করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে জীবাণুনাশক পণ্যের চাহিদা তুঙ্গে। ফার্মেসিতে এখনো হেক্সিসল-হ্যান্ডরাব, ডেটল, স্যাভলন লিকুইড চাহিদা মতো মিলছে না। কিন্তু এ চাহিদাকে পুঁজি করে মানহীন জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও লিকুইড অ্যান্টিসেপটিক এবং নিম্নমানের মাস্ক, পিপিই, গগলস, গ্লাভস পণ্যসামগ্রী মিলছে কুমিল্লা নগরীর ফুটপাথ থেকে শুরু করে স্টেশনারি ও প্রসাধনী দোকানে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ব্যবহারে রয়েছে মিথ্যা সুরক্ষার হাতছানি। যাতে সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, রামঘাট, টমসনব্রীজ, রাজগঞ্জ, পুলিশলাইন, চকবাজার, কাপড়িয়াপট্টি, রাণীরবাজার ও শাসনগাছা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ নানা ধরণের সুরক্ষাসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। বোতল ও রঙ দেখে তাৎক্ষণিকভাবে আসল ও নকল জীবাণুনাশক পণ্যের পার্থক্য বোঝার উপায় নেই। স্টেশনারী দোকানেও নামিদামি কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও জীবাণুনাশক পণ্যের জায়গা দখলে নিয়েছে অখ্যাত কিছু প্রতিষ্ঠানের বানানো পণ্য। ফুটপাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতলের গায়ে যে দাম উল্লেখ রয়েছে তার অর্ধেকের কম দামেও বিক্রি হচ্ছে। আবার ডেটলের কাঁচের আসল বোতলে নকল লিকুইড ১৫/২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আসল স্যাভলনের মতো দেখতে সেভলন, সেভলো, সেভোলন নামে ফ্যামেলি সাইজের ১০০০ মিলির বোতলের লিকুইড অ্যান্টিসেপটিক মিলছে কমদামে। আর কম দামে পাওয়ায় ভোক্তারাও কিনছেন দেদারসে। এদিকে, ফার্মেসিগুলোতে সার্জিক্যাল মাস্কের সঙ্কট এখনো রয়ে গেছে। ফুটপাখে দেখতে সার্জিক্যাল মাস্কের মতো এমন নিম্নমানের মাস্ক মিলছে। চীনের তৈরি নিনজা মাস্কের মতো হুবহু নিম্নমানের মাস্কও পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাথে। এগুলো দিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া মুখে এক ধরনের উটকো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। হার্টকেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সংক্রমণ ঝুঁকি এড়ানোর জন্য রাস্তাঘাট, ফুটপাথ থেকে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, জীবাণুনাশক পণ্য কেনা যাবে না। নকল, মানহীন জীবাণুনাশক ও সুরক্ষাপণ্য ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তো দূরের কথা, সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা যারা ব্যবহার করছেন তারা ভাবছেন সুরক্ষিত আছেন। কিন্তু তিনি বা তার পরিবার একটা মিথ্যা সুরক্ষা ভাবনায় রয়েছেন। যা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই এসময়ে মানুষকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। প্রশাসনের মনিটরিং বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, কুমিল্লা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, নতুন গজিয়ে উঠা বা লোকাল ব্র্যান্ডের জীবাণুনাশক পণ্যগুলো স্যানিটাইজারের ফর্মুলা মেনে তৈরি করছে কি না, সেটা নিয়ে সন্দিহান। মানুষকে জিম্মি করে সঙ্কটে ফেলে ব্যবসা করে অতি মুনাফা করার যে প্রক্রিয়া চলছে এটা বন্ধ হওয়া উচিত। স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরদারি প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন