করোনাকে বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ইতোমধ্যেই এই প্রাণঘাতী ও দ্রুত সংক্রমণশীল ভাইরাস পৌঁছে গেছে প্রায় পৌনে দু’শ’ দেশে। আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চীনে সর্বপ্রথম এর প্রাদুর্ভাব হলেও এখন ইউরোপ এর কেন্দ্রভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করতে পারে বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সতর্কবার্তা দিয়েছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এই এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যুসংখ্যা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আপাতত ধীরে মনে হলেও এ অঞ্চলের দেশগুলোতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১৪ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছে একজন। দেশের মানুষের মধ্যে ক্রমাগত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা বাড়ছে।
এ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন, পরীক্ষা ও শনাক্তকরণ মূল কাজ, বলেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। অথচ এই তিনটি ক্ষেত্রেই আমরা দুঃখজনকভাবে পিছিয়ে আছি। সরকারীভাবে সন্দেহভাজনদের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একঘরে করে রাখার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা অত্যন্ত অপ্রতুল ও অব্যবস্থাপূর্ণ। সরকারের নির্ধারিত একঘরে করে রাখার স্থানগুলোতে মানুষ, বিশেষত বিদেশ ফেরতরা যেতে ইচ্ছুক নয়। আবার তারা নিজেদের বাসা-বাড়িতে একঘরে হয়ে থাকতেও নারাজ। নিয়ম লঙ্খন করে বাইরে বের হচ্ছে তাদের অনেকে। অন্যদিকে করোনা শনাক্ত করার পর্যাপ্ত কিট দেশে নেই। আল্লাহ না করুক, ভাইরাসটি দ্রæত ছড়িয়ে গেলে অনেকেরই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই সম্ভব হবে না। থার্মাল স্ক্যানারও খুব বেশি নেই। একঘরে করা কিংবা রোগ শনাক্ত করার ব্যবস্থারই যখন এ হাল, তখন চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল কি হতে পারে, সহজেই অনুমান করা যায়। বলা বাহুল্য, এই অবস্থাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও দুঃখজনক।
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন: তোমাদের যে বিপদাপদ তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। (সূরা শুরা : ৩০)। অন্য এক জায়গায় তিনি বলেছেন: আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোনো বিপদই আসে না। (সূরা তাগাবুন: ১১)। আল্লাহতায়ালার এই দু’টি বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার: ১. করোনাভাইরাসের বিপদই হোক বা অন্য কোনো বিপদ-দুর্যোগই হোক, তার জন্য আমাদের কৃতকর্ম অর্থাৎ আল্লাহর অবাধ্য হওয়া এবং অনাচার, কদাচার, অবিচার, শোষণ, জুলুম ইত্যাদিই দায়ী। ২. আর এইসব বিপদাপদ আল্লাহর তরফ থেকেই আপপিত হয়। আল্লাহ এর মধ্য দিয়ে আমাদের সতর্ক করেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি প্রদান করেন।
অতীতে বিভিন্ন সময় রোগব্যাধি করোনার মতোই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং জনপদের পর জনপদ বিরান হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়েও জনপদ বিরান ও বিপর্যস্ত হয়েছে। এইসব বিপদাপদে আল্লাহপাক ও তার রাসূল (সা.) এর নির্দেশনা ও শিক্ষা হলো: ১. ধৈর্য ধরা। ২. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা। ৩. সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করা। ৪. বিপদগ্রস্ত ও দুর্গতদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। এটা ঠিক, মানুষ আকস্মিকভাবে অভাবিত কোনো বিপদাপদে পড়লে বিচলিত ও হতাশ হয়ে পড়ে। আল্লাহতায়ালার ভাষায়, মানুষ তো স্বভাবতই অস্থির। সে বিপদে পড়লে হাহুতাশ করে। (সূরা মাআরিজ : ১৯)। বিপদাপদে অস্থির, আতঙ্কিত ও বেদিশা হয়ে না পড়ে আল্লাহপাক ধৈর্যধারণ করতে বলেছেন। কীভাবে ধৈর্য অবলম্বন করতে হবে, তাও তিনি বলে দিয়েছেন এভাবে: (তারাই ধৈর্যশীল) যারা তাদের ওপর কোনো বিপদ এলে বলে ‘আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব।’ এইসব লোকের প্রতি তাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে আশির্বাদ ও দয়া বর্ষিত হয়। আর এরাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা বাকারাহ : ১৫৬-১৫৭)।
বিপদাপদ থেকে রক্ষা করার একমাত্র অধিকর্তা আল্লাহ। সুতরাং তার কাছে আকুল হয়ে প্রার্থনা করতে হবে, যাতে তিনি দয়াপরশ হয়ে বিপদাপদ দূর করে দেন এবং ক্ষমা মঞ্জুর করেন। যখন কোনো বিপদাপদ, রোগ-ব্যাধি কোথাও বিস্তার লাভ করে, তখন পারস্পরিক সেবা, সাহায্য ও সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। যারা আক্রান্ত হয় তাদের জন্য অনাক্রান্ত ব্যক্তি, ডাক্তার, নার্স প্রভৃতির সেবা, সাহায্য ও সহযোগিতা অপরিহার্য। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, কল্যানকামী চিন্তা-চেতনা থেকে তাদের সেবা, সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে। এটা আল্লাহর ইবাদত হিসাবে গণ্য। সরকারের উচিৎ, আশঙ্কিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ মনোনিবেশ নিয়োজিত করা, যাতে এ রোগ আর বেশি বাড়তে না পারে এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা হয়। বিশ্বাসী প্রত্যেকটি মানুষের এ মুহূর্তের কর্তব্য হলো, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তার সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ আমাদের সব বিপদ মুক্ত করুন। আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন