এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, সশস্ত্র গ্রæপে সশরীরে যোগ দেওয়া মিলিট্যান্টের সংখ্যা হয়তো কমে গেছে। কিন্তু, ভারতের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ মানুষের সংখ্যা কমেনি। নিহত জঙ্গির প্রতি সমবেদনাও সমর্থন জানানোর মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
সাম্প্রতিক সময়ের আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, একবার জানা গিয়েছিল, ইদানীং মিলিট্যান্সিতে যোগদানের জন্য প্রথম শর্ত হলো, সরকারি বাহিনীর কোনো সদস্যের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনতাই করতে হবে। এবং, প্রায়ই খবরের কাগজে পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যায়। আরও লক্ষণীয়, ইদানীংকালের নিহত হওয়া মিলিট্যান্টদের অধিকাংশই এক বছর বা দুই বছর আগে যোগ দিয়েছে। কেউবা মাত্র ছয় মাস আগে যোগ দিয়েছে। অর্থাৎ তারা পুরনো বা অভিজ্ঞ মিট্যিান্ট নন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ওই সব নতুন বিদ্রোহী লাইন অব কন্ট্রোল পেরিয়ে ওপারে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে আসার খবর তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া, আগের মতো প্রকাশ্য সহায়তা পাকিস্তানের ওপাশ থেকে এখন দেওয়া হয় না। ভারতীয় প্রহরাও বেশ কড়া বলে জানা যায়। ফলে, অনুমান করা যেতে পারে যে, ওই সব মিলিট্যান্ট ভারত শাসিত জেঅ্যান্ডকের মধ্যে কোথাও ট্রেনিং নেয়। দক্ষিণ কাশ্মীরের ত্রাল এলাকার পাহাড়ি জঙ্গলে বুরহান মুজাফফার ওয়ানি (৮ জুলাই, ২০১৬ তারিখে নিহত) প্রায় ছয় মাস ধরে অবস্থান করেছেন। উল্লেখ্য, ত্রাল এলাকাটির সঙ্গে পাকিস্তান সীমান্তের কোনো সংযোগ নেই। সেখানকার জঙ্গলে বসে সশস্ত্র ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করেছেন বুরহান। আর সেসব ছবি দেখে কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকায় ‘বুরহান ভাই আগে বাড়ো, হাম সব লোক তোমহারা সাথ হ্যায়’-এমন শ্লোগান হয়েছে। এসব বিষয়ের কারণে কাশ্মীরের মিলিট্যান্সির বিষয়টিকে বেশ জটিল মনে হয়। তবে, সন্দেহাতীত বিষয় হলো, কাশ্মীরিদের ভারত-বিরোধীতা শতভাগ সমর্থন করে পাকিস্তান। যাই হোক, সংঘাতের কারণে মৃত্যুর আলোচনা চলছিল। বিষয়টির বর্তমান অবস্থা বুঝতে খবরের কাগজে আসা নিহতের সংখ্যার একটি টালি করেছিলাম এক মাসের জন্য। সে অনুসারে সেপ্টেম্বর (২০১৫) কাগজে প্রকাশিত অপমৃত্যুর মোটসংখ্যা ২৯। এরমধ্যে ১৬ জন সশস্ত্র বিদ্রোহী। পাঁচজন নিরস্ত্র নাগরিক, দুজন শিশু, পাঁচজন সৈন্য বা পুলিশের সদস্য। একজনের মৃত্যু হয়েছিল সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে গুলিবিনিময়ে। ওই মাসটি হলো তুলনামূলক একটি স্বাভাবিক মাস সেখানকার।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা রাজ্য সরকারের একটি রিপোর্ট বলছে, ২০১২-২০১৫ সালের মধ্যে দুই লাখ ১৫ হাজার ১১০টি পরিবার সীমান্তে গোলাগুলির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী ৪৪৮টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। সীমান্তের ভারতীয় অংশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা পাঁচ লাখ। মোট গ্রাম ৫৯০টি। যার মধ্যে ৪৪৮টি হুমকির মুখে থাকে সবসময়। আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও লাইন অব কন্ট্রোলের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ভারতীয় অংশে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩২ হাজার ১৪৪ জন। কাঠুয়া, সামবা, জস্মু, পুঞ্চ, রাজৌরি এই পাঁচটি জেলা সীমান্ত বরাবর রয়েছে। হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল এক ডকুমেন্টারিতে সাফল্যের গল্প হিসেবে তুলে ধরেছিল গুলজার আহমেদ নামে এক বৃদ্ধকে। তিনি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দুটি পা হারিয়েছিলেন। এখন কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে হেঁটে বেড়ান। সংস্থাটির তথ্যমতে, ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২০৬৪ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন