ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ : সূরা বাকারার আয়াতে আল্লাহ দ্বিতীয় পরীক্ষার কথা বলেছেন ‘ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ’। এ পরীক্ষা আল্লহর পক্ষ হতে নতুন নয়। ইসলাম পূর্ব যুগে, বিভিন্ন নবীর সময়ে আল্লাহ আকাল ও দুর্ভিক্ষ দিয়ে বিভিন্ন জাতিকে পরীক্ষা করেছেন, যার মোকাবেলা করার জন্য পূর্ব প্রস্তুতির শিক্ষাও দিয়েছেন।
কোরআনে সূরা ইউসুফের এক স্থানে দুর্ভিক্ষের বিবরণ রয়েছে। কারাবন্দি হজরত ইউসূফ (আ:)-এর স্বপ্ন ব্যাখ্যা শুনে বাদশাহ তাকে কারামুক্তি প্রদান করেন এবং তাকে অর্থ বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যা অনুযায়ী হজরত ইউসূফ (আ:) সাত বছর পর্যন্ত খাদ্য সামগ্রী জমা করা ছাড়াও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করেন এবং সাত বছর স্থায়ী দুর্ভিক্ষকালীন সময়ে তা ব্যবহার করেন। এভাবে তিনি দুর্ভিক্ষের সার্থক মোকাবেলা করেন।
ইসলাম যুগে রসূলুল্লাহ (সা:)-এর সময়ে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল্ বিশেষ করে ‘তাবুক’ যুদ্ধের ঘটনাটি ছিল দুর্ভিক্ষকালীন সময়ের। দুর্ভিক্ষের সাথে সাথে তীব্র গরম ছিল। এ ঘটনার বিবরণ সীরাত গ্রন্থগুলোতে সবিস্তারে রয়েছে। তাবুকের ঘটনাটি ছিল নবম হিজরি সালের রজব মাসের (নভেম্বর, ৬৩৫ খ্রি:)। এ দুর্ভিক্ষের সময় যুদ্ধের জন্য রসূলুল্লাহ (সা:) কেন বের হয়েছিলেন? কেউ কেউ এরূপ প্রশ্ন করে থাকেন।
‘তাবুক’ একটি প্রসিদ্ধ স্থানের নাম। এটি মদীনা ও দামেস্কের মধ্যবর্তী, মদীনা হতে চৌদ্দ মঞ্জিল দূরত্বে অবস্থিত। এ যুদ্ধের কারণ ছিল এই যে, ‘মূতা’ যুদ্ধের পর রূম সাম্রাজ্যের বাদশাহ আরবে হামলা চালাবার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। সিরিয়ায় রূমদের অধীন ‘গাসসানী’ খ্রিষ্টানকে এই উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করেছিল যে, সে যেন মদীনার খবরাখবর রূমের কায়সারকে নিয়মিত সরবরাহ করে। আরব খৃষ্টাদের গুজবে হিরাক্লিয়াস বিভ্রান্ত হয় যে, রসূলুল্লাহ (সা:)-এর ইন্তেকাল হয়ে গেছে এবং আরবরা দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে মৃত্যু বরণ করছে। এ কারণে হিরাক্লিয়াস ৪০ হাজার সৈন্য প্রেরণ করে মদীনা আক্রমনের জন্য। অপরদিকে সিরিয়ার ‘নিবতি’ সওদাগরগণ মদীনায় তেল বিক্রি করতে আসে এবং তারা খবর দেয় যে, রূমিরা সিরিয়ায় বিপুল সৈন্য সমাবেশ করেছে এবং তারা সৈন্য বাহিনীকে এক বছরের বেতন অগ্রীম প্রদান করেছে। তাদের এ দলে আরবের বহু গোত্র যোগদান করে এবং অগ্রগামী দল ‘বালকা’ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এসব খবর আরবের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং যাচাই করার পর রসূলুল্লাহ (সা:) এসব খবরের সত্যতা অবগত হন। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সা:) মুসলিম সৈন্য বাহিনীকে প্রস্তুতির নির্দেশ দেন, সময় ছিল তীব্র গরমের যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তীব্র গরমের অজুহাত দেখিয়ে মোনাফেকরা প্রকাশ্যে মুসলমানদের সাথে থাকলেও তারা যুদ্ধে গমনে অনীহা দেখায় এবং অন্যদেরকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করে। হুজুর (সা:) ত্রিশ হাজার সৈন্যসহ যখন তাবুকে পৌঁছেন তখন শত্রু পক্ষ হতে ময়দান খালি দেখতে পান, মুসলমানদের আগমণের খবর পেয়ে শত্রুরা আগেই সেখান থেকে প্রস্থান করেছিল। রসূলুল্লাহ (সা:) তাবুকে ২০ দিন অবস্থান করার পর প্রত্যাবর্তন করেন। দুর্ভিক্ষের সময় খ্রিষ্টানরা গুজব রটনা করে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে মদীনা আক্রমণের পাঁয়তারা করেছিল রসূলুল্লাহ (সা:) অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার সাথে তাদের সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করার জন্য দুর্ভিক্ষ অবস্থাকে প্রতিবন্ধকতা মনে করেননি। যেসব খ্রীষ্টান লেখক ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চান তারা জেনে শুনে এ বাস্তবতাকে আড়াল করতে চান।
পরবর্তীকালে হজরত উমর (রা:)-এর খেলাফত আমলে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তা মোকাবেলা করার জন্য তিনি যে সব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে ছিলেন তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে, সীরাত লেখকগণ সেগুলো গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করেছেন। খলিফার ঐ সময়কার একটি উক্তি স্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি বলেছিলেন: ‘ফোরাতের কূলে যদি একটি কুকুরও অনাহারে মৃত্যুবরণ করে সে জন্য আল্লাহর দরবারে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন