শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

আইএস ক্রুসেডের কৌশলগত নাম নয়তো?

প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ঈদের জামাতে হামলা আমাদের অভিজ্ঞতায় এক নতুন সংযোজন। এই হামলা রহস্যের আর এক দুয়ার খুলে দিল যেন। তবে জঙ্গি মদদদাতা হিসেবে এতদিন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হতো তা এবার কাদা পানিতে মুখ থুবড়ে পড়লো যেন। ধৃত ও নিহত জঙ্গিদের কেউ কোনদিন ‘জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’গুলোর নাকি ছায়াও মাড়ায়নি। বরং ওরা নাকি এমন সব স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানেই পড়াশোনা করে আসছে যাদের ব্যাপারে ইসলামী চিন্তাচেতনার বিপরীত মেরুতে বিচরণের অভিযোগই প্রচুর। যতটুকু জানা গেছে, ওদের পারিবারিক ট্রেডিশনও এমন নয় যে ড্রইং রুমের বুক সেলফগুলোতে কথিত ‘জঙ্গি’ বই’র সন্ধ্যান পাওয়া যায়। এমন পরিবেশ থেকে হঠাৎ তারা ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জজবায় নির্বিচারে ও অকারণে নিরপরাধ মানুষ খুনের মন্ত্রে দীক্ষিত ও আত্মঘাতী হয়ে উঠলো কেমন করে? অথচ এ দুটো কাজই ইসলামের দৃষ্টিতে নিকৃষ্টতম অপরাধ।
আইএসের কোন কাজটা ইসলামসম্মত আর তাদের কর্মকা-ের বেনিফিসিয়ারিই বা কারা? এদের হাতে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ খুন হয় বলে ধারণা, যাদের হাজারের একজনও অমুসলিম কিনা সন্দেহ। সম্পদহানির ক্ষেত্রে এই হার আরো প্রকট। সুতরাং প্যারিস, লন্ডন বা ব্রাসেলসের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনার তুলনায় হতে পারে আইওয়াশ। তাছাড়া গুলশান হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার খবরটা আমাদের পুলিশ জানার আগেই একটি বিদেশি মিডিয়া জনলো কেমন করে? প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা, হামলা আরও হতে পারে, তবে আমরা মনে করি, বাইরের ইন্দন না থাকলে নয়। তাছাড়া ওদের দমনে আমাদের আনসার-চৌকিদারই যথেষ্ট, কোনো দেশের সেনাবাহিনী ভারা করার দরকার নেই। মদের বোতলে ‘ইসলামী’ লেবেল এঁটে দিলেই হারাম মদ কী হালাল হয়ে যায়? পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমগুলোর ভাষ্যমতে ইউরোপ থেকে মুসলিম তরুণরা নাকি আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে পঙ্গপালের মতোই মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ছুটছে। তাহলে সীমান্ত অতিক্রমে তাদের বাধা না দিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কেন? অথচ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি আইএস নিপাতে জীবন-মরণ পণ করে বসে আছে! কৌতুক আর কাকে বলে? আইএস সকলের ‘কমন শত্রু’ হলে তাদের অফুরন্ত অস্ত্র ও অর্থের উৎসটা কী? তাদের মতে ‘বিশ্ববিধ্বংসী অস্ত্রের অধিকারী’ সাদ্দাম নিপাতে তিন দিনের যুদ্ধই যথেষ্ট হলে আইএসের মতো রাষ্ট্রহীন ভুঁইফোড়দের দমনে বছরের পর বছর লেগে যায় কেমন করে? বরং তাদের সর্বশেষ ফ্রন্ট এখন সুদূর বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত। সাদ্দামের চেয়ে আসাদ ভয়ঙ্কর অস্ত্রের মজুদদার না হলে ৫ বছরেও তাকে কাবু করতে না পারার কারণটা কী? ওদিকে তেলের দাম ৭০ শতাংশ পড়ে গেলেও অস্ত্রের মূল্যে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার হাকিকত-মারফত এরপরও বোঝে না এলে কপালে আরো দুঃখ আছে।
আরবদের অহংকার বিশ্বের সর্বোচ্চ দালানটা দুবাইয়ে, ইসরাইলের অহংকার বড় বড় বোমার মজুদটা তাদের হাতে। আরবদের শঙ্কিত নজর তেলআবিব নয় বরং তেহরানের কল্পিত বোমার দিকে। আর তেহরানের মাথা গরম উম্মাহর ঐক্য নয় বরং বিপ্লব রপ্তানির কৌশল নিয়ে। বিচিত্র এক জগৎ যেন মধ্যপ্রাচ্যে! ইদানীং খুব ঘটা করে বলা হচ্ছে ‘ইরাক যুদ্ধ ভুল ছিল’। এই উপলব্ধি আসলেই কী সত্য ও সততার বহিঃপ্রকাশ না আর একটা আসন্ন অভিযান উপলক্ষে আইওয়াশ?
এর আগে চতুর্থ ক্রুসেডের ঘোষণা দিয়েছিলেন বুশ টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরপরই। ইরাক যুদ্ধের মতোই হয়তো একদিন বিশ্ব স্ববিস্ময় শুনবে এই নারকীয় হামলার নায়ক বিন লাদেন নয় স্বয়ং বুশ বা তারই কোনো সহযোগী! কিন্তু প্রশ্ন হলো চতুর্থ ক্রুসেডের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন কী বুশ অথবা ওবামা? সুতরাং আইএস যে সেই চলমান ক্রুসেডের কৌশলগত অস্ত্র ভিন্ন অন্য কিছু নয় তা বোঝার বয়স আজও হয়েছি কী ভুক্তভোগীদের?
বাংলাদেশে সম্প্রতি সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপলব্ধি বোধকরি সত্যের খুব কাছাকাছি। বহির্বিশ্বের সংশ্লিষ্টতা এক্ষেত্রে অনেকটাই প্রমাণিত ১/১১-এর মতোই। সুতরাং ‘দায় তাদেরও নিতে হবে’ এ এক সাহসী উচ্চারণ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার দাবির ওপর অবিচল থাকতে পারবেন কি যখন ৫ জানুয়ারির দুর্বলতাকে পুঁজি করে দেশটাকে কুরে কুরে খেতে সুযোগ সন্ধানীরা তৎপর। ওরা অনেকটাই অভিন্ন প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আইএস দমনের বাহানায় দেশটাকে আর একটা ‘সিরিয়া’ বানাতে চায়। আমরাও কী তাই চাই? তা না হলে জাতীয় ঐক্যের যে আহ্বান উঠেছে সকল মহল থেকে তাতে সারা দেওয়া উচিত সকলের। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়ে গেছে। কথাটি ঠিক। আমরা মনে করি, একে সংশ্লিষ্ট কাঠামোতে আনা দরকার। যেমনিভাবে বিপর্যয়ের পর জাতীয় ঐক্য জোরদারের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তুরস্কে।
ওরা ভালো করেই জানে ‘গণতন্ত্র বনাম স্বৈরতন্ত্র’ এই প্রশ্নে জাতি আজ উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুতে বিভক্ত। শুধু বাংলাদেশ নয়, একই অভিন্ন পলিসিতে আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে ক্রুসেডপন্থীরা। কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মায়াকান্না আর কোথাও আবার গণতন্ত্রের সোনালি সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই শেষ করে দেয়ার কাজটাও করছে তারাই। আলজেরিয়া, মিশর, বাংলাদেশ নজির হিসেবে তো চোখের সামনেই। একই প্রচেষ্টা চলতে দেখা গেছে আরও বেশ কয়েকটি দেশে। ফ্রান্সের ঘটনার পর দিনই তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টা কাকতালীয় না পরিকল্পিত? এর আগেও তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এবারই প্রথম নির্বাচিত সরকারের সমর্থনে কথা বলতে শোনা গেল পশ্চিমা ভদ্রলোকদের। তা হলে মুরশি কী নির্বাচিত ছিলেন না? এবার নতুন পরিকল্পনা ‘শান্তির জন্য ইরাককে ৩ ভাগ করা চাই’। ধারণা করি, তাদের পরিকল্পনা থেকে বাদ নেই পাকিস্তান আর বাংলাদেশও। ৭০ বছর গত হলেও কাশ্মীর প্রশ্নে গণভোটের সিদ্ধান্তটি ভুলেই গেছে হয়তো জাতিসংঘ। কিন্তু পূর্বতিমুর আর দক্ষিণ সুদানে দু’দিনের আন্দোলনেই সফল হয়ে গেল জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে!
ব্যাপারটা কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছে হয়তো সউদী আরব। কিন্তু আমরা? ওয়েবসাইটে অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে হামলাকারীদের যে ছবি দেখা গেল ওগুলো কী বাংলাদেশে তোলা নাকি বিদেশে? পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ কেমন করে সম্ভব? চিন্তার বিষয়, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে দেশের ভিতরে না বিদেশে? বাংলাদেশ সরকারতো তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেনি তাহলে এই অস্ত্রের উৎস কী? অস্ত্রের উৎস ইরাক বা সিরিয়া তাই-বা কেমন করে সম্ভব? বিলম্বে হলেও সউদী বাদশা সালমান বলেছেন, আইএস নামে ইসরাইলি সৈন্যরাই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ কথাটাই বলেছিলাম বহু আগে এক নিবন্ধে। ব্যাপারটা যদি তাই হয় তাহলে ইসরাইলের আতঙ্ক হামাস আর ইখওয়ান নির্মূলে সউদী সরকার ইহুদী মায়ের সন্তান আলসিসি আর ইসরাইলের সাথে একাট্টা হলো কেমন করে? উম্মাহ্্র স্বার্থ বড় না রাজতন্ত্র? লক্ষ্যণীয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সউদী আরব সফরের পরপরই একই সাথে বাংলাদেশ ও সউদী আরবে জঙ্গি হামলা হঠাৎ বেড়ে গেছে। আর হামলাগুলোর প্রকৃতিও একই রকম! যে কথা বলতে চেয়েছিলাম, আইএসের ‘নেতৃত্বে দিচ্ছে ইসরাইল’ এটা সত্য হলে আমাদের এখানে আইএসের উপস্থিতি ও অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্তে পৌঁছা অনেকটাই সহজ হয়। কারণ আমাদের কোনো এক নিকট প্রতিবেশীদের রয়েছে ইসরাইলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। সুতরাং বাংলাদেশি আইএস জঙ্গিদের নিরাপদ ট্রেনিং ও অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে একটা সতর্কবার্তা পাওয়া যায় সহজেই।
গত বছর দু’জন বিদেশি নাগরিক খুনের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেখা গেল পূর্ব-পশ্চিমজুড়ে। কোনো কোনো দেশ তাদের নাগরিকদের সতর্ক চলা ফেরার এমনকি বাংলাদেশ ছাড়ার পরামর্শও দিয়েছিল। কিন্তু একই সময় আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সন্ত্রাসী ঘটনায় ডজনখানেক বাংলাদেশি খুন হলেও উদ্বেগ লক্ষ করা গেল না কারো মধ্যে, না জাতিসংঘ, না বাংলাদেশের সরকারের। নিশাদেশাই এর মতো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেন উড়াল দিতে পারলেন না ওই সব ঘটনার পর? তা না হয় নাইবা পারলেন কিন্তু আমরা ‘গভীর উদ্বিঘœ, সতর্ক চলাফেরা করো’ কথাটিও যদি বলতে পারতেন তবে আজ নিশাদেশাই ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসার বোধকরি চিন্তাই করতেন না। শান্তির স্বার্থে, যারা ইরাক, সিরিয়া, সউদী আরবকে ধ্বংস করতে চায়, ফিলিস্তিনিদের লাশ আর ঝাঁটা পেটা দেখে সুখ পায় তারা বাংলাদেশকে নেক নজরে দেখে তেমনটি মনে করার কারণ নেই। ওদের অপকৌশলের জবাবে আরবরা কেন বলতে পারেন না পুরো আরব জাহান মিলে একটা দেশ চাই? অতবড় আমেরিকা-রাশিয়ার জন্য একজন প্রেসিডেন্ট যথেষ্ট হলে আরবদের এত রাজা-বাদশা-প্রেসিডেন্ট কেন প্রয়োজন? দেড়শ’ কোটি মানুষের দেশ চীন, একশ’ ত্রিশ কোটির দেশ ভারত নানা ভাষা, ধর্ম-বর্ণ নিয়েও এক পতাকা তলে থাকতে পারলে আরবরা পারবে না কেন?
সে যাই হোক, জাতীয় ঐক্যের মোকাবিলায় এ সকল কূটকৌশল খড়কুটোর চেয়ে বড় কিছু নয়। পরিস্থিতি সামনে রেখে বিরোধী দলসহ সকল মহলে আজ জাতীয় ঐক্যের যে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এ মুহূর্তে তা ঝড়ের রাতে আশার আলোর মতোই বলা চলে। তাই পরস্পরের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। সঙ্গতভাবেই আলোচনায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, সংবেদনশীল ঘটনায় ধৃত আসামিদের ক্রসফায়ারে হত্যার মতো বিষয়গুলো উঠবে। তাই বলে ঐক্যের ডাক এড়িয়ে যাওয়া সঙ্গত হবে বলে মনে হয় না। ঐক্যের ভিত বা প্লাটফর্ম কী হবেÑএমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। তুরস্কের দৃষ্টান্ত দিয়েই বলতে চাই, উত্তর হবেÑনির্ভেজাল ও নিরাপদ গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা, যে গণতন্ত্র আমাদের সাংবিধানিক অধিকার, সে গণতন্ত্র এই মাটির ওপর জনগণের মালিকানার স্বীকৃতিও। আশার কথা, বিভ্রান্ত তরুণদের ঘরে ফিরে আসার আকুতি এখন ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে, যে বিষয়ে অনেক আগেই যতœবান হওয়া উচিত ছিল। তাদের কর্মকা- যে আদৌ ইসলাম সম্মত নয় বরং মুসলিম স্বার্থ বিরোধী তা বোঝাবার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সকল উদ্যোগ ভালো ফল দেবে আশা করা যায়। কিন্তু ইসলামের শাশ্বত সৌন্দর্য, বিশ্বজনীন মানবতা, ভ্রাতৃত্ব, গণতন্ত্র ও সহনশীলতার মতো মহৎ শিক্ষাগুলো হতে তরুণদের অজ্ঞ ও বঞ্চিত রাখার গৃহীত কৌশলগুলো তা হলে কার স্বার্থে? এখন আবাদহীন পতিত জমি পেয়ে কোনো সুযোগ সন্ধানী যদি গাঁজা বা আফিমের চাষ করে থাকে ‘ইসলামী’ আবাদের নামে তার দায় নেবে কে? তাই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে বিভ্রান্ত তরুণদের চিন্তার পরিশুদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে একই বিপর্যয় হতে রক্ষার নিমিত্তে এখন থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আর এ লক্ষ্যে স্থায়ী সফলতার জন্য মিডিয়ায় সাময়িক প্রচারই যথেষ্ট নয় বরং পাঠ্য বইতেও ইসলামের বিশ্বজনীন রূপ ও শাশ্বত সৌন্দর্যের প্রতিফলন আবশ্যক। সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কর্মকা-ে তরুণদের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে আইন ও ইনসাফের অনুপস্থিতিও একটা কারণ হতে পারে। সুতরাং এই বিষয়টিও ঠা-া মাথায় বিবেচনায় নিতে হবে। আইন ও ইনসাফ দুটোই আজ দেশ থেকে তিরোহিত যেন। বিচার যদিও কিছু থেকে থাকে তাও ইনসাফ ছাড়া। এটাকেই বলা হয়, ‘দুর্বলের উপর প্রবলের অত্যাচার’।
প্রায়ই একটি কথা নীতিনির্ধারকদের বলতে শোনা যায়, ‘কাউকে আইন হাতে নিতে দেয়া হবে না’ কথাটা যিনি বলেন তার তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের উপরও কী তা প্রযোজ্য নয়? একই কথা সরকার সমর্থকদের জন্যও প্রযোজ্য। কিন্তু ব্যক্তির তুলনায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব সীমাহীন। সুতরাং নাগরিক সমাজে যখন এই স্থির বিশ্বাস জন্মায় যে, ‘খোদ রাষ্ট্রশক্তি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাহীন, ইনসাফের প্রশ্নে দলান্ধ, ক্রসফায়ারের নামে ঠা-া মাথায় খুন করেও বিবেকের দংশনহীন’, তখন গুম-খুনের মতো অপরাধগুলো সাধারণের কাছে একধরনের বৈধতা পেয়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই। ভুক্তভোগীর মধ্যে এভাবে সৃষ্ট ক্ষোভ ও হতাশা থেকে এক সময় জন্ম নেয় প্রতিশোধস্পৃহা। হেন মানসিক বিপর্যয়ের ফলে যে কেউ হয়ে যেতে পারে বিভ্রান্ত প্রচারণার শিকারও। অভিযোগ রয়েছে, অভিভাকরা তাদের সন্তান নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও ফল পাননি ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকে, পুলিশ বা র‌্যাবের পোশাকে দিনে বা রাতের আঁধারে তুলে নেয়ার ঘটনা কত শত! এ ধরনের অভিযোগে প্রশাসনের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা হলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন নয় কী? এই বিষয়গুলো জঙ্গিবাদ প্রসারে সহায়ক হলেও তা যেন কেউ আমলে নিতেই নারাজ। ওদিকে সন্ত্রাসী ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ আসামিরা প্রায়ই ক্রসফায়ারে নিহত হচ্ছে। গুম, খুন বা ক্রসফায়ারের মতো বিষয়গুলোও যে জঙ্গি কর্মকা-ের মতোই ইসলামী মূল্যবোধবর্জিত, বেআইনি ও অমানবিক এটা বোঝতে আমরা কী জঙ্গিদের মতোই অসমর্থ? জঙ্গিবাদ প্রসারের আর একটি অন্যতম কারণ যে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা তা এবার স্পষ্ট হওয়ার পরও আমরা সতর্ক হবো কি? পিস টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত কী তারই প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া? জঙ্গি মদদের প্রশ্নে আপস নেই বটে, তবে তলিয়ে দেখা দরকার এটাও জঙ্গিবাদ উসকে দেয়ার পক্ষে কোনো সূক্ষ্ম চাল কিনা?
লেখক : প্রাবন্ধিক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন