আবুল কাসেম হায়দার
পর পর কয়েক দফা জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিরূপ প্রভাবের মুখে দেশের অর্থনীতি। বিশেষ করে গুলশানে নজিরবিহীন হত্যাকা-ের পর বদলে যাচ্ছে ইতিবাচক অর্থনীতির চলমান ধারা। বিদেশিরা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এর প্রভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা আরো প্রকট হচ্ছে। আর এর পুরো প্রভাব পড়বে দেশের রফতানি আয়ের ওপর। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তৈরি পোশাক শিল্প এতে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গুলশানে তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাধিক ইতালিয়ান ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার পর ইতালির বাজার হাতছাড়া হতে চলেছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ঘটনায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে যাবে। পর্যটন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে বদনাম ছড়ালে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে। জনশক্তি নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিরা আরো সতর্ক হবে।
বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অংশই কোনো না কোনোভাবে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর অর্থনীতির বড় শক্র হলো ভীতি এবং অনিশ্চয়তা। পর পর দুই দফা জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে ভীতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, যেসব ইতালিয়ান নাগরিক মারা গেছেন, তারা সবাই গার্মেন্ট খাতে কাজ করতেন। আর যেসব জাপানি নাগরিক মারা গেছেন, তারা মেট্রো রেলের মতো উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বিশ্বে প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য হলো বিদেশিরা। ফলে বিভিন্ন দূতাবাসে সতর্কতা জারি হয়েছে। বলা হচ্ছে, খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন না হলে বাংলাদেশে যাওয়া উচিত না। তিনি বলেন, আমরা শুনেছি বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা অর্ডার দিতে বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছেন। তারা গার্মেন্ট মালিকদের বলছেন, তোমরা দিল্লিতে বা সিঙ্গাপুরে আস। অর্থাৎ ক্রেতাদের মধ্যে একটি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এটি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে এই হামলার মোকাবেলা করা হচ্ছে তার ওপর। ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শোলাকিয়ার ঘটনার পর বিদেশিদের কাছে পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে হয়েছে। রফতানি এবং বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, জঙ্গি হামলার পর মানুষের মধ্যে কিছু ভীতি কাজ করছে। তবে তারা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে বলা যায়, স্বল্প মেয়াদে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়বে। নতুন করে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে হয়তো বিদেশিরা চিন্তা করতে পারে। কারণ নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে কেউ বিনিয়োগে আসবে না। এক্ষেত্রে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, সেটি বিবেচনার বিষয়। তিনি বলেন, গুলশানের হামলা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে সরকারকে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। পরে যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে এজন্য কথা কম বলে কাজে পরিণত করে দেখাতে হবে। তবে তিনি বলেন, পাইপলাইনে যেসব বিনিয়োগ রয়েছেÑবিদেশিরা তা প্রত্যাহার করবে বলে মনে হয় না। কারণ এ খাতে তাদেরও স্বার্থ রয়েছে। সন্ত্রাসবাদ এখন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে জঙ্গি হামলার কারণে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন আলাদা হওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতি নতুন দিকে মোড় নিতে পারে। এসময় দেশের ভেতরে জঙ্গি হামলা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ঘটনার পুরনাবৃত্তি ঘটলে শুধু অর্থনীতি নয়, দেশ-জাতি হিসেবে বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ভবিষ্যৎ হামলা মোকাবেলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তৎপর করার পরামর্শ দেন তিনি।
পোশাক রফতানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমপ্লায়েন্সের চাপে অনেক ক্রেতা অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ সময় গুলশান হামলার ঘটনায় সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। অর্ডার আনতে তৃতীয় দেশে গিয়ে বৈঠক করতে হচ্ছে। সম্প্রতি কানাডার ব্র্যান্ড সিয়ার্সের একটি প্রতিনিধি দলের থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু সিয়ার্স বাংলাদেশ সফর বাতিল করে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারককে ভারত বা থাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড অ্যারো পোস্টালও একই কারণ দেখিয়ে সফর বাতিল করে তৃতীয় কোনো দেশে বৈঠকের কথা বলেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে মোট ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আগামীতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকলে এবং ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটলে রফতানির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা আবার ঘটলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, তৈরি পোশাক সংশ্লিষ্ট বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে তালিকা তৈরি করছে শিল্প পুলিশ। সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জঙ্গিবাদ বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যা। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি অনুধাবন করছেন। তবে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর কারণ, তখন বিনিয়োগের পথ সংকুচিত হবে। নতুন বিনিয়োগ না এলে সরকার কাঙ্খিত মাত্রায় প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। এছাড়া গুলশান হামলার প্রভাব পড়েছে হোটেল-গেস্ট হাউস খাতে। কয়েকটি গেস্ট হাউস মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা থাকায় শুধু গুলশান, বারিধারা ও বনানী এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭০টি গেস্ট হাউস গড়ে উঠেছে। এর সঙ্গে সরাসরি কর্মসংস্থানে জড়িত প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
আড়াইশ’ কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা : গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর তৈরি পোশাক রফতানিতে আড়াই বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করছে গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির মতে, জুলাই-আগস্ট মাসে গ্রীষ্মের পোশাক তৈরি অর্ডার দেয় ক্রেতারা। এ ঘটনার কারণে ৪ থেকে ৫ শতাংশ অর্ডার কম আসার আশঙ্কা রয়েছে। যার পরিমাণ ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি সেগুনবাগিচার ডিআরইউতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন এ আশঙ্কার কথা জানান সংগঠনের নেতারা।
কাজী ইফতেখার হোসাইন বাবুল বলেন, সন্ত্রাসী হামলার ফলে দেশের রেডিমেট গার্মেন্টস ব্যবসাসহ সামগ্রিকভাবে আরএমজি সেক্টরে নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এইচঅ্যান্ডএম তাদের ব্যবসা সংকোচনের চিন্তা করছে। অন্য অনেক বিদেশি ক্রেতাও নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়ে নেতিবাচক মতামত ব্যক্ত করছে। তিনি আরো বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে পশ্চিমা ক্রেতাদের জন্য ক্রয়াদেশ দেয়ার সময়। কারণ গ্রীষ্ম ও শরৎকালে ওইসব দেশে যে পোশাক ব্যবহৃত হয় তা সংগ্রহের জন্য এই সময়টিতে ক্রেতারা অর্ডার দেন। এ রফতানি আদেশের বিপরীতে জাহাজীকরণ শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। যা জানুয়ারিতে গিয়ে শেষ হয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান টেক্সটাইল খাতে সমৃদ্ধ হলেও নিরাপত্তার কারণে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবসা হচ্ছে না। একইভাবে নিরাপত্তার কারণে শ্রীলংকা থেকে গার্মেন্টস ব্যবসা বাংলাদেশে স্থানান্তর করেছিল। এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির কারণে বড় বায়াররা তাদের ব্যবসা স্থানান্তর করতে পারেন।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অ্যাকর্ড : জঙ্গি হামলাপরবর্তী বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড। এ ঘটনার পরও জোটটি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা অব্যাহত রাখবে। বিদেশি ক্রেতাদের অপর সংগঠন অ্যালায়েন্স বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানায়, তারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা অব্যাহত রাখবে।
১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২৮ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আলোচনায় আসে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের শীর্ষ খাত গার্মেন্ট শিল্প। বিদেশি গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে ব্যাপকভাবে সংবাদ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে সাড়ে তিন হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক খাত হুমকির মুখে পড়েছে। বিদেশি ক্রেতাদের অনেকে বাংলাদেশে আসা বন্ধ করে দেবেন।
রব ওয়েজ বাংলাদেশে তাদের কর্মীদের অবস্থান, পোশাক খাতের চলমান সংস্কার কার্যক্রম এবং এ দেশ থেকে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও কিনে নেয়ার বিষয়ে সদস্যভুক্ত ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক কর্মপন্থা সম্পর্কে জোটের অবস্থান পরিষ্কার করেন। অ্যাকর্ড বাংলাদেশের সঙ্গে সদস্যভুক্ত সব ক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্ক অটুট রাখার পক্ষে কাজ করে যাবে। তবে আমাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরকারী যারা রয়েছে, তারা বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এদের প্রত্যেকেরই ব্যবসায়িক কর্মকা- পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান, জনবলের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট দেশের বিধি-নিষেধ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে কোনো ব্র্যান্ড কোম্পানি বিকল্প চিন্তা করলে সেটি একান্তই তাদের ব্যাপার। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, অ্যাকর্ডভুক্ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পোশাক কেনা এবং উৎপাদন করিয়ে নেয়া উভয় অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশে পোশাক খাতে চলমান সংস্কার কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অ্যাকর্ডের ভাবনার বিষয়ে রব ওয়েজ বলেন, জঙ্গি হামলার ঘটনা সত্ত্বেও অ্যাকর্ডের চলমান সংস্কার কার্যক্রমে বিঘœ ঘটবে না। আমরা আগের মতোই তালিকাভুক্ত কারখানাগুলোর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে তদারকি অব্যাহত রাখব। উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স জানায়, জঙ্গি হামলা সত্ত্বেও তাদের সদস্যভুক্ত ২৮টি ব্র্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনা অব্যাহত রাখবে।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তিপত্র অনুযায়ী ছয়টি শর্তের আওতায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের সংস্কার তদারকিতে কাজ করার কথা দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের। তবে বাংলাদেশে এদের কার্যক্রম শুরুর পরবর্তী পরিস্থিতি তৈরি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য খুবই তিক্ততার। গত সাড়ে ৩ বছরে দুই ক্রেতা জোটের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতিনিয়ত তাদের কর্মকা-ে চুক্তির সব শর্ত লংঘিত হচ্ছে। চুক্তিপত্রের অন্যতম শর্ত হচ্ছেÑপোশাক কারখানার কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক সহায়তা প্রদান। যেখানে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরকারী ক্রেতাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তহবিল নিয়ে সেই অর্থ শ্রমিক উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়নে উদ্যোক্তার আংশিক ব্যয়ভার বহনে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় থাকার কথা। একইভাবে বিদেশি ক্রেতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে পণ্যের অর্ডার কিংবা কাজ পাইয়ে দিতে সংস্কারকৃত কারখানাগুলোর সঙ্গে ‘সোর্সিং রিলেশনশিপ’ বজায় রাখার দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু সংস্কার কার্যক্রমের সাড়ে ৩ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোক্তাকে কোনো অনুদান বা ঋণ সহায়তা পাইয়ে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি জোট দুটি।
সন্ত্রাসের মূল কারণ ও সমাধান : আমাদের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। ভয়ভীতি থেকে সকল দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় নিয়ে আসতে হবে। এই জন্য সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু ভালো ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছু কিছু ফলাফল দেখা যাচ্ছে। তবে সরকারের সাথে পুরো জাতিকে একত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ থেকে বাঁচার জন্য এক সারিতে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাসের মূল কারণসমূহ চিহ্নিত করতে হবে। মূল কারণ চিহ্নিত করে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হবে। কারণ সন্ত্রাস আজ বিশ^ব্যাপী সমস্যা। সন্ত্রাস শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়। তাই বিশ^ পরিবেশ নিয়ে সকলকে একত্রে একই সুরে কাজ শুরু করতে হবে।
১. বাংলাদেশে যে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে তার মূল কারণ অশিক্ষা ও কুশিক্ষা। সত্যিকার ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে সমাজের একটি শ্রেণি সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকছে। যেমন এ লেবেল, ও লেবেল শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত। তাদের পরিবারেও ছোটবেলা থেকে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয় না। একটি সম্পূর্ণ অনৈসলামিক পরিবেশে তারা বেড়ে উঠছে। আর এই সকল ছেলেমেয়েরা যখন বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন তাদেরকে আন্তর্জাতিক চক্র টার্গেট করে। তাদেরকে সহজে বুঝিয়ে দেয় তুমি যদি এইভাবে সন্ত্রাসী কায়দায় মানুষ হত্যা কর তাহলে নিহত হলে শহিদ হবে। আর জীবিত থাকলে গাজী হবে। এই একটা ভুল শিক্ষা দিয়ে যুবকদের ভুলপথে পরিচালিত করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে মূল ও সত্যিকার ইসলামি শিক্ষার অভাবে যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত হয়ে পড়ছে।
২. তাই সমস্যার মূল থেকে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রাইমারি, হাইস্কুল ও কলেজ লেবেলে স্ব স্ব ধর্মের মৌলিক শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের দিতে হবে। তাই অবিলম্বে প্রাইমারি, হাইস্কুল ও কলেজ শিক্ষার লেবেলে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রাইমারি থেকে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান সকল ধর্মের মূল শিক্ষা, সত্যিকারভাবে শিক্ষা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তখন ছোটবেলা থেকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীগণ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা লাভ করলে মাঝপথে কোনো দুষ্টচক্র তাদেরকে বিপথগামী করতে পারবে না। দ্রুত সময় ক্ষেপণ না করে অবিলম্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিলেবাস তৈরির কাজ হাতে দিতে হবে। পুলিশ দিয়ে সন্ত্রাস নির্মূল করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিচারের ঊর্ধেŸ থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ সরকারকে দিতে হবে।
৩. সন্ত্রাস দমনের জন্য জাতীয়ভাবে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। শুধু সরকার কোনোক্রমেই সন্ত্রাস দমন বা বন্ধ করতে পারবে না। বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সন্ত্রাস দমনে কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সঙ্গে সুশীল সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন সকলকে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনে সামিল করতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের সকল স্তরের আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস দমন বা বন্ধ করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে অধিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো কর্মসূচি না দিয়ে সকল দলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস প্রয়োজন।
৪. আমাদের সমাজের সকল পরিবারকে সন্ত্রাস দমনে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদেরকে স্ব স্ব ধর্মের মৌলিক ও একান্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ছোটবেলা থেকে স্ব স্ব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট না করলে বড় হলে ধর্ম শিক্ষা কোনোক্রমেই দেয়া যাবে না। শিশুকাল থেকে ধর্মের মৌলিক শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত মুসলিম, খৃস্টান, বৌদ্ধ ও হিন্দু হিসাবে শিশুদেরকে যুবকে বা যুবতীতে পৌঁছাতে হবে। পরিবার হলো শিক্ষার প্রাথমিক স্তর। পরিবার থেকে মূল্যবোধ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য পিতামাতাকে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। সত্যিকার শিক্ষা দেয়া ছাড়া সন্ত্রাস দমন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। তাই পরিবার হচ্ছে সন্ত্রাস দমনের প্রাথমিক ধাপ। এই সত্যটি আমাদের সকলকে বুঝতে হবে। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থেকে সন্ত্রাস দমন করা যাবে না।
৫. পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে সন্ত্রাস সম্পর্কে পুরো জাতিকে অবহিত করতে হবে। ইসলামের নামে এই অসামাজিক, অন্যায়, ইসলামবিরোধী সকল কর্মকা- চিহ্নিত করে দেশের তরুণ সমাজকে সংশোধনের পথে নিয়ে আসতে হবে। একে অপরকে দোষারূপ না করে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল কাজ করতে হবে।
৬. যে সকল পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল নীতি, নৈতিকতা মূল্যবোধ ধ্বংস করে সেসব গণমাধ্যমকে তাদের বিরূপ প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচার মাধ্যমকে আদর্শ, সৎ, যোগ্য ও সত্যিকার মুসলমান হওয়ার উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। যেসব বিদেশি টিভি চ্যানেল নিয়ে আমাদের সংস্কৃতিবিরোধী প্রচার-প্রচারণার অভিযোগ আছে সেসব চ্যানেলসমূহকে আমাদের দেশে প্রচার নিষিদ্ধ করা দরকার, যেমন সনি টিভি চ্যানেল ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও চরিত্রবান মানুষ হতে সাহায্য করে না।
য় লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
ধয়যধরফবৎ@ুড়ঁঃযমৎড়ঁঢ়নফ.পড়স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন