মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

পাক-ভারত বৈরিতা বাড়ছেই

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

বরাবরই ক্রিকেট বিশ্বের এক আরাধ্য পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথ। সেই আকাক্সক্ষা পূরণ করতে চাইলে ক্রিকেট রোমান্টিকরা এখনই বসে যেতে পারেন টিভি সেটের সামনে। আজ দুপুরেই যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী দুই দেশ। আকাশ থেকে পড়লেন! দু’দেশের রাজনৈতিক বৈরীতায় যেখানে এক দেশ আরেক দেশের নামই শুনতে পারে না, সেখানে ক্রিকেট ম্যাচ! তা-ও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে! তবে একটু খোলাসা করেই বলি। আজকের ম্যাচটি দুই দেশের বয়সভিত্তিক দলের, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। তবে দল দুটি যেহতু পাকিস্তান আর ভারত রোমাঞ্চের আশা এই ম্যাচেও করতে পারেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত আর-কি!

ক্রিকেট মাঠে পাকিস্তান-ভারত লড়াইয়ের উত্তেজনা ভিন্নরকম। কোনকিছুর সঙ্গেই এর তুলনা করার সুযোগ নেই। উপমহাদেশে ক্রিকেট শুধু খেলা বললে ভুল হবে। এখানকার সংস্কৃতিতে ক্রিকেট হয়ে দাড়িয়েছে ধর্ম। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগের বাসও এই দুই দেশেই। সমর্থকের সংখ্যাও কত একবার আন্দাজ করে নিন। ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার চিরবৈরীতা ও মেজর লিগ বেসবলে (এমএলবি) নিউ ইয়র্ক ইয়াকিং-বোস্টন রেড সক্সের প্রতিদ্ব›দ্বীতাকে কিভাবে দেখছেন? নিশ্চয়ই মারমার কাটকাট হিসেবে। তাহলে বলতেই হবে আসলে পাক-ভারত দ্বৈরথের সামনে তাদের বৈরিতা খুবই নগণ্য। বিশেষ করে উপমহাদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে। এখানে খেলাটা কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও আঞ্চলিক অস্থিরতা কমানোর একটি ক্ষুদ্র সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

এই চিরশত্রæ দেশ দুটির খেলোয়াড়রা এক অপরের প্রতি হিংসাত্বক মনোভাব পোষণ করে থাকে। খেলার তাৎপর্য এতটাই যে এতেই তারা উপভোগ করে পরম শান্তি। ম্যাচগুলো অবশ্য বিদ্বেষপূর্ণ হয়না। কিন্তু মনে হবে খেলোয়াড়রা নিজ দেশের দূত হিসেবে জার্সিকে আলিঙ্গণ করেছে। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের কাছে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির দলকে মেনে নিতে হয়েছে বড় ব্যবধানে হার। সেসময় আন্ডারডগ হিসেবে আসরের ফাইনালে পৌঁছেছিল পাকিস্তান। কোহলির মতো একজন অ্যথলেটের এই শোচনীয় অবস্থায় নেতৃত্বগুণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিস্তর। আলোচনা হয়েছিল রাষ্ট্রের কর্তাশ্রেণী পর্যন্ত।

অপ্রত্যাশিতভাবে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো নয়। সবশেষ এক বছরের দৃশ্যপট দেখলে তা আরও ভালোভাবে বোঝা যায়। রাজনৈতিকরাও ক্রিকেটকে প্রতিনিয়তই মিলিয়ে ফেলছেন রাজনীতির মারপ্যাচে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও বোর্ড অব কন্টোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সম্পর্ক এতটাই তলানিতে ঠেকেছে যে, ২০০৭ সালের পর থেকে তারা দ্বিপাক্ষিক কোন টেস্ট সিরিজও খেলেনি।

ভারত সরকার তার দেশের ক্রিকেট দলকে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ইভেন্ট ছাড়া পাকিস্তানের মাটিতে খেলার অনুমোদন দেয়না। গত বছর আইসিসির সবশেষ বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারত। চলতি বছরের শেষদিকে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে এশিয়া কাপ আয়োজন করার কথা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কিন্তু এই আসরের অয়োজক পাকিস্তান। বিসিসিআইয়ের নির্বাহী পর্ষদ সরাসরি পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা চায় নিরপেক্ষ ভেন্যু। সম্ভবত সেটা হতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিসিসিআই তাদের বিবৃতিতে জানিযেছে, ‘পিসিবি এই ইভেন্টের আয়োজক এতে কোন প্রশ্ন ওঠেনি। আমাদের সমস্যা হচ্ছে ভেন্যু। আমরা এই ভেন্যুর পরিবর্তে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলতে চাই।’ বিসিসিআই আরও জানিয়েছিল, ‘ভারতীয় দল পাকিস্তানে কোন সফরে যাবে না। সেটা হোক এশিয়া কাপ। যদি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ভারতকে ছাড়া এই আয়োজন করতে চায় সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু যদি ভারত এই আসরে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে, তাহলে সেটা অবশ্যই নিরপেক্ষ ভেন্যু হতে হবে।’

নিরাপত্তার প্রশ্নে পাকিস্তান তাদের সক্ষমতার উত্তর দিয়েছে সম্প্রতি শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। কিন্তু ভারত কোনভাবেই এই সফরে রাজি নয়। উল্টাদিকে ভারতের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় পিসিবি জানিয়েছে, যদি ভারত এশিয়া কাপে না আসে তাহলে পাকিস্তানও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বর্জণ করবে, ‘আমরা বর্তমানে এশিয়া কাপ আয়োজনের জন্য দুটি ভেন্যু ঠিক করেছি।’ পিসিবির প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম খান গত সপ্তাহে লাহোরে বলেছিলেন, ‘যদি ভারত পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে না আসে আমরা আগামী ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বর্জণ করব।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) প্রথমে পাকিস্তান সফরে রাজি ছিলনা। প্রথমে নিরপেক্ষ ভেন্যুর প্রস্তাব দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু পরে তিন দফায পাকিস্তান সফরে খেলতে রাজি হয় বিসিবি। ইতিমধ্যে প্রথম দফায় টি-টোয়েন্টি সিরিজও নিরাপদে খেলে এসেছে বাংলাদেশ দল। কিন্তু পরে শোনা যায়, বিসিবি এশিয়া কাপের আয়োজক হওয়ার বদলে এই সফর করেছে। অথচ এই কথা উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়াসিম খান, ‘এশিয়া কাপের বদলে বাংলাদেশের সঙ্গে এই সিরিজ আয়োজন হচ্ছে, এটা সঠিক নয়।’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘এটা এসিসির নির্ধারিত টুর্নামেন্ট। এর সমস্ত অধিকার তাদেরই। আমাদের পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আমরা পাকিস্তানে এশিয়া কাপ আয়োজন করতে চাই।’

খানের এই কথার কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি বিসিসিআই। ক্রিকেটভক্তরা চায় ভারত ও পাকিস্তান একই পিচে যেভাবে খেলে থাকে, ঠিক সেভাবেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলুক। যদিও অতি সত্ত¡রই তা দেখা যাবে বলে মনে হচ্ছেনা।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন