শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

উপবৃত্তির টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

গোপালঞ্জে কোমলমতি শিশুদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মেরী গোপীনাথপুর হাই সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১৮ জন শিক্ষার্থীর অধিকাংশকেই টাকা কম দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্কুলে ২টি হাজিরার খাতা রয়েছে। একটি খাতায় শিক্ষার্থীদের হাজিরা দেখানো হয়। অন্য একটি খাতায় কারসাজি করেই গড় হাজির দেখানো হয়। পরে সব শিক্ষার্থীর জন্য উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে শিক্ষার্থীদের পাওনার কম প্রদান করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের টাকা কম দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাগজে কলমে সব কিছু সঠিক দেখানো হয়। তদন্ত হলে তাদের ধারার উপায় নেই বলেও অভিভাবকরা অভিযোগ করেন। স্কুলের শিক্ষক, ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা উপবৃত্তি মনিটরিং অফিসার যোগসাজোশে উপবৃত্তির এসব টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবক জবেদা বেগম বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে ৫ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তারা নিয়মিত স্কুলে যায়। ক্লাস করে। আমার তিন ছেলে মেয়ের গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ১ বছরে পাওনা হয়েছে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা। কিন্তু ১ বছরে মাত্র ৬শ’ টাকা প্রদান করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষককে টাকা কম দেয়ার ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি আমাদের বলেন, আপনার ছেলে মেয়েরা ঠিক মত স্কুলে আসে না। তাই টাকা কম পেয়েছে। ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুরসালীন অভিযোগ করে বলে, আমি প্রতিদিন স্কুলে আসি। কিন্তু আমাকে ১ বছরে ১ হাজার ২শ’ টাকার স্থলে মাত্র ২শ’ টাকা বৃত্তি হিসেবে প্রদান করেছে। ওই স্কুলের শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থীর দুই অভিভাবক এসমতারা ও হামিদা বেগম বলেন, আমরা নিয়মিত ছেলেদের স্কুলে পৌঁছে দেই। তারপরও স্যার-ম্যাডামরা বলেন, তোমার ছেলেরা ঠিকমত স্কুলে আসে না। আমাদের ছেলেদের মাত্র ২শ’ টাকা করে দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক জানান, স্কুলে ২টি হাজিরা খাতা রয়েছে। টাকা কম দেয়ার উদ্দেশ্যে কৌশলে একটি হাজিরা খাতায় শিক্ষার্থীদের কম হাজিরা দেখানো হয়। মূল হাজিরার খাতা লুকিয়ে রাখা হয়। শিক্ষার্থীদের নামে পুরো টাকা তুলে এনে স্কুলের শিক্ষক, ওই ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা উপবৃত্তি মনিটরিং অফিসার যোগসাজোশে উপবৃত্তির এসব টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া টাকা কম দেয়ার ব্যপারে প্রতিবাদ করলে ছেলে মেয়েদের টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন প্রধান শিক্ষক। সরকার স্কুলে উপস্থিতি বৃদ্ধি ও ঝরেপরা রোধে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। এ কারনে স্কুলে শিশুর উপস্থিতি ও ঝরেপরার হার কমেছে। কিন্ত টাকা লুটে খেতেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অধিকাংশ অভিভাবক অভিযোগ করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুলতানা পারভিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিভাবকেরা না বুঝেই আমার উপর এ মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। স্কুলের হাজিরা খাতা দেখে যে সকল শিক্ষার্থীর ৮৫% হাজিরা রয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে আমরা ব্যাংকে টাকার চাহিদা পত্র পাঠাই। ফেল করে কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে থেকে গেলে বৃত্তি পাবে না। চাহিদাপত্র অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এসে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের হাতে টাকা তুলে দেন। টাকা আমাদের হাতে দেয়া হয় না। সুতরং এখানে আমদের টাকা আত্মসাতের কোন সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে জানাতে চাইলে আমি কাউকে টিসি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেইনি। ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষা অফিসার মোঃ আমজাদ হোসেন উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক কোন শিক্ষার্থীকে হাজির খাতায় অনুপস্থিত দেখাবে বলে আমার মনে হয় না। এখানে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আমার মনে হয় ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা অভিভাবকদের নিয়ে এক সাথে বসে বিষয়টি সঠিকভাবে বোঝালে তাদের ভুল ভেঙ্গে যাবে। জেলা উপবৃত্তি মনিটরিং অফিসার কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানানেই। আমি কোন দিন ওই স্কুলে যাইনি। যোগসাজোশে টাকা আত্মসাতের কোন প্রশ্নই ওঠে না। শিশু শেণিতে শিক্ষার্থী প্রতি মাসিক ৫০ টাকা করে ও অন্যান্য শ্রেণীতে ১শ’ টাকা করে প্রদান করা হয়। কোন মাসে শিক্ষার্থী ৮৫ ভাগের কম উপস্থিত থাকলে সে মাসে তাকে উপবৃত্তি দেয়া হবে না। এ কারণে টাকা কম বেশি পেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ভাল বলতে পারবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন