ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সর্বত্রই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এতে সড়কগুলো পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। প্রতিদিনই এসব সড়কে ঘটছে দূর্ঘটনা। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়িতে অনেক সড়ক দীর্ঘদিন যাবত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। এসব রাস্তায় চলাচলে নগরবাসীর বিড়ম্বনার শেষ নেই। দু’য়েকটি দিয়ে কোন রকম চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযোগী। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও এসব সড়কের অনেক জায়াগায় কার্পেটিং, পাথরকুচি ও ইট উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক চলাচলের অনুপযোগি হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঝুঁকি, বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
গত কয়েকদিন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) রাস্তা-ঘাটের তুলনায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) রাস্তা-ঘাটগুলো অনেকটাই ভাল। ডিএসসিসি’র কোন কোন সড়ক একেবারেই চলাচলের অনুপোযোগী। সেই তুলনায় ডিএনসিসি’র সড়কগুলোতে খানাখন্দক থাকলেও চলাচলের উপযোগী রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রশাসনিক এলাকাখ্যাত আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরের বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা। এছাড়া নিকেতন, মহানগর প্রজেক্ট, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, হাতিরপুল, রাজাবাজার, মীরবাগ ও বনশ্রী এলাকাসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার সড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে আছে। এসব এলাকার প্রতিটি সড়ক খানাখন্দে ভরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে।
দেখা গেছে, রাজধানীর রামপুরা থেকে ডেমরা সড়কটি গত বছর সংস্কার করলেও মাদারটেক থেকে মেরাদিয়া সড়কটি সংস্কার হয়নি। খানাখন্দে ভরা সড়কটি বেহাল অবস্থা এখন নাভিশ্বাস তুলেছে এলাকাবাসীর। বনশ্রী জি ও এইচ বøকের মধ্যবর্তী এই রাস্তাটি যুক্ত করেছে প্রধান সড়ককে। কিন্তু গত দুই বছর ধরে রাস্তাটি চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। এমনিতেই খানাখন্দ তার ওপর একটুখানি বৃষ্টি হলেই তৈরি হয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি। রাস্তাটির বেহাল দশার কারণে সবেচেয়ে বিপাকে এখানকার ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে এখানে আসতে চান না ক্রেতারা। এলাকাটির সুযোগ সুবিধা দেখভালের দায়িত্ব পালন করছে বনশ্রী কল্যাণ সমিতি। তারা জানায়, রাস্তাটি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ঠিক করার কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া বসবাসকারীর সংখ্যা বাড়ায় বনশ্রী এলাকায় বাড়ছে যানজট যা তীব্র হয়ে উঠার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এছাড়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের ঠিকানা হলেও এই এলাকার আশপাশের সড়কগুলোর চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। সরকারি এসব কার্যালয়ের পাশের বেশ কয়েকটি রাস্তা প্রায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে প্রায় সারা বছর পানিবদ্ধতা থাকে। বর্ষাকালে একটু বৃষ্টি হলেই অবস্থার আরো অবনতি ঘটে। অথচ এ রাস্তাগুলোর পাশেই রয়েছে ইসলামী ফাউন্ডেশন, পরিসংখ্যান ব্যুরো, ব্যান্সডক, পিকেএসএফ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও প্রতœতত্ত¡ অধিদফতরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার জাতীয় সদর দফতর। আশপাশেই রয়েছে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা।
খানাখন্দে ভরা রাস্তা ব্যবহার করতে গিয়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন এসব সড়কে নিত্য চলাচলকারী পথচারীরা। এগুলোর মধ্যে ইসলামী ফাউন্ডেশন হয়ে পিকেএসএফ প্রধান কার্যালয়, কোস্টগার্ড সদর দফতর ও সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সামনে দিয়ে যাওয়া সড়কের অবস্থাই সবচেয়ে করুণ। এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা ৩০ ফুটের বেশি প্রশস্ত হলেও নানাভাবে দখল-দুষণে এসব সড়ক কোথও কোথাও সুরু রাস্তায় পরিণত হয়ে গেছে। একই অবস্থা শেরেবাংলা নগর এলাকার। এই এলাকার প্রায় সড়কে রয়েছে খানাখন্দ।
এ ছাড়াও মহানগর আবাসিক এলাকায় সড়কের বেহাল অবস্থা। হাতিরঝিল থেকে হাউজিং রোড, ওয়াপদা রোড, উলন রোডসহ এ এলাকার প্রায় সবকটি রাস্তার বেহাল অবস্থা। এসব আবাসিক এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কে রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। প্রতিদিনই রিকশার যাত্রী দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। পথচারীরাও চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা নিকেতন, কাঁঠালবাগান, হাতিরপুল, রাজাবাজার, মীরবাগসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার। তবে এসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য এক হাজার ৪৬৮ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের ভেতর অঞ্চল-১ উত্তরার বিভিন্ন এলাকা, অঞ্চল-৩ এর বনশ্রী, নিকেতন ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা ও অঞ্চল-৫ এর শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও এলাকা। এসব এলাকায় সড়ক ৯১ কিলোমিটার, নর্দমা ১২২ কিলোমিটার, ফুটপাত ৮৩ কিলোমিটার ও ১১ কিলোমিটার সড়ক মিডিয়ান উন্নয়ন করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালে।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির আতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, উত্তরা, বনশ্রী, মহানগর প্রজেক্ট ও নিকেতন আবাসিক এলাকায় সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল। এছাড়া শেরেবাংলা নগর ও আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকার রাস্তাগুলোরও একই অবস্থা ছিল। স¤প্রতি এসব এলাকার সড়ক, ফুটপাত, নর্দমা ও মিডিয়ান উন্নয়নে ৬৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। তিনি বলেন, সে প্রজেক্টের কাজ এখন অনেকটা শেষের পথে। এ কাজ শেষ হলে সড়কের বিড়ম্বনা অনেকটাই কমে যাবে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ, মেট্টোরেলের কাজ, ওয়াসা, তিতাস, ডেসকোসহ সবাই মিলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো সড়ক অলিগলি খোঁড়াখুঁড়ি করছে। আজ এই প্রতিষ্ঠান কাটছে তো কাল কাটছে আরেক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এক প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পরদিন আরেক প্রতিষ্ঠান এসে নতুন করে খুঁড়ছে। আর অনেক রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়। এ রাস্তা মেরামত করার কোন নাম নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমন সমন্বয়হীনতায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। নগরবাসীর এই বিড়ম্বনা দেখার যেন কেউ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার জন্যই নগরীর এই বেহাল দশা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উন্নয়ন খোঁড়াখুঁড়িতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর ১২ নম্বও সেকশন থেকে ১১ নম্বও সেকশন পর্যন্ত সড়ক। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের ভোগান্তি এখন চরমে। আবার ব্যস্ততম এ প্রধান সড়ক বাদ দিয়ে অলি-গলি দিয়ে যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থাও নেই। সেখানে খোঁড়াখুড়ি না থাকলেও দীর্ঘ সময় মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মিরপুর ১০ নম্বর বেনারসী পল্লীর কয়েকটি সড়কও বেহাল অবস্থায় রয়েছে। একই অবস্থা ৬ ও ৭ নম্বর সেকশনের। সেখানে বেশ কয়েকটি গলির রাস্তা ভেঙে আছে। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বেশকিছু গলির সড়কের অবস্থা নাজুক। স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, মিরপুর-১০ ও বেনারসী পল্লীসহ এ এলাকার রাস্তাগুলোর সমস্যা অনেক পুরনো। মাঝেমাঝে সিটি কর্পোরেশনের লোকজন এসে কাজ করলেও কয়েকদিন পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এছাড়া বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরের রাস্তাও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার বা মেরামত না করায় ভাঙ্গাচোরা ও খনাখন্দে বেহাল হয়ে পড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন