শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মরাসতী নদীর বুকে অট্টালিকা

মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া, লালমনিরহাট থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। জেলার চারদিকে ঘিরে ছোট-বড় বেশ ক’টি নদী বয়ে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম ছোট মরাসতী নদী প্রতিনিয়তই দু’পাশে মাটি ভরাট করে পাকা ঘর-বাড়ি, বহুতলা ভবন (অট্টালিকা) ও দোকানপাট নির্মাণ করে নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ফলে নদীর পানি স্রোতের গতিপথ বন্ধ করা হচ্ছে। আর এতে শুধু মানুষেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে না, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে দেশী ছোট বড় মাছ, জল পাখিসহ জীববৈচিত্র্য। অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণে নদীর স্বাভাবিক গতি, নাব্যতা নষ্টের পাশাপাশি নদী তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। অথচ নদ-নদী বাঁচিয়ে রাখতে, কাগজে কলমে পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবে নেই। ২০১৩ সালের নদী কমিশন আইনে নদীর জমি ক্রয়-বিক্রয়, কোনোভাবেই নদী দখল বা ভরাট করে কোনো স্থাপনা নির্মাণের বিধিনিষেধ অনুযায়ী নদীর পাড় থেকে ১৫৯ মিটার দূরে নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। প্রতিনিয়তই নদীতে মাটি ভরাট করে বহুতলা ভবন (অট্টালিকা) গড়ে তোলার ফলে মরাসতী নদী এখন খালে রূপ নিয়েছে। দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, তিস্তার সাথে সংযোগ মরাসতী নদীর। এক সময়ের খরস্রোতা মরাসতী সময়ের বিবর্তনে নদীটি এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রমত্ত নদী এখন দেখে মনে হবে ছোট একটি খাল। এই নদীতে এখন আর সারা বছর পানি প্রবাহ থাকে না। পলি জমে নদীর তলদেশ ক্রমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষাকালে পানির মৃদু প্রবাহ থাকলেও শুস্ক মৌসুমে নদীর বুকে বোরো ধানের ফসল ফলানো হচ্ছে। তারপরেও ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে নদী পানির জন্য করছে আর্তনাদ। এই নদীর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত স্থানীয় অনেক কৃষকের চাষাবাদ।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট পৌর শহরের বালাটারী ও সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙা (ভাঙাপুল) এলাকার বুকজুড়ে বয়ে যাওয়া মরাসতী নদী। এ নদী এখন প্রতিনিয়তই নদীর দু’পাশে মাটি ভরাট করে পাকা ঘর-বাড়ি, বহুতলা ভবন (অট্টালিকা) ও দোকানপাট নির্মাণ করে নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য।
মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপন বলেন, মরাসতী নদীর কিছু অংশ পৌরসভায় পড়েছে। তা ভরাট করে বহুতলা ভবন গড়ে উঠেছে। আমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আজ পর্যন্ত মরাসতী নদীর উপর বহুতলা ভবন তোলার অনুমতি নেইনি। তবে অপরিকল্পিতভাবে এসব ভবন তোলায় ও মরাসতী নদী বাঁচাতে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু বলেন, মরাসতী নদী সম্পূর্ণ মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে পড়েছে। তাই অপরিকল্পিত নদী ভরাট করে ভবন নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়।
এ বিষয়ে নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাদশা আলম বলেন, আমরা স¤প্রতি সময় নদী বাঁচাও আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৭ দফা দাবি তুলে ধরে মানববন্ধন করেছি। মরাসতী বাঁচাতে নদীটি এয়ারপোর্টে হতে তিস্তা সংযোগ পর্যন্ত খননের প্রয়োজন। তাছাড়া নদী কমিশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি নেই। ফলে কিছু ক্ষমতাশালী প্রভাবশারী মহল নদীতে মাটি ভরাট করে পাকা বহুতলা ভবন নির্মাণ করেছেন।
লালমনিরহাট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জি. আর. সরোয়ার এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদ-নদী দখলমুক্ত অভিযান শুরু হয়েছে, ‘নদী শাসন করার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অধিদফতরের যৌথ সমন্বয়ে মাটি ভরাট ও অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণসহ দখলমুক্ত করতে পরিকল্পনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন