মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। হাজারো পর্যটকদের ভিড়ে কুয়াকাটা এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে নেচে গেয়ে গোসল, হৈ হুল্লোড় আর সৈকতে খেলাধুলা আনন্দের সীমা নেই পর্যটকদের মাঝে।
সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনসহ সৈকতে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর উম্মাদনা যেন সমুদ্র ভ্রমণের নতুন এক অনুভ‚তি জোগায়। কুয়াকাটা লেম্বুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চর, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, কুয়াকাটার কুয়া, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার, রাখাইনদের তাঁত পল্লী, আলীপুর-মহিপুর মৎস্যবন্দরসহ দর্শনীয় স্পট গুলোতে যেন তীল ধারনের ঠাঁই ছিলনা। অন্যদিকে সমুদ্রের মাঝে জেগে ওঠা চর বিজয়,সুন্দরবনের পুবাংশ ফাতরার বনসহ আকর্ষণীয় সব পয়েন্টই ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। রাতে সৈকতে জোসনার আলোয় সমুদ্রের ঢেউ আর ঢেউয়ের গর্জন আর এক অন্যরকম অনুভ‚তি মন ছুঁয়ে যায়।
এছাড়া শীতের এই রাতে সৈকতের কোলঘেঁষে অবস্থিত মুখরোচক খাবার কাকড়াসহ বিভিন্ন প্রকার সমুদ্রের মাছ ফ্রাই খাওয়ার স্বাদই আলাদা। এমন মুখরোচক স্বাদ পর্যটকদের বার বার কুয়াকাটার কথা স্বরণ করিয়ে দেবে বলে মনে করেন ভ্রমণ বিলাসীরা। আগত পর্যটকরা জানান, বিজয় দিবসের আনন্দ উপভোগ করতেই তারা কুয়াকাটায় এসেছেন। নিজের দেশকে ঘুরে দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন এই বিজয়ের মাস। এখানকার সৌন্দর্য তাদের মুগ্ধ করেছে। কুয়াকাটা এমন একটি সমুদ্র সৈকত যেখানে বার বার আসতে ইচ্ছে করবে অবসর পেলেই এমনই অভিমত পর্যটকদের।
পর্যটক দম্পত্তি আকতার হোসেন এবং মিসেস আকতার বলেন, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এখানকার মানুষজন তাদের খুবই ভালো লেগেছে। কুয়াকাটার প্রেমে পরে গেছেন তারা দুজন। তাই তারা বার বার এখানে এসেছেন। এখানে তারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করার কথাও ভাবছেন।
আকতার হোসেন আরো বলেন, বিশ্বের অন্যতম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। দিনে দিনে কুয়াকাটা পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিতি বাড়ছে। বাড়ছে এখানকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক ও নদী পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বাড়ছে কুয়াকাটা পর্যটনের সক্ষমতা। কুয়াকাটাকে ঘিরে বর্তমান সরকার সুদূর প্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পণা গ্রহন করেছে। তবে এখানকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও অনুন্নত থাকায় দর্শনীয় স্পটগুলো দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পর্যটকরা।
এ বছর পর্যটন মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছিল। বিজয়ের মাসে ব্যবসায়ীদের সেই হতাশা কাটিয়ে মুখে হাসি ফুটেছে। পরীক্ষা শেষে সমুদ্র সৈকত এখন প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিজয়ের মাস থেকে কুয়াকাটায় ভিড় বাড়তে শুরু করে। আবাসিক হোটেলগুলোর বেশির ভাগ বুকিং থাকছে। বিশেষ করে আবাসিক হোটেল সিকদার সিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস,কুয়াকাটা গ্রান্ড,হোটেল গ্রেভার ইন, হোটেল সী ক্রাউন ইনসহ প্রথম শ্রেণির হোটেলগুলোতে সব চেয়ে ভিড় দেখা গেছে। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে আবাসিক হোটেলের বেশির ভাগই অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন পর্যটকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, এখন থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত একটানা ভিড় থাকবে কুয়াকাটা সৈকতে।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ জানান, নভেম্বর থেকে পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে বিজয়ের মাস থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। প্রতিটি হোটেলই কম-বেশি বুকিং রয়েছে। তবে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনেক হোটেলই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। পর্যটকদের আগমন প্রতিদিনই বাড়ছে। এখন থেকে সারা মৌসুমই পর্যটক থাকবে বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন