হাশরের ময়দানের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কোরআন ও হাদিসে যেসব কথা এসেছে, তার মধ্যে এটিও একটি। সব প্রাণী মৃত্যুবরণ করার পর আল্লাহ তায়ালা মালাকুল মাওত হযরত আজরাইল (আ.)-কেও মৃত্যুবরণ করতে বলবেন। আজরাইল নিজেই নিজের প্রাণ হরণ করবেন।
তখন আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকবে না। সর্বপ্রথম সামান্য যাদেরকে পুনর্জীবন দেয়া হবে, তাদের মধ্যে আমাদের মহানবী (সা.) প্রধান। আল্লাহ তখন ফেরেশতাদের বলবেন, সৃষ্টিজগতে কেউ জীবিত আছে কি? কোনো জওয়াব আসবে না। বলবেন, কোথায় দুনিয়ার রাজা বাদশাহ সম্রাটরা? কোথায় প্রাসাদ ও অট্টালিকার অধিবাসীরা? নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অবস্থানকারীরা?
প্রাণ ফিরে পাওয়া নৈকট্যশীল ফেরেশতারা জবাব দিবেন, কেউ নেই। সবকিছু সুনসান। নীরব নিস্তব্ধ। আল্লাহ বলবেন, ‘লিমানিল মুলকুল ইয়াওম’। অর্থাৎ, আজকের রাজত্ব কার? জবাব দেয়ার কেউ থাকবে না। আল্লাহই বলবেন, পরম প্রতাপান্বিত একমাত্র আল্লাহর।
এরপর নবী করিম (সা.)-এর মাধ্যমে হাশরের মাঠের অবস্থান, হামদের পতাকা হাতে নবী করিম (সা.)-এর আগমন, আল্লাহর অভ‚তপূর্ব প্রশংসা, সেজদা, সুপারিশ, মাকামে মাহমুদ স্থাপন, হাওজে কাউসার ইত্যাদি কার্যক্রম শুরু হবে।
আজকের বিশ্বও আকস্মিকভাবে মিনি কেয়ামতের দৃশ্য দেখছে। হাশরের সাথে এর কোনো তুলনা চলে না। তবে, সামান্য নমুনা দেখা যাচ্ছে। দুনিয়ার সব ব্যস্ত ও উন্নত নগরী লকডাউন। মানুষ স্বেচ্ছাবন্দি ও ভীত সন্ত্রস্ত। একটি মারাত্মক ভাইরাস, যার ছোঁয়া কার্যকর হওয়া মাত্রই মানুষটি মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যায়। ১৪ দিনের মধ্যে আক্রমণের চিহ্ন দেখা দেয়। ভুলে বা ইচ্ছায় যেই তার ছোঁয়া পায়, প্রায় সময়ই সে আক্রান্ত হয়ে যায়। কত নিষ্ঠুর রোগ।
মানুষ মৃত্যুর সময়ও আপনজনদের কাছে দেখতে চায় না। ভাবে, আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাই। আমার আপনজনেরা বেঁচে থাকুক। এজন্য লাশ সৎকারে নরমাল মানুষ যেতে সাহস পায় না। পোড়ানো বা মাটি চাপা দেয়ার কাজটি সংক্রমণরোধক পোষাক পরা স্বেচ্ছাকর্মীরা করছে। শুধু তাই না, মানুষ আপনজন আক্রান্ত হলে তাকে ছেড়ে পালাচ্ছে।
বাংলাদেশে একজন প্রবাসীকে বিপদমুক্ত সনদ দিয়ে ১৪ দিন সতর্ক ও বিচ্ছিন্ন থাকার পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠালে লোকটি বাড়ি গিয়ে দেখে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে গেছে। প্রাণের ভয়ে প্রবাসী স্বামীকেও সে স্বাগত জানায়নি। জীবনের মায়া বড় মায়া, একথাটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন।
হাশরের দিনটি এমন, যেদিন মানুষ তার ভাই, মা, স্ত্রী, সন্তান, সবাইকে দেখামাত্র ছুটে পালাবে। সেদিন প্রত্যেকে নিজের অবস্থা নিয়ে এতই ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন থাকবে যে, আর কারও দিকে নজর দেয়ার সুযোগ থাকবে না। (সূরা আবাসা : আয়াত ৩৪-৩৭)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন