শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংয়ে যানজট

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর সড়ক যানজটের বিষফোঁড়া হিসেবে পরিচিত। এই সড়কে যানজটে প্রতিদিনই ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড়। দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের প্রায় ৩৭ কিলোমিটার গাজীপুরের সীমানায়। এই দুই মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিন কারণে অকারণে লেগেই থাকছে যানজট।

গত কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মহাসড়কজুড়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের পার্কিং। কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন সারি পার্কিং। দেখলে মহাসড়ক বলে মনেই হবে না। যেনো এটা হচ্ছে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত। এরপর চেরাগআলী, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা, সালনা, মাস্টারবাড়ি হয়ে যত ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাবেন। দু’দিকে সারি সারি শিল্প প্রতিষ্ঠান নজরে পড়বে। আর তার সামনে অলিখিত কাভার্ডভ্যান টার্মিনাল।

সবচেয়ে বেশি পার্কিং দেখা গেছে বড়বাড়ি, বোর্ড বাজার এলাকায়। এখানে রাস্তায় দু’টি গাড়ি কাটাকাটি করার কোনো সুযোগ নেই। পার্কিংয়ের জটের পাশাপাশি এসব এলাকায় দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা, অটো ও লেগুনা। ধীরগতির এই যানবাহনগুলোর পেছন পেছন যেতে বাধ্য হচ্ছে দ্রæতগামী যানবাহনগুলো। সালনা বাজারে রাস্তারার লেগুনা স্ট্যান্ড। সব সময় পনেরো-বিশটি লেগুনো সেখানে পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাততে দেখা গেছে।
হোতাপাড়ায় কাভার্ড ভ্যানের পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কে চলাচলকারী অচল বাসগুলোর মহাসড়কের পাশে অনির্ধারিত পার্কিং দেখা গেছে। এরপর মাওনা, ডিবিএল সিরামিকস, জৈনাবাজার, স্কয়ার, সিডস্টোর বাজার, ভালুকা, ভরাডোবা সর্বত্রই অবৈধ পার্কিংয়ের ছড়াছড়ি।

আলমগীর নামের এক চালক জানান, ডিবিএল সিরামিকস ও স্কয়ার গ্রæপের কারখানার সামনে সব সময় রাস্তা দখল করে পার্কিং থাকে। স্কয়ারের স্টাফ বাসগুলো সারাদিনেই সড়কের ওপর পার্ক করা থাকে। যে কারণে জ্যাম এখানে নিত্য সঙ্গী। এছাড়া রয়েছে অবৈধ বাজার। গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি-ধান-ইক্ষু গবেষণার জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মাচারীদের অনেকে যাতায়াত করেন সকালে-বিকেলে। এ ছাড়া টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে গড়ে উঠেছে বহু শিল্পকারখানা। এসব কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদেরও অনেকে এই সড়কের নিয়মিত যাত্রী। একই অবস্থা ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যানবাহনগুলোর ক্ষেত্রেও। সেগুলো আটকা পড়ে টঙ্গী সেতু থেকে। এ ছাড়া চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে যেসব দূরপাল্লার যানবাহন বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরে যাতায়াত করে, তার যাত্রীদেরও একই রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

গাজীপুর চৌরাস্তায় গিয়ে দেখা গেল, পথের বন্ধ অংশের ফাঁক দিয়ে চলছে বাস। স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরাই মোড়ে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ইমামুল হক বলেন, কাজ চলতাছে তো, তাই আমাদের ঘাম ঝরাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ঢাকা-গাজীপুর সড়কের আলম পরিবহনের বাসের যাত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ফোর লেন দিয়া কী করুম? গাজীপুরেই তো জান শ্যাষ হইয়া যাইতাছে। আধাঘণ্টার রাস্তায় লাগতাছে ১ঘণ্টা! তিন বছর আগে এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন করা হয়েছে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার সড়ক।
পুলিশ ও যাত্রীরা বলছেন, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের জয়দেবপুর-এলেঙ্গা অংশ চার লেনে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি দুটি উড়ালসড়ক এবং চারটি সেতু ও ওভারপাস চালু হয়েছে। কিন্তু সড়কে এখনো অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) এবং হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে সড়ক তদারক কমিটির এক পর্যালোচনা সভায় দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, টেম্পো, ব্যাটারিচালিত রিকশা এবং অযান্ত্রিক যানসহ সব ধরনের তিন চাকার যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা পরও ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়নি। কখনও কখনও উল্টো পথে আসছে এ ধরনের তিন চাকার যান।

এই বিষয়ে অপরাধ বিশ্লেষক ও শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দায়িত্ব সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। যে কোন নির্দেশনা যাদের ওপর বর্তায় তারা দায়িত্ব যেন সঠিক পালন করে। সড়কের শৃঙ্খলাটা দরকার। নিষিদ্ধ সড়কে যদি যান একেবারেই না উঠে দেখবেন সড়ক যানজট কিংবা দুর্ঘটনা কমে আসবে।
সফিপুরের পর চন্দ্রা ত্রিমোড়। ওই মোড়ে মিলিত হয়েছে জয়দেবপুর-এলেঙ্গা মহাসড়ক এবং ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক। উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার গাড়ি যায় এই মোড় হয়ে। গাবতলী থেকে যেসব বাস উত্তরবঙ্গ যায়, সেগুলো ঢাকা-সাভার-নবীনগর, আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা দিয়ে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়।

কোনাবাড়ী হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, যানজট কমাতে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কে এলোপাতাড়ি গাড়ি চলাচলের কারণেই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অবৈধ তিন চাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মহাসড়কে অবৈধ তিন চাকার গাড়ি চলাচল অনেক কমে গেছে। তবে এসব গাড়ি আগে ধরে মামলা দিতাম। এখন এসব গাড়ি সড়কে ওঠলেই ড্রাম্পিংয়ে পাঠচ্ছি।

এ বিষয়ে গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত হোসেন বলেন, এই রাস্তায় এখন উন্নয়নকাজ চলছে। এ জন্য একটু যানজটও হয়। তারপরও মোবাইল টিম কাজ করছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, যেসব জায়গায় কাটা (ইউটার্ন) আছে তা বন্ধ করার একটি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন