বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাস বর্তমানে এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের অনন্যা দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিস্তার লাভ করছে। ফলে দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ সরকার সারাদেশ লক ডাউন করে রেখেছে। যার ফলে বিপাকে পড়েছে দেশের অসচ্ছল, মধ্যবিত্ত, দিনমুজুর এবং অল্প বেতনে চাকরি করা মাদরাসার শিক্ষকদের পরিবারগুলো। আর এসব পরিবারের বিপদে সমাজের ধনী ও সামর্থবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা এবং এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশি বেশি সদকা এবং তাওবা-ইস্তেগফার করা প্রত্যেকের কর্তব্য।
দানের অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো- (১) দানকারীগণ আল্লাহর বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত। (২) দান করার ফলে বিপদাপদ দূর হয়, সম্পদ বরকতময় হয়। (৩) দানকারী ও তার বংশধরদের হাতে ধনসম্পদ দীর্ঘস্থায়ী হয়। (৪) দান করার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্রতা দূর হয়ে শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। (৫) সর্বোপরি দান করার মাধ্যমে আল্লাহ তা›য়ালার সন্তুষ্টিলাভ করা যায়। আর এই দান করার ব্যাপারে তাগিদ দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা›য়ালা বলেন, ‹তারাই মুত্তাকী, যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান রাখে, নামায কায়েম করে এবং যা তাদের রিজিক দান করি, তা হতে খরচ করে।› (সূরা বাকারা: ০৩) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‹মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদের যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলেন না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।› (সূরা মুনাফিকুন : ৯-১০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা›য়ালা বলেন, ‹যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত করো, তবে তা কতই না উত্তম। আর যদি দান গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম। আল্লাহ তা›য়ালা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দেবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্মের খবর রাখেন।› (সূরা বাকারা : ২৭১)। আল্লাহ তা›য়ালা আরো বলেন, ‹যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে এবং ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্য তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার।’ (সূরা বাকারা : ২৬২)
দানের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ বলেছেন, ‹খেজুরের একটি টুকরা দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করো।› (বুখারী ও মুসলিম) আরেক হাদিসে হযরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ্রনিশ্চয়ই দান-সদকা কবরের আজাব বন্ধ করে দেয়। আর কিয়ামতের দিন বান্দাহকে আরশের ছায়ার নিচে জায়গা করে দেয়।› (তাবরানি ও বায়হাকি)। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‹মানুষের জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা, তার মৃত্যুর পর একশ› দিরহাম দান করার চেয়ে উত্তম।› (আবু দাউদ মিশকাত) হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‹দান সম্পদ কমায় না, দান দ্বারা আল্লাহপাক বান্দার সম্মান বৃদ্ধি ছাড়া কমায় না। কেউ আল্লাহর ওয়াস্তে বিনয় প্রকাশ করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বড় করেন।› (মুসলিম)।
সুতরাং, আমাদের উচিত নিকটস্থ গরিব-দুঃখী, অসহায় এবং অভাবী আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়াপ্রতিবেশীদের বেশি বেশি দান করা। এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ তা›য়ালার সন্তুষ্টিলাভ করা। আল্লাহ তা´য়ালা সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন