বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাটে হাটে কেন্দ্র স্থাপন করে ধান কেনার দাবি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০২০, ১২:০৪ এএম

হাওর অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ কৃষক। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক দামে তারা বাজারে ধান বিক্রি বরছেন। সরকার ১০৪০ টাকা মণ দরে কৃষকের ধান ক্রয় করার ঘোষণা দিলেও সে কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। সুনামগঞ্জে সরকারি ভাবে ধান ও চাল কেনা কর্মসূচি গত ২৯ এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক উদ্বোধন করেছেন। আর নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক মুইনুল ইসলাম গত ২৬ এপ্রিল মোহনগঞ্জ উপজেলায় ধান কেনা কর্মসূচির প্রতিকি উদ্বোধন করেন। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে আরও দু’তিন সপ্তাহ লাগবে। এছাড়া যে প্রক্রিয়ায় লটারির মাধ্যমে ধান কেনা হবে তাতে সব কৃষক সরকারের কাছে তাদের ধান বিক্রি করতে পারে না। তাই হাওর অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে হাটে সরকারি কেন্দ্র স্থাপন করে দ্রুত ধান কেনার দাবি ঁজানিয়েছেন কৃষকরা।

নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলার তলার হাওর এলাকার নগর জয়পুর গ্রামের কৃষক আবুল মিঞা বলেন, অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ করে তিনি ধান চাষ করেছেন। এখন সেই ঋণের টাকা শোধ করতে মাড়াই করার সাথে সাথে ভিজা ধান কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার ধান কবে কিনবে কিছুই জানেন না। প্রয়োজনের জন্যই তাকে অনেক লোকসান দিয়ে পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

একই গ্রামের কৃষক ইছহাক আলী জানান, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার যে প্রক্রিয়া তা অনেক জটিল। প্রতিটি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে লটারি করে কিছু সংখ্যক কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। গত বছর যে সব কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করেছেন তারা এবার এ সুযোগ পাবেন না। তাই এসব জটিল প্রক্রিয়ার আবর্তে পড়ে সব কৃষক সরকারের কাছে নির্ধারিত ১০৪০ টাকা মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেন না। সরকার দেরিতে ধান কেনা শুরু করার কারণে কৃষক বাধ্য হয়ে কম দামে পাইকার বা ফড়িয়াদের কাছ ধান বিক্রি করেন। এরপর সরকার তখন তাদের লক্ষমাত্রা পূরণ করার জন্য পাইকার বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে ধান কিনে নেয়। এতে করে কৃষক সর্বস্বান্ত হলেও লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগী পাইকার ও ফড়িয়ারা। কৃষকরা যাতে উপকৃত হয় এজন্য দ্রুত হাওর এলাকার প্রতিটি হাটে কেন্দ্র খুলে সরকারের ধান কেনার জন্য তিনি দাবি জানান।

মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওর এলাকার গাগলাজুড়ের মনিরুজ্জান মনি বলেন, এই বোরো ফসলের ওপর তাদের সব ভরসা। বোরো ধান বিক্রি করে তাদের পরিবারের লোকজনের পরনের কাপড় থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় সবকিছু করতে হয়। তাই ধান মাড়ানোর সাথে সাথে তা বিক্রি করতে হয়। এখন তারা প্রয়োজনেই পাইকারের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করছেন। সরকার যখন ধান কেনা শুরু করে তখন তাদের ধান বিক্রি শেষ হয়ে যায়। তাই সরকার যদি কৃষকদের বাঁচাতে চায়, তাদের পাশে দাঁড়াতে চায় তাহলে দ্রুত হাওর এলাকার বিভিন্ন বাজারে কেন্দ্র স্থাপন করে সরাসরি ধান কেনা শুরু করতে হবে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, ধানের ফলন ভালো হলে কি হবে, তারাতো এর ন্যায্য দাম পায়না। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে তাদের ধান বিক্রি করতে হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারলে তবুও তাদের জীবন কিছুটা বাঁচে। কিন্তু সরকার বিভিন্ন নিয়ম কানুন করে যখন ধান কেনা শুরু করে তখন তাদের প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়। তাদের সব ধান বিক্রি শেষ হলে সরকার তখন পাইকারদের কাছ থেকে ধান কিনে নেয়। তাই কৃষকদের বাঁচাতে হলে দ্রুত বিভিন্ন বাজারে কেন্দ্র স্থাপন করে সরাসরি ধান কেনার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার রানি খামার গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তার জানান, জমিতে একমণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ৯০০ টাকারও বেশি। সে ধান এখন বিক্রি করতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। সরকার কবে ধান কিনবে তা তারা জানে না। সরকার যদি দ্রুত বিভিন্ন বাজারে কেন্দ্র স্থাপন করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে নেয়ার ব্যবস্থা করতো তাহলে তারা উপকৃত হতো।

এদিকে কৃষক বাঁচানোর জন্য হাওর অঞ্চলে বিভিন্ন বাজারে কেন্দ্র স্থাপন করে সরাসরি ধান কেনার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও দাবি জানিয়েছেন। নেত্রকোণা জেলা কৃষক দলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মিলকী বলেন, হাওর অঞ্চলের কৃষকদের বাঁচাতে হলে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিভিন্ন জটিলতা বাদ দিয়ে এ এলাকার বিভিন্ন বাজারে কেন্দ্র স্থাপন করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। এ ছাড়া জেলার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জাসদ, বাসদ এবং বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিকদলও দ্রুত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন