শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অনলাইন ও টিভিতে প্রচারিত পাঠদানে অনীহা

রূপগঞ্জে অলস ৩০ হাজার শিক্ষার্থী

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২০, ১২:২৫ পিএম

মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সরকারী ও বেসরকারি ৫ শতাধিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজারের অধিক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অলস সময় পার করছে। সরকার তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা বাতায়ন নামে বাংলাদেশ সংসদ টিভিতে নিয়মিত শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক পাঠদান প্রচার করলেও প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নজরদারী কম থাকায় মনোযোগী নয় শিক্ষার্থীরা। ফলে কাজে আসছে না সরকারী এ উদ্যোগের।
সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বিগত ৩ মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। রূপগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর থেকে দুএকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাদের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খোঁজ খবর রাখেন নি। তাছাড়া বাড়িতে দীর্ঘ সময় অবস্থান করায় শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়েছে টিভির বিনোদনমুলক অনুষ্ঠান আর মোবাইল গেইম অপারেটর নির্ভর। বাইরে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে না পারায় এমন ডিভাইস ও নির্ভরতা ক্রমেই বাড়ছে বলে জানান সচ্চল অভিভাবকরা। তারা তাদের সন্তানদের শান্ত রাখতে হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল। এতে অবাধে ইন্টারনেটের ডার্ক সাইড ঘুরা কিংবা গেইম আসক্তিতে জড়িয়ে চরম মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে তারা। তবে সচেতন ও সচ্চল অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠদান করা কিংবা শিশুদের উপযোগী শিক্ষা দিতেও দেখা গেছে।

এ বিষয়ে আলাপকালে আব্দুল হক ভুঁইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহিরা তাসফি প্রভা জানায়, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর সিলেবাসের পড়ার দিকে আগ্রহ কমে গেছে। তাই ল্যাপটপে ইন্টারনেট থেকে শিশুদের উপযোগী চিত্রাঙ্কণ, বিজ্ঞান ভিত্তিক নানা শিক্ষামুলক দেখে দেখে অনুশীলনের মধ্যেই কাটছে সময়। তার দাবী বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরাই অলস সময় পার করছে। তাদের উচিত এ সময়টাতে শিশুদের উপযোগী শিক্ষামুলক বই পড়াসহ নিয়মিত হাতের লেখার অভ্যাস করা। আর বাড়ির কাজে সহায়তা করা।

উপজেলার ব্রাহ্মণখালী এলাকার জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন বলেন, সব অভিভাবক ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। ফলে অনলাইন ক্লাস করা যাচ্ছে না। যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিশেষ করে যারা বোর্ড পরীক্ষার্থী তাদের বাসায় গিয়েও শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজন টীম করে লেখাপড়ার খোঁজ নিচ্ছে। তবে অভিভাবকরা সচেতন না হলে এ কর্মসূচী খুব কাজে আসবে না বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থী অন্তিমা অরিন্ত জানায়, তার বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। টিভিতে নিয়মিত ক্লাস হয় মা বাবার কাছে শুনেছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে কিভাবে এর মুল্যায়ন করবে তা জানা নেই। কিংবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোন চাপ নেই। ফলে টিভির ক্লাসে আগ্রহ নেই। তবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে ব্যক্তিগতভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে সে। একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমেনা আক্তার লিপি বলেন, মহামারীর এ কঠিন সময়টাতে শিক্ষার আগে জীবনের মুল্যটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে অপুরনীয় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এটা মানতে হবে। তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে সরকার কি ব্যবস্থা নিবে তার আগে ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের নজরদারী বাড়াতে হবে। যেহেতু এখনো সব অভিভাবকরা ইন্টারনেটে যুক্ত নয়, এতে সব শিক্ষার্থীদের অনলাইনের আওতায় আনাও কঠিন। তবে অভিভাবকদের উচিত নিয়মিত তদারকি করে, টিভিতে প্রচারিত ক্লাসে পাঠদানে বাধ্য করা। তাদের বাড়ির কাজ নিজে নিজে মুল্যায়ণ করে তাদের লেখা পড়ায় অভ্যস্ত রাখা।
এদিকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরো অলস হয়ে পড়েছে দাবী অভিভাবকদের। তাদের বেশির ভাগ দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় অনেকেই বাসায় টেলিভিশনের ব্যবস্থা নেই। ইন্টারনেট আরো ব্যয়বহুল হওয়ায় এর সঙ্গেও যুক্তনন তারা। ফলে অনলাইন ক্লাস কিংবা টিভিতে প্রচারিত সব সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন তারা। এছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষকদের নজরদারী না থাকায় এসব শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশির অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদা আখতার বলেন, শিক্ষার চেয়ে জীবনের মুল্যটা বেশি- উক্তির আলোকে করোনা থেকে বাঁচতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে সংসদ বাংলাদেশ টিভিতের প্রচারিত ক্লাস বা আইসিটি বিভাগের প্রচারিত অনলাইনে পাঠদান বিষয়ে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেয়ার ব্যাবস্থা নিয়েছি। শিক্ষকদের ৫জনের টীম করে এলাকাভিত্তিক রেজিস্ট্রার করে তদারকির নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, এ সময়টাতে শিক্ষার্থীদের অলস সময় ব্যয় না করে অভিভাবকদের সহায়তায় ইন্টারনেট থেকে শিক্ষামুলক এ্যাপ ভিত্তিক অনুশীলনের যুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও বাড়িতে শারীরিক কসরত জাতীয় খেলা ধূলায় উৎসাহিত করতে পারেন। এতে মানষিক সমস্যা দূর হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন