শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া দরবেশির গল্প

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২০, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ১৩ মার্চ, ২০২০

খুব ভোরে নাশতার পরই রওয়ানা হই আজিজান আলী রামিতানী রহ.-এর জায়গায়। লোকেরা বলে, এখানে তার কবর। কিতাবে পড়েছি, তাঁর কবর খাওরিজমে। সম্ভাবত এটি বেশি প্রামাণিক। এখানে কবর না হলেও এটি তার এক সময়ের আস্তানা ছিল। তিনি আল্লাহর মহব্বতে এতই মগ্ন ও নিমজ্জিত ছিলেন যে নিজেকে নিজে নাম দিয়েছিলেন আজিজান। মানে আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা। আসল নাম আলী। এই বান্দা প্রথম যখন বুখারার এই গ্রামে এসেছিলেন তখন এই অঞ্চলের মানুষ একটি ভাইরাসজনিত চর্ম রোগে আক্রান্ত ছিল।

সব মানুষের এ অবস্থা দেখে তিনি খাস ইবাদত-বন্দেগীর সময় আল্লাহর কাছে দুআ করলেন, আল্লাহ যেন এলাকার সব মানুষকে এই পরীক্ষা থেকে মুক্তি দান করেন। পর দিন তার দিলে আল্লাহ তাআলা কিছু লতাপাতা দিয়ে একটি গায়ে লাগানোর ওষুধের ধারণা ঢেলে দিলেন। ওষুধের ফর্মুলাটি তার দিলে ইলক্বা করলেন। আলী আগে কোনো দিন গাছ-গাছড়া চিনতেন না। কিন্তু মুরাকাবার হালতে একটি ঘোরের ভেতর তিনি কিছু ওষুধ তৈরি করে ফেললেন। প্রথম পরীক্ষা করা হলো তার এক ভক্তের ছোট্ট বালিকার ওপর।

কিছু সময়ের মধ্যেই মেয়েটি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল। এরপর ধীরে ধীরে এ ওষুধ এলাকার আবালবৃদ্ধবণিতা ব্যবহার শুরু করল। সবাইকে আল্লাহ সুস্থ করে দিলেন। মানুষ শায়খের আস্তানাকে নাম দিলো, আরামে তন। এরপর গোটা গ্রামটির নাম হয়ে গেল আরামে তন থেকে রামেতন। সেখান থেকেই রামিতান। শেষ পর্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষকে রামিতানী খেতাব দেয়া শুরু হলো। বুযুর্গদের জীবনীগ্রন্থে খাজা আলী রামিতানী আজিজানের বিস্তারিত জীবনী পাওয়া যায়। তার অনেক কবিতাও সুফিদের সমাজে প্রচলিত আছে।

আমরা তার সে জায়গাটি ঘুরে ফিরে দেখলাম। ফেরার পথে গ্রামের বাড়ি-ঘর চোখে পড়ল। সব বাড়ি একই ডিজাইনের। রাস্তা থেকে বাড়ি পর্যন্ত একটি লোহার রডের তৈরি মাচার মতো। অনেকটা বিয়ে বাড়ির গেট যেমন থাকে। গেটের পর থেকে বাড়ির মূল গেট পর্যন্ত লোহার মাচা। উপরে আঙুরের লতা। পুরনো আঙুরের গাছ। মূল গাছটি অনেক মোটা হয়ে আছে। গেট ও মাচা লতায় লতায় ছাওয়া। মৌসুম ছিল না বলে আঙুর চোখে পড়েনি। ড্রাইভার বলল, মে মাসে যদি আসেন তাহলে এ দেশের প্রতিটি বাড়ির সামনেই দেখতে পাবেন বাগানের মতো আঙুর ঝুলে আছে। আঙুর গাছের এই ১৫-২০ হাত জায়গা হচ্ছে প্রবেশদ্বার।

এ পরিমাণ জায়গা দু’পাশে লম্বা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখানে কিছু আপেল গাছ, কিছু অন্য শাক-সবজি আর দুয়েকটা হলেও গোলাপ গাছ। গোলাপ ফুল অনেক দেখেছি। কিন্তু আপেল আঙুর ছিল না। এরপর লোহার গেটওয়ালা বাড়ি। গেটের ভেতরে দেখা যায় গৃহপালিত কোনো না কোনো পশু। ভেড়া দুম্বাই বেশি। পাশে বস্তায় কোনো খাদ্য-শস্য অথবা সার, বীজ, পশুখাদ্য। একই সাথে হয় ট্রাক্টর কিংবা সেচের যন্ত্র রাখা আছে।

কোনো কোনো বাড়িতে এ জায়গাটিতে ব্যক্তিগত গাড়ি রাখা। দু’পাশে থাকার ঘর। ভেতরে এক টুকরো উঠান। একটু দূরে বাউন্ডারি ওয়াল। এক সাথে দু-চার-দশটি বাড়ি হলেও সব একই প্যাটার্নের। সমাজতান্ত্রিক যুগের রীতিতে এমন বাড়ি-ঘর অনুমোদিত ছিল। জায়গা নষ্ট না করার এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ গৃহস্থির সুবিধার্থে উজবেকরা এ নিয়মটি এখনও ধরে রেখেছে।

অন্য এক জায়গায় যাওয়ার পথে দেখলাম, বহুতল বিশিষ্ট এক ভবন নির্মিত হচ্ছে। প্রজেক্টটি মনে হয় কোনো কমার্শিয়াল ভবনের। নির্মাতারা চার পাশে যে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়েছে সেই স্টীলের গায়ে ইংরেজি হরফে বড় করে লেখা, দস্ত ব কার, দিল ব ইয়ার। দেখে ভালো লাগল। ইংরেজি হওয়ায় পড়তেও পারলাম। এই শহরের অন্যতম বিখ্যাত সন্তান ইমাম বাহাউদ্দীন নকশবন্দের অমূল্য বাণী এটি। যার অর্থ, হাত থাকবে কাজে ব্যস্ত আর অন্তর থাকবে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
গল্পটা আসলে হৃদয় ছুয়ে যাওয়ার মতো।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ কাজী নুর আলম ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
লেখাটা পড়ে নতুন কিছু জানতে পারলাম।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
দুনিয়া ভুলে সকলকে পরকাল মুখি হতে হবে। দুনিয়ার মোহে আমরা সব ভুলে আছি।
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
আল্লাহ্‌ পাক জনাব লেখক সাহেব এবং ইনকিলাব সংশ্লিষ্ট সকলকে এর উত্তম প্রতিদান প্রধান অবশ্যই করবেন। অনেক ধন্যবাদ উভয়কে এত উত্তম বিষয় নিয়ে লেখার জন্যে এবং প্রকাশ করার জন্যে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ মোশাররফ ১৩ মার্চ, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
শুকরিয়া জনাব। আমি আপনার নিয়মিত ভ্রমণ কাহিনি পড়ি।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৩ মার্চ, ২০২০, ৬:৫২ এএম says : 0
আমার নানীজি বলিতেন হাতে করো হাতের কাজ আর মূখে লও আল্লাজির নাম। অত্যন্ত পরহেগারী জিন্দেগী ছিলো নানিজির। মৃত্যুর সময় চরকাতে অজু আর নামাজ পড়িতে দেখিয়াছি। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৩ মার্চ, ২০২০, ৬:৫২ এএম says : 0
আমার নানীজি বলিতেন হাতে করো হাতের কাজ আর মূখে লও আল্লাজির নাম। অত্যন্ত পরহেগারী জিন্দেগী ছিলো নানিজির। মৃত্যুর সময় চরকাতে অজু আর নামাজ পড়িতে দেখিয়াছি। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ১৩ মার্চ, ২০২০, ৬:৫২ এএম says : 0
আমার নানীজি বলিতেন হাতে করো হাতের কাজ আর মূখে লও আল্লাজির নাম। অত্যন্ত পরহেগারী জিন্দেগী ছিলো নানিজির। মৃত্যুর সময় চরকাতে অজু আর নামাজ পড়িতে দেখিয়াছি। ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
জুনাইদ চাটগামী ১৩ মার্চ, ২০২০, ৭:৫২ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাব দেখার অন্যতম কারণ হলো ইসলামের কথা তুলে ধরা, অসংখ্য মুবারকবাদ জানাই, এখানে এমন কিছু গঠনা তুলে ধরা হয় যা আমরা কিতাবে পড়ে থাকি, কিন্তু যখন বিষয়টা ইনকিলাবে আসে তখন মনে হয় নিজে দেখতেছি , আল্লাহ্ কবুল করুন আপনাদের মেহনত
Total Reply(0)
জুনাইদ চাটগামী ১৩ মার্চ, ২০২০, ৭:৫৩ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাব দেখার অন্যতম কারণ হলো ইসলামের কথা তুলে ধরা, অসংখ্য মুবারকবাদ জানাই, এখানে এমন কিছু গঠনা তুলে ধরা হয় যা আমরা কিতাবে পড়ে থাকি, কিন্তু যখন বিষয়টা ইনকিলাবে আসে তখন মনে হয় নিজে দেখতেছি , আল্লাহ্ কবুল করুন আপনাদের মেহনত
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন