জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মক্ষণে আতশবাজির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে জাতীয় সংসদ ভবন। সংসদ ভবন ছাড়াও রাজধানী জুড়ে ছিলো বর্ণিল আয়োজন। জাতীয় পারেড গ্রাউন্ডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থগিত হওয়ার পর সকলেরই দৃষ্টি ছিলো সংসদ ভবনের দিকে। সেখানে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণার উৎস উল্লেখ করে তার আদর্শে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার আহŸান জানান।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙ্গালীর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষকে ঘিরে সংসদ ভবনে ছিলো উৎসবের আমেজ। মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যতিক্রমী সজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টায় আতশবাজী ও ফায়ার ওয়ার্কসের মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। মুহর্তে আলোকজ্জল হয়ে ওঠে সংসদ ভবনের নীলাকাশ। আলোয় আলোয় নতুন ফুটে ওঠে লুই আই কানের অনন্য সৃষ্টি সংসদ ভবন। সংসদ ভবনের দেয়ালে নানা রঙের আলোকসজ্জায় বঙ্গবন্ধু ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ফুটিয়ে তোলা হয়। নিয়ন্ত্রিত জনসমাবেশে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠান বিভিন্ন গণমাধ্যমে স¤প্রচার করা হয়।
কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে সোয়া ৭টায় সংসদ লেকের পাড়ে বোতাম টিপে আলোকসজ্জার উদ্বোধন করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ বি তাজুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানসহ সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা। এরপর স্পিকার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সংসদ ভবনের দক্ষিণপ্লাজায় জাতীয় কমিটর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে পৌছান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির আলোকবর্তিকা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। কারণ ক্ষণজন্মা এই মহান নেতাকে বাদ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তা ছিল অমূলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব মহান নেতার জন্ম শতবর্ষ পালন করতে পারছি, এটা সত্যিই আনন্দের। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার হোক তার জীবন-ইতিহাস এবং কর্ম বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। যাতে বঙ্গবন্ধু আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থাকেন। তিনি বছরব্যাপী জনশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার সফলতা কামনা করেন। সংসদ ভবন ঘুরে দেখা যায়, সংসদের প্রবেশ পথে দৃষ্টিনন্দন বিলবোর্ডে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধু মুখচ্ছবি। মূল অনুষ্ঠানের জন্য দক্ষিণপ্লাজায় বসানো হয় বিশাল ডিসপ্লে বোর্ড। সেখানে দেখানো হয় লেজার শো। পিক্সেল ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেখানো হয় বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ভাষণের উদ্ধৃতি ও বিভিন্ন মুহূর্ত। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাগুলো তুলে ধরা হয়। এছাড়া আলোকসজ্জার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠে।
সংসদের লেকের মাঝখানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই আঙুল উচিয়ে দেওয়া ভাষণের প্রতিচ্ছবি লেজার শো’র মাধ্যমে দেখানো হচ্ছে। এছাড়া সংসদের দক্ষিণ পশ্চিম কোণের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সংসদ ভবনের লেকের পাড়ে প্রতিটি দেয়ালে লাইটিংয়ের মাধ্যমে নৌকার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া সংসদে প্রবেশের প্রতিটি পথেই বিভিন্ন রঙয়ের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীতে ব্যাপক সাজসজ্জা করা হয়েছে। সন্ধ্যা নামতেই ধানমন্ডি, জাতীয় সংসদ ভবন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বিমানবন্দর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা রঙ্গিন আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। রাজধানীর সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোতে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের নানা আলোকচিত্র শোভা পাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন