শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সিরিয়া ইস্যুতে বিভক্ত বিশ্ব, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২০, ৭:৫৭ পিএম

সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইদলিবকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ব রাজনীতি। ইদলিব শহর মূলত দেশটির বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যাদের সমর্থন দিয়ে আসছে তুরস্ক। অন্যদিকে রাশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার আসাদ সরকার চাচ্ছে বিদ্রোহীদের হটিয়ে সেখানকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে। মূলত এটি নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। বর্তমানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে- এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করেই দেখা দিয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শঙ্কা।

আগে থেকেই সিরিয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলো দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এবার সেই বিভক্তি আরও পরিষ্কার হয়ে দেখা দিয়েছে। সিরিয়া ইস্যুকে ঘিরে একপক্ষে আছে সিরিয়া, রাশিয়া ও ইরান এবং অন্যপক্ষে আছে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজনার পারদ শুধু ওপরের দিকেই উঠছে।

সিরিয়ার আসাদ সরকার যে করেই হোক বিদ্রোহীদের কাছ থেকে ইদলিব অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। বিদ্রোহীদের পরাজিত করতে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে হামলা চালাতে হয়। আর এই হামলায় বাস্তুহারা সাধারণ মানুষ শরণার্থী হয়ে ছুটে তুরস্কের দিকে। এমনিতেই প্রায় ২০ লাখ সিরীয় শরণার্থী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে তুর্কি প্রশাসন। এ অবস্থায় সিরীয় সরকার ইদলিবে হামলা চালালে আরও শরণার্থী তুরস্কমুখী হবে। এটি কিছুতেই চায় না তুর্কি সরকার। ফলে সিরিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে তারা।

গত কয়েকদিন ধরে সিরিয়া-তুরস্কের মধ্যকার সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রুশ সমর্থিত সিরীয় সরকারিবাহিনীর হামলায় একসঙ্গে ৩৩ তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে যায়। নিজেদের সেনা নিহতের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে তুরস্কের সামরিকবাহিনী। এমনকি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানও প্রতিশোধের পক্ষেই ছিলেন।

সিরীয় হামলার জবাবে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করে তুরস্ক। তখন সিরিয়ার সরকারিবাহিনীর অন্তত ২০০টি স্থানে হামলা চালায় তারা। এতে ৩০৯ সিরীয় সেনা নিহত হয় বলেও দাবি করে তুর্কি প্রশাসন। ওই সময় তুরস্কের ছোড়া বেশকিছু শেল ও ক্ষেপণাস্ত্র সিরিয়ার আল হাসাকা অঞ্চলের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত হানে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পুরো এলাকা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

সিরিয়ার উত্তেজনা নিয়ে গত শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তারা দুজনই পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে জোর দেন। শুধু তখনই নয়, এর আগেও অনেকবার পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছেন এরদোগান-পুতিন। কিন্তু তারা কোনো সমঝোতায় আসতে পারেননি।

তুরস্কের সঙ্গে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে অন্যদের মতো যুদ্ধের আশঙ্কা করছে রাশিয়াও। যুদ্ধ শুরু হলে সেটি যে বড় আকার ধারণ করবে তাও বুঝতে পারছে মস্কো। ফলে গত শুক্রবার ভূ-মধ্যসাগরে দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে তারা। এসব যুদ্ধজাহাজে অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। এরপর শনিবার ভূ-মধ্যসাগরে আরও একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায় রাশিয়া। ওই জাহাজে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামভর্তি করে সিরিয়া উপকূলে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

চলমান এই পরিস্থিতিতে সিরিয়া ও রাশিয়াকে হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তুর্কি রাষ্ট্রদূত ফেরিদিন সিনিরলিওগ্লু। তিনি বলেন, তুরস্কের সামরিকবাহিনীকে অবমূল্যায়ন করা উচিত হবে না সিরিয়া ও রাশিয়ার। তারা এখনো তুরস্কের শক্তি দেখেনি। প্রয়োজন হলে তুর্কি সামরিকবাহিনী সেই শক্তি দেখাবে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়া ও রাশিয়া মিলে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। সিরিয়া মনে করছে, রাশিয়ার সমর্থনে যে কোনো কিছু করতে পারবে তারা। কিন্তু তুরস্কের ক্ষমতা সম্পর্কে সিরিয়া ও রাশিয়া কারওরই ধারণা নেই। তারা যদি তুর্কিবাহিনীর ভয়ংকর ক্ষমতা দেখতে চায়, তাহলে সেটি দেখানো হবে।

সিরিয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তুরস্কের এই অবস্থানের সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। এ সম্পর্কে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত ক্যালি ক্রাফট বলেন, তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য। তারা আমাদের মিত্র। আত্মরক্ষায় তুরস্ক যে পদক্ষেপই নেবে না কেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে আছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত রাশিয়া ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে পরিষ্কার অবস্থান নিল। ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও তীব্র হয়েছে। এই যুদ্ধ শুরু হলে সেটি স্বাভাবিকভাবেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে। কারণ, এই ইস্যুতে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো জড়িত রয়েছে।

সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং আগের চেয়ে সংকট আরও বেড়েছে। সিরিয়ার ইদলিব, আলেপ্পো এবং হামায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তুর্কি সামরিকবাহিনী। সোমবারও (২ মার্চ) সিরিয়ার সরকারিবাহিনীর বহর, প্রতিরক্ষা ঘাঁটি ও সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ড্রোনের সাহায্যে ভারী হামলা চালায় তুরস্ক। এতে ওই অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে তুর্কি হামলায় হতাহত সম্পর্কে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

তুর্কিবাহিনীর ভয়ংকর বিমান হামলার মুখে ইদলিব ও আলেপ্পোর আকাশে বিমান উড্ডয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সিরিয়া সরকার। কিন্তু তুরস্ক এই নিষেধাজ্ঞা মানছে না। তারা ড্রোনের মাধ্যমে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত ৪টি তুর্কি ড্রোন ধ্বংস করেছে বলে দাবি করেছে সিরীয়বাহিনী। অন্যদিকে সিরিয়ার আকাশে কোনো তুর্কি বিমান এলে সেটি ধ্বংসের পরোক্ষ হুমকিও দিয়েছে রাশিয়া। মস্কো বলেছে, সিরিয়ার আকাশে কোনো তুর্কি বিমান এলে সেটির কোনো নিরাপত্তা দেবে না তারা।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতির মুখে রাশিয়া সফরের উদ্যোগ নিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) একদিনের সফরে মস্কো পৌঁছাবেন তিনি। এই সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলাপ করবেন এরদোগান। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরোপুরি যুদ্ধের জড়ানোর আগে সিরিয়া ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধানের এটিই শেষ প্রচেষ্টা তুরস্কের। এবারও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে না পারলে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধই দেখতে হবে বিশ্ববাসীকে।

তুরস্কের অভিযোগ, সিরিয়ার ইদলিব অঞ্চলে তুরস্ক ও তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহীদের ওপর এখনো বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া ও সিরিয়া। রাশিয়ার এই হামলা বন্ধ করতে তুর্কি সীমান্তে মার্কিন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আহ্বান জানিয়েছে তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্র এই আহ্বানে সাড়া দেবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত হওয়ায় ন্যাটোর অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোও তুরস্কের পক্ষেই দাঁড়াবে। ফলে সিরিয়া ইস্যুতে যে কোনো যুদ্ধ শেষে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধেই রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করছেন বৈশ্বিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সূত্র: আল-জাজিরা, আনাদুলু এজেন্সি, মিডল ইন্ট মনিটর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
মুহাম্মাদ ২ মার্চ, ২০২০, ৮:১৬ পিএম says : 0
আসলে এই যুদ্ধে সিরিয়া পরাজয় বরন করবে, আমেরিকার দখলে যাবে সিরিয়ার ভুমি ততা দামেস্ক, এর নেপথ্যে অনেক কারন আছে,
Total Reply(0)
obaidullah ২ মার্চ, ২০২০, ১১:২১ পিএম says : 0
যদি এই যুদ্ধ প্রকট আকার ধারণ করে, তাহলে গোটা পৃথিবীর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যা।
Total Reply(0)
obaidullah ২ মার্চ, ২০২০, ১১:২১ পিএম says : 0
যদি এই যুদ্ধ প্রকট আকার ধারণ করে, তাহলে গোটা পৃথিবীর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যা।
Total Reply(0)
obaidullah ২ মার্চ, ২০২০, ১১:২১ পিএম says : 0
যদি এই যুদ্ধ প্রকট আকার ধারণ করে, তাহলে গোটা পৃথিবীর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যা।
Total Reply(0)
ash ৩ মার্চ, ২০২০, ৫:১৪ এএম says : 0
SESH MUHURTHE USA TURKIR PICH SERE JABE ! TURUSHKO PORBE KHADE
Total Reply(0)
Monjur Rashed ৩ মার্চ, ২০২০, ১০:১৬ এএম says : 0
Nothing will happen like " Third World War". USA & other NATO members will provide "leap service only" for Turkey.
Total Reply(0)
Akash ৩ মার্চ, ২০২০, ১০:৪৫ এএম says : 0
Bolo noy
Total Reply(0)
দিলদার খাঁ ৩ মার্চ, ২০২০, ৫:১৩ পিএম says : 0
সিরিয়া ইস্যুতে শুধু মাত্র সিরিয়া , রাশিয়া , ইরান থাকবে না থাকবে চিন ও আর তার সাথেই থাকবে অগনিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৪ মার্চ, ২০২০, ১১:৩৮ এএম says : 1
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এই যুদ্ধে যদি সিরিয়া জয়লাভ করে তবে বাশার আল আসাদ হবেন ২ য় সুফিয়ানী আর যদি তুরস্ক জয়লাভ করে তাহলে এরদোগান হবে ২ য় সুফিয়ানী। তাই এরদোয়ান কে এখনোই মহান নেতা ভাবার কিছু নেই।
Total Reply(0)
Egnarou hosd ৪ মার্চ, ২০২০, ৯:২৭ পিএম says : 0
It is necessary that the world should meet a fatal destruction to achieve peace
Total Reply(0)
জামসেদ ৫ মার্চ, ২০২০, ৬:১১ পিএম says : 1
তুরস্ক-সিরিয়া যুদ্ধ না করে ইরান-পাকিস্তানের মধ্যস্ততায় সমাধান খোজা উচিত।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন