প্রায় চার দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে চা বিক্রি করে আসা 'স্বপন মামা'র পাশে দাঁড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মেয়ে ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো স্বপন মামার বিরুদ্ধেই হয়রানীমূলক মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভিত্তিক সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ডাকসুর নেতারা। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে স্বপন মামার মেয়ের ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডুজার সভাপতি আবির রায়হান। তিনি বলেন, “টিএসসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মিলন কেন্দ্র। স্বপন মামা এই টিএসসি পরিবারের একজন। স্বপন মামা টিএসসিতে চা বিক্রি করেন। কয়েক যুগ ধরে টিএসসিতে চা পরিবেশন করে তিনি যে অপরাজেয় টিএসসির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার বানিয়ে দেয়া ধুমায়িত চায়ের কাপ হাতে আমরা স্বপ্ন বুনি, গান গাই । আন্দোলন-সংগ্রাম, আনন্দ-আবেগ, প্রেম-বিরহ ইত্যাদি আমাদের জীবনের বিচিত্র নানা গল্পের সারথি স্বপন মামার চা। টিএসসি মনে মাথা উচু করে বাঁচা। প্রগতিশীলতা, সুস্থ সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সদা জাগ্রত এই প্রাঙ্গন। আবহমান কাল ধরে পশ্চাদপদতা ও সামাজিক অন্ধত্ব দূর করতে আন্দোলন সংগ্রামের এক অপর নাম টিএসসি। অথচ এই জগ্রত পরিবারের সুদীর্ঘকালের সারথি স্বপন মামাই আজ একজন নির্যাতিত মানুষের নাম।”
তিনি বলেন, “স্বপন মামার প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করে তার, গ্রামের এক লম্পট ব্যক্তি। বিচার চাইতে থানায় মামলা করেন ব্যথিত পিতা, আমাদের স্বপন মামা। অভিযুক্ত ধর্ষকের গেপ্তার হবার পর সুবিচার পাবার দিন গুনলেন স্বপন মামা ও তার পরিবার। অথচ সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়ে সেই অভিযুক্ত ধর্ষক উল্টো স্বপন মামা ও তার ছেলের নামে মিথ্যা, হয়রানিমূলক মাদকের মামলা করেছে। সার্বভৌম দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার কাছে না-বালিকা মেয়ের ধর্ষণের বিচার প্রার্থী বাবা উল্টো নিয়মিত হেনস্থার শিকার হচ্ছেন ধর্ষকের সাজানো মিথ্যা মামলায়। মেয়ের প্রতি জঘন্য অবিচারের বিরুদ্ধে বিচার পেতে দেশের বিচারব্যবস্থার কাছে গেলেন বাবা, অথচ বিনিময়ে হলেন মিথ্যা মামলার আসামি। এখন তাকে নিয়মিত পুলিশ আদালতে হাজির হতে হয়। মেয়ের বিচারের দাবিতে নয়, নিজের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক প্রকাশ্য মিথ্যা মামলার আসামি হিসেবে হাজিরা দিতে।”
টিএসসি সবসময়ই সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে সদা তৎপর উল্লেখ করে ডুজার সভাপতি বলেন, “ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে আমরা, টিএসসির সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করে আসছি বহুবছর ধরে। আমাদের পরিবারের অংশীজন, আমাদের আত্মজ স্বপন মামার জীবনে ঘটে যাওয়া এ ঘটনায় আমরা যারপরনাই মর্মাহত। সদা হাস্যোজ্জ্বল, ক্যাম্পাসের যুগ যুগান্তৱেৱ প্রিয়মুখ স্বপন মামার মেয়ে, আমাদের ছোটোবোনের সাথে ঘটে যাওয়া এ পৈশাচিক অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।”
সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক বিএম জুবলি রহমান। তিনি বলেন, “অভিযুক্ত ধর্ষকের জামিন বাতিল ও তার দায়ের করা নির্জলা মিথ্যা, হয়রানিমূলক মামলা থেকে স্বপন মামাসহ অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আমরা টিএসসির সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো স্বপন মামার পাশে থাকতে নিমােক্ত কর্মসূচী গ্রহণ করেছি। আগামীকাল দুপুর ১টায় মানববন্ধন, দুপুর তিনটা থেকে টিএসসি ভিত্তিক সকল সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে আয়ােজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিবাদ কর্মসূচি।”
সংবাদ সম্মেলনে ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন, সদস্য তানভির হাসান, রাইসা নাসের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি আব্দুল্লাহ ফয়সালসহ টিএসসি ভিত্তিক বিভন্ন সংগঠনের অর্ধ-শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বপন মামা নিজেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায্য বিচার দাবি করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন