স্পোর্টস ডেস্ক : বিশ্ব রাজনীতিতে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া। যার প্রভাব এখন বিশ্বময়। এমনকি আন্তর্জাতিক অর্থনীতির বাজারেও পড়েছে এর ব্যপক প্রভাব। শেয়ারবাজার আর ডলার-পাউন্ডের মূল্যমানের পতন পরিমাপ করে এর প্রভাব নিরুপন সম্ভব। দেশ-বিদেশের কর্তাস্থানীয় ব্যক্তিরাই হয়ত এর খবর রাখেন। কিন্তু গত সোমবার ক্রিড়াঙ্গনে যে ঘটনা ঘটে গেল তাতে শুধু কর্তাব্যাক্তিরাই নয়, অতি তুচ্ছ শ্রেণীর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের রাজা পর্যন্ত সব শ্রেনীর মানুষের মনকেই বন্দী করেছে বিরহজালে। প্রিয় খেলোয়াড়কে যে আর দেখা যাবে না আকাশি-নীল-সাদা জার্সি গায়ে মাঠে প্রজাপতি নিত্য করতে, ফুটবল মাঠের ঐ বিশাল ক্যানভাসে পাবলো পিকাসোর সেই রং-তুলিরর শেষ আচড়টাও যে আর দেখা হবে না! ফুটবল বিধাতা হয়তো তাঁর কানে কাঁনে বলে গেছেÑ ‘তোর ঐ শৈল্পিক ফুটবলে শিল্প রচনা সম্ভব, চ্যাম্পিয়ন শিরোপা নয়।’ এই অভিমানেই কি তাহলে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি গুডবাই বলার সিদ্ধান্ত নিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলকে? সে কারণ যেটাই হোক, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে তিনি যে বিরহ-রাগ বাজিয়ে দিয়েছেন তাতে শুধু আর্জেন্টিনায় নয়, ভৌগোলিক সীমারেখার গ-ি পেরিয়ে সেই বিরহ রাগে এখন প্রশান্ত, স্থির, বিহ্বল পুরো বিশ্ব। মানুষের বিহ্বল মনের এই গোপন আকুতি যদি শেয়ারবাজার ধ্বসের মত পরিমাপ করা যেত, তাহলে নিশ্চয় এর চূড়ান্ত হিসাবটা পৌঁছাতো ঐ অভিমানির কাছে। প্রযুক্তির এই যুগে কিছুটা হিসাব তো করা যায়-ই। ভক্তরা তাই ফেসবুক, টুইটারসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানাচ্ছেন তাদের প্রাণের আকুতিÑ যেও না মেসি, ফিরে এসো।
সাধারণ মানুষের সেই কন্ঠে এবার কন্ঠ মেলালেন স্বয়ং ডিয়েগো ম্যারাডোনা। এই কাতারে আছেন আর্জেন্টিনা প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও মাক্রিও। এছাড়া অনেক বন্ধু-স্বতীর্থ তো আছেই। মেসির ক্লাব স্বতীর্থ ও সেদিনের প্রতিপক্ষ ক্লাদিওর ব্রাভো আগেই বলেছিলেন মেসিকে আবারো জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেখতে চান তিনি।
সত্যিই! ফাইনালের আগে যে ম্যারাডোনা শাসনের ভাষায় বলেছিলেন ‘না জিতলে দেশে ফির না’, তাকেই এখন দেখো যাচ্ছে সবচেয়ে আবেগপ্রবণ আর আদুরে ভূমিকায়। একবুক ভালোবাসা নিয়ে এবার পরাজিতদের পাশে দাঁড়ালেন সর্বকালের সেরা ফুটবলার। মেসিকে বললেন ‘যেও না।’ সামনেই রাশিয়া বিশ্বকাপ। তাঁকে ছাড়া যে আর্জেন্টিনা দল কল্পনাও করতে পারছেন না ছিয়াশির বিশ্বকাপের নায়ক, “মেসিকে আর্জেন্টিনা দলে থাকতেই হবে। রাশিয়ায় ও সেরা ফর্মে থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই যাবে। তাকে ছেলেদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হবে, যারা দলকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারবে, যারা বলে তাদের চলে যেতে হবে তাদের ওপর নয়।”
বরাবরই ঠোঁটকাটা হিসেবে পরিচিত ম্যারাডোনা। তিনি সাফ জানিয়েছেন, “যারা বলছে ওর চলে যাওয়া উচিত, তারা এমন করছে, যেন আর্জেন্টিনার ফুটবলে এখন যে জঘন্য অবস্থা চলছে, তা যেন আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।’ উল্লেখ্য ফাইনালের আগের দিনই আর্জেন্টিনা ফুটবল সংস্থার প্রধানের পদ থেকে সরে গেছেন সেগুরাকে। এর কিছুদিন আগে হয়েছে এক নির্বাচন। নির্বাচনে অনেক অনিয়মের অভিযোগ আছে। এসকিছু আমলে নিয়ে ম্যারাডোনা বলেন, “আর্জেন্টিনার ফুটবলে যা ঘটে চলেছে, তাতে আমি সত্যিই খুবই ব্যথিত আর ক্ষুব্ধ। আমরা একেবারে তলানিতে পৌঁছে গেছি।’
চিলির কাছে আবারো পেনাল্টি ভাগ্যে হারের পর টানা তিন-তিনটি ফাইনালে হারের পর অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ৫ বারের বিশ্ব সেরার সাথে দলের আরো অনেক সদস্যই অবসর নিচ্ছেন বলেও খবর বেরিয়েছে। এ খবর পৌঁছেছে ম্যারাডোনার কানেও। তাদের ওপর অবশ্য সাবেক আর্জেন্টিনা কোচের কোন সহমর্মিতা নেই। তাঁর মতে, ‘আমরাও চলে যেতে চাই’ জাতীয় কথাবার্তা বলে ওইসব খেলোয়াড়েরা নাকি শুধু সহমর্মিতা কুড়ানোর চেষ্টা করছেন!
দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিত্ব প্রেসিডেন্টও মেসিকে ফোন করে বলেছেন অভিমান ভুলে ফেরার কথা। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেসি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছেন জানার পর প্রেসিডেন্ট নিজেই ফোন করেন মেসিকে। অনুরোধ করেন জাতীয় দলের সঙ্গে থেকে যেতে। সেই মুখপাত্র বলেছেন, তিনি মেসিকে ফোন করে বলেছেন জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে কতটা গর্ব অনুভব করেন তিনি। তিনি এও বলেছেন, মেসি যেন সমালোচনায় কান না দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন