শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : নিজের পছন্দের বস্তুই দানের বস্তু হওয়া কি উচিত?

আব্দুল্লাহ আল মাসউদ | প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

উত্তর : দান-সদকা তো সবাই-ই কম বেশি করে থাকে। তবে উত্তম পন্থায় রসুলের নির্দেশিত পথে, আল্লাহর শিখানো পথে ক জন দান করে? কোটি টাকার মালিক যে সেও জুমার দিন দশ টাকা দান করে ভাবে, আজ অনেক দান সদকা করলাম। যে হাজার টাকার মালিক সেও দান করল দশ টাকা। তাহলে দু জন কি সমান হবে? সমান নেকির অধিকারী হবে? কখনো না। এ ক্ষেত্রে হাজার টাকার মালিক কোটি টাকার মিলিকেরচে› শত গুণ বেশি নেকের অধিকারী হবে। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, সে কম থেকে কম দান করেছে। যা তার কাছে খুবই বেশি। যদিও অংকে কম। আর ধনী ব্যক্তি যা দিয়েছে তা তার পকেটে আঁচড়ও কাটে নি। কীভাবে দু জন সমান হবে?

তাই দানের ক্ষেত্রে শুধু দানের অংক আর দামী বস্তু হওয়াই যথেষ্ট নয়। বরং তা হওয়া চাই নিজের পছন্দের বস্তু। প্রিয় বস্তু। যেন দান করলে সে দান দানের মত মনে হয়। নিজের মর্যাদা অনুযায়ী যেন হয়। কেননা, নিজের পছন্দের আর প্রিয় বস্তু দান না করে কখনো প্রকৃত দানের কল্যাণ অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আল্লাহ তায়ালা তা জানেন।’ [সুরা আলে ইমরান : ৯২]

আয়কতের ভাষ্য সুস্পষ্ট, দান কবুল হওয়ার জন্য উত্তম বস্তু দান করা শর্ত। এটাই প্রকৃত দান। আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় দান। যে দান আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন।

এই আয়াত যখন নাজিল হয়, সাহাবাগণ কীভাবে উত্তম বস্তু দান করায় লেগে পড়েছিল তা এই ঘটনা দ্বারা অনুমান করা যায়। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, মদীনার আনসারগণের মধ্যে আবু তালহা (রাঃ) ছিলেন সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি। তাঁর সবচাইতে বেশি খেজুর-বৃক্ষ ছিল। সমস্ত বাগানের মধ্যে ‘বাইরহা’ নামক বাগানটি ছিল তাঁর (আবু তালহার) অধিক পছন্দনীয়। বাগানটি মসজিদে নববীর সামনেই অবস্থিত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই বাগানে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন। সেখানকার পানি খুবই উত্তম ছিল, তিনি তা পান করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, (لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ) অর্থাৎ যতক্ষণ তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর রাহে) খরচ না করবে, ততক্ষণ তোমরা নেকের অধিকারী হবে না)। তখন আবু তালহা (রাঃ) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ তা’আলা বলেন যে, যতক্ষণ তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহর রাহে) খরচ না করবে, ততক্ষণ তোমরা সওয়াবের অধিকারী হবে না। আর আমার প্রিয় বস্তু হলো এই ‘বাইরহা’। আমি এটা আল্লাহর রাস্তায় সদকা করলাম। এর বিনিময়ে আমি নেকির আশা রাখি এবং এটা আল্লাহর নিকট জমা রাখছি। সুতরাং ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি এটাকে যেভাবে ইচ্ছা কবুল করুন। অতঃপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহবা! এটা অত্যন্ত লাভজনক মাল, এটা অত্যন্ত লাভজনক মাল। তুমি এই বাগান সম্বন্ধে যা কিছু বলেছ আমি তা শুনেছি। আমার মনে হয়, তুমি এই বাগান তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। আবু তালহা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি তা বিতরণ করে দিব। অতএব আবু তালহা (রাঃ) তার আত্মীয়-স্বজন ও চাচাত ভাইগণের মধ্যে তা বন্টন করে দিলেন।

[মুয়াত্তা মালিক / অধ্যায়ঃ ৫৮. সদকা সম্পর্কিত অধ্যায় ১৮৭৩]

আল্লাহ তায়ালা অপর আয়াতে বলেন, “হে মুমিনগন ! তোমরা যা অর্জন কর এবং জমিন তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে তা থেকে উৎকৃষ্ট কিছু সম্পদ দান কর। চোখ বন্ধ করে না থাকলে তোমরা নিজেরা গ্রহণ করতে না এমন মন্দ জিনিস দান করো না । জেনে রেখো, আল্লাহ অভাবমুক্ত ও পরম প্রশংসিত।গ্ধ [ সুরা আল বাকারা : ২৬৭ ]

তাই দানের ক্ষেত্রে অবশ্যই উৎকৃষ্ট এবং নিজের পছন্দের বস্তুটিই দান করতে হবে। নিজের জন্য যে বস্তুটি পছন্দ করবে সেটাই দানের জন্য পছন্দ করা চাই। নিকৃষ্ট বস্তু কীভাবে আল্লহর সামনে পেশ করবে? যা নিজেরই পছন্দ না সেটা আল্লহর জন্য পছন্দ করা কি শোভা পায়? তাই সম্পদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট বস্তুটিই দানের জন্য পৃথক করা উচিৎ। তবেই সেটা হবে উত্তম দান। এবং আল্লাহ তায়ালার নিকট পছন্দনীয় দান। নয়ত দানের প্রকৃত নেকি অর্জন করা সম্ভব হবে কখনোই।

উত্তর দিচ্ছেন ঃ আব্দুল্লাহ আল মাসউদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন