মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

শায়খুল হাদীস আল্লামা ইউনুছ পরপারে চলে গেলেন

মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামাবাদী | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

বর্তমানে বাবুনগর মাদ্রাসায় বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছে ফটিকছড়ির কৃতি সন্তান প্রবীন শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা শফিউল আলম আজিমপুরী ও হযরত আল্লামা মুফতী মাহমুদ হাসান ভূজপুরী সাহেব।

বাবুনগর মাদ্রাসায় অতীতে অনেক বড় বড় আলেম হাদীসের দরস দিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে হযরত আল্লামা শাহ ছোলতান আহমদ নানুপুরী (রহ.), হযরত আল্লামা নুরুল হক দুওয়ম সাহেব (রহ.), হযরত আল্লামা হাকিম ওবাইদুর রহমান সাহেব (রহ.), হযরত আল্লামা নুরুল ইসলাম জদীদ সাহেব (রহ.), হযরত আল্লামা হাফেজ মোঃ হারুন শাহনগরী (রহ.), হযরত আল্লামা ইয়ার মুহাম্মদ (রহ.), হযরত আল্লামা আবদুর বারী সাহেব বাশখালী (রহ.), হযরত মাওলানা সুফী আবদুল জব্বার সাহেব (রহ.), হযরত আল্লামা ইউনুছ সাহেব আজিমপুরী (রহ.), হযরত আল্লামা কবির আহমদ সাহেব রাউজানী (রহ.), হযরত আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, হযরত মাওলানা হাফেজ মাহবুবুল আলম সাহেব প্রমুখ।

বর্তমান সময়েও অনেক বিজ্ঞ আলেম হাদীস শিক্ষা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- হযরত আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, হযরত আল্লামা হাফেজ হাবীবুল্লাহ বাবুনগরী প্রমূখ।

শায়খুল হাদীস আল্লামা ইউনুছ (হাটহাজারী)-কে আল্লাহ পাক দীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। শিক্ষা সমাপনের পর থেকে ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাবুনগর মাদ্রাসাতেই শিক্ষকতা করেন। ৬৬/৬৭ বৎসর একই মাদ্রাসায় সুনাম ও কৃতিত্বে সাথে শিক্ষকতা করা একটি কেরামত।

বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দ কেন্দ্রিক ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলনের প্রথম আহ্বায়ক হযরত আল্লামা আবদুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী (রহ.)-যিনি হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী (রহ.)-এর শাগরিদ এবং বিশ্ববিখ্যাত শায়খুল হাদীস আল্লামা ফজলে রহমান গঞ্জেমুরাদাবাদী (রহ.) ও ইমামুল আউলিয়া হযরত হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মক্কী (রহ.) এর বিশিষ্ট খলিফা ছিলেন। তিনি বাবুনগর গ্রামে হযরত মাওলানা সুফী আজিজুর রহমান সাহেবের (রহ.) মেহমান হিসেবে অনেকদিন অবস্থান করে এ দেশে কওমি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের উদ্যেগ গ্রহণ করেন। হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা তার অন্যতম।

সর্বশেষ গোটা চট্টগ্রামে শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর দুইজন শাগরিদই বুখারী শরীফের দরস দিচ্ছিলেন। একজন হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব হুজুর। অন্যজন বাবুনগর মাদ্রাসায় আল্লামা মোঃ ইউনুছ সাহেব। আল্লামা মোঃ ইউনুছ পরপারে চলে গেছেন।

আমার জানামতে চট্টগ্রামে হযরত মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর ৩জন শাগরিদ জীবিত আছেন। দুইজন শাগরিদ ও খলিফা। একজন শাগরিদ। দু’জন শাগরিদ মুরিদ ও খলীফা হলেন (১) আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব- মুহতামিম হাটহাজারী মাদ্রাসা। (২) হযরত মাওলানা শাহ আবদুল হালিম সাহেব। গ্রাম : তেয়ারীখিল, পদুয়া, লোহাগড়া, চট্টগ্রাম। (কক্সবাজার রোড়)।

শাগরিদ হলেন হযরত মাওলানা আবদুল মান্নান সাহেব। সাবেক উস্তাদ জামেয়া ইসলামিয়া পটিয়া।

বর্তমানে সদর মুদাররেস তা’লিমুল ইসলাম বালিকা মাদ্রাসা, পূর্ব সুয়াবিল ভাঙ্গা দিঘীর পাড়, নাজিরহাট পৌরসভা, থানা : ভূজপুর, উপজেলা : ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম। তাদের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।

হযরত মাদানী (রহ.) এর আরেকজন খলিফা আছেন। নাম : হযরত আল্লামা আবদুল মোমিন সাহেব। বাড়ি হবিগঞ্জে। তিনি হবিগঞ্জের ইমাম বাড়ি মাদ্রাসার সাবেক শায়খুল হাদীস। হযরত মাওলানা মাদানী (রহ.) এর আরো দুইজন মুহাদ্দিস শাগরিদ আছেন : তারা হলেন (১) হযরত মাওলানা আবদুল হক সাহেব জালালাবাদী-সিলেট। মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকার অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক। ঢাকা গেন্ডারিয়া জামালুল কুরআন মাদ্রাসার সাবেক শায়খুল হাদীস। (২) হযরত মাওলানা আবদুল আলীম হোছাইনী, গফরগাও মোমেনশাহী। তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস হিসেবে নিয়োজিত। বরিশাল মাহমুদিয়া মাদ্রাসায় হযরত মাদানী (রহ.) এর একজন শাগরিদ জীবিত আছেন বলে জানা যায়।

সময়ের আলোচিত বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন, প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবের (রহ.) আম্মাজান জনাবা ফাতেমা সম্প্রতি ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার অন্তর্গত বাবুনগর গ্রামস্থ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি----------রাজেউন।

বাবুনগর মাদ্রাসাস্থ ‘মাকবারায়ে হারুনীতে’ তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এর আগে বাবুনগর মাদ্রাসার বিশাল ময়দানে তাঁর জানাযার নামায অনুষ্টিত হয়। এতে ইমামতি করেন বিশ্ববিখ্যাত আলেমেদ্বীন শায়খুল হাদীস ও শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব।

জানাযা ময়দানে পৌছার আগেই হাজার হাজার মানুষ বাবুনগর মাদ্রাসা ময়দানে পৌঁছে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে কিছু আলোচনা শুরু হয়ে যায়। বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম মরহুমার বড় ভাই হযরত মাওলানা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী, ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, বাবুনগর মাদ্রাসার অন্যতম শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা মুফতী মাহমুদুল হাসান, রাজনীতিবিদ জনাব নুর মুহাম্মদ (হাটহাজারী), মুফতী জসীম উদ্দীন হাটহাজারী মাদ্রাসা, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী এবং সর্বশেষ আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী নামাযে জানাযায় উপস্থিত হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
আল্লামা মুহিব¦ুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আমার বোন একজন পরহেযগার মহিলা ছিলেন। আব্বা তাকে খুবই ¯েœহ করতেন। তিনি পিতা এবং স্বামীর সেবা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মুফতী মাহমুদ হাসান তার বক্তব্যে বলেন, খালাম্মা ফাতেমা আজ দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে পরপারে চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষন পরই তার নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। অতঃপর তাকে দাফন করা হবে। মরহুমা একজন আদর্শ রমণী ছিলেন। অসংখ্য আলেম, হাফেজ, কারী, পীর, মাশায়েখ এর সাথে ছিল তার আত্মীয়তার গভীর বন্ধন। তার পিতা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী (রহঃ) বাবুনগর মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম, বিশিষ্ট পীরে কামেল ছিলেন। দাদা ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা সুফী আজিজুর রহমান সাহেব, নানা ছিলেন হযরত মাওলানা আবদুল আজিজ জাহাপুরী (রহ.), আর মামা হযরত মাওলানা মাসউদ সাহেব (রহ.)। মরহুমার স্বামী বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান (রহ.) শায়খুত তাফসীর হাটহাজারী মাদ্রাসা।

মুফতী মাহমুদ হাসান আরো বলেন, আপন সন্তানদেরকে তিনি আলেমেদ্বীন হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন- যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব।

যেখান থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণের অনেক কিছু রয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন